শেষের পাতা
গাজায় ভয়াবহ খাদ্য সংকট
মানবজমিন ডেস্ক
১৬ মে ২০২৫, শুক্রবার
গাজায় হত্যাযজ্ঞ চলছেই। বুধবার মধ্যরাত থেকে গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কমপক্ষে ৮০ জনকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এর বেশির ভাগই খান ইউনিসের দক্ষিণে। এ ছাড়া নিহত হয়েছেন বেইত লাহিয়া ও দিয়ের আল বালাহ এলাকায়। ইসরাইলের অব্যাহত অবরোধের মধ্যে এই বিমান হামলা চালানো হয়েছে। ১০ সপ্তাহ ধরে গাজায় কোনো সরবরাহই প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরাইল। ফলে সেখানে মানুষের মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ থেকে আরও ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এর সাংবাদিকরা কথা বলেছেন গাজায় ত্রাণ বিষয়ক ১০টি ভিন্ন ভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে। তারা বলেছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। একজন বিবিসিকে মেসেজ পাঠিয়ে বলেছেন, অসহ্য ক্ষুধার কারণে আমি আর নড়তে পারছি না। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ৫২ হাজার ৮২৯ জনকে হত্যা করেছে ইসরাইল। গাজার দক্ষিণে রাফাহ এলাকার কাছে বৃটেনের অর্থায়নে পরিচালিত একটি ফিল্ড হাসপাতালের একজন বৃটিশ নার্স পলা তোবিন বলেন, এখন মাত্র এক সপ্তাহ চলার মতো খাদ্য অবশিষ্ট আছে। তিনি যখন গাজায় যান তখন ইসরাইলের অবরোধ প্রায় এক মাস চলছিল। তিনি বলেন, খাদ্যের ঘাটতি ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। তার ভাষায়, আমাদের রোগীরা এবং স্থানীয় সম্প্রদায় খাবারের জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। মানুষ ভয়াবহ ক্ষুধার্ত। ফলে উত্তেজনা বাড়ছে। আমাদের রোগীরা সারাদিনে মাত্র একবার কোনোমতে খেয়ে বেঁচে আছেন। আগামী সপ্তাহে আমরা তাদেরকে মোটেও খাবার দিতে পারবো না।
পলা আরও বলেন, খাদ্যের এই ঘাটতি আহত ও দুস্থ মানুষদের সুস্থ হওয়ার সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিচ্ছে। উল্লেখ্য, ইউকে-মেড নামের সংগঠন গত মাসে গাজার তিনটি স্থানে কাজ শুরু করে। তারা ৩৬ হাজার মানুষকে চিকিৎসা দিয়েছে। পলা সেখানে তার দায়িত্বের শেষের দিকে। তাকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার কারণে এ বছর হিউম্যানিটারিয়ান মেডেল পুরস্কার দিয়েছেন রাজা তৃতীয় চার্লস। পলা জানিয়েছেন, শিশুদের কষ্ট তাকে বেশি বেদনা দেয়। তিনি বলেন, যেকোনো যুদ্ধকবলিত এলাকার মানুষ, বেসামরিক লোকজন পালিয়ে বা সরে যায়। তারা তাদের শিশু সন্তানদের ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীদের সরিয়ে নেয়। কিন্তু স্পষ্টতই এখানে তা ঘটছে না। অন্যদিকে বৃটিশ দাতব্য সংস্থা মেডিকেল এইড ফর প্যালেস্টাইনিয়ান্স-এর যোগাযোগ বিষয়ক কর্মকর্তা মাই এলওয়াদা দক্ষিণ গাজা থেকে একটি মেসেজ বার্তায় জানিয়েছেন, ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কমপক্ষে ১৯ মাস জোরপূর্বক অনাহারে রাখা, পানিশূন্যতা ও বাস্তুচ্যুত থাকার পর আমরা জানি না এসব মানুষকে আর কতোদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারবো। পান করার পানির চরম মাত্রায় সংকট। বাজার থেকে খাদ্য সরবরাহ অদৃশ্য হয়ে গেছে। সামান্য যা কিছু আছে তার দাম এত বেশি যে, বেশির ভাগ মানুষের কেনার সামর্থ্য নেই। শিশুদের জন্য ইনফ্যান্ট ফর্মুলার অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। যদিও কোথাও একটা দুটো পাওয়া যায় তার দাম কমপক্ষে ২৫ ডলার। এই দাম বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর কাছে অসীম। তারা এমনিতেই তো তাদের নিত্যদিনের খাবার যোগাড় করতে পারছেন না। গাজা সিটির ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় গত সপ্তাহে আমি দেখেছি বিক্রির জন্য এক পিস রুটিও নেই।
ওদিকে এ সপ্তাহের শুরুতে খান ইউনিসে একটি হাসপাতালে আকাশ থেকে বোমা হামলা চালায় ইসরাইল। সেখানে এ সপ্তাহে চিকিৎসাসেবা বন্ধ। গত সপ্তাহের মঙ্গলবারে ইউরোপিয়ান হাসপাতালে পর পর ৬টি বোমা ফেলে ইসরাইলি যুদ্ধবিমান। এতে সেখানে কমপক্ষে ২৮ জন নিহত ও কয়েক ডজন আহত হন। তবে ইসরাইলি সেনাদের দাবি তারা হামাসের কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, ওই হাসপাতালে অবস্থান করছিল হামাস। হামলায় হাসপাতালের অবকাঠামোর মারাত্মক ক্ষতি হয়। এর মধ্যে আছে পয়ঃনিষ্কাশন লাইন, অভ্যন্তরীণ বিভাগসমূহ, হাসপাতালমুখী সড়কগুলো। সেখান থেকে বলা হয়েছে, হাসপাতালে বার বার হামলার ফলে সেখানে এখন আর সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।