খেলা
‘বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন লেগ স্পিনারদের মূল্য বুঝতে পারছে’
স্পোর্টস ডেস্ক
১১ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার
প্রথম দফা দায়িত্বে থাকাকালে বাংলাদেশের ক্রিকেটে ভালো একজন লেগস্পিনারের অভাবের কথা বারবার বলছিলেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। দ্বিতীয় দফায় টাইগারদের দায়িত্ব নিয়ে তিনি দলে একজন লেগস্পিনারের খোঁজে ছিলেন যথারীতি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলে লেগ স্পিনারের অভাব পূরণের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন রিশাদ হোসেন। দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ভালো করার পর তিনি বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচেও। তরুণ বোলারের ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্সের সূত্র ধরে লেগ স্পিনে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সার্বিক মনোভাব সম্পর্কে কথা বলেছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। বলেন, ‘এখন লেগ স্পিনের মূল্য বুঝতে পারছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।’
ডালাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রিশাদের হাত ধরে একটি চক্র পূরণ করেছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলিয়েছে কোনো বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনার। সুযোগ পেয়ে তা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন রিশাদ। মাত্র ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তিনিই জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
অথচ বছরখানেক আগেও অনিশ্চয়তায় ভরা ছিল বাংলাদেশ দলে লেগ স্পিনারের জায়গা। দীর্ঘ দিন জাতীয় দলের সঙ্গে থাকার পর গত বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ও নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে অভিষেক হয় রিশাদের। এরপর তিনি আস্থার জায়গা তৈরি করে নিতে সক্ষম হন মূলত চলতি বছর শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়ে।
মূল পরিচয় লেগ স্পিনার হলেও লঙ্কানদের বিপক্ষে একটি টি-টোয়েন্টিতে ৩০ বলে ৫৩ ও একটি ওয়ানডেতে ১৮ বলে ৪৮ রানের ইনিংস খেলে ব্যাটিং সামর্থ্যরেও জানান দেন রিশাদ। পাশাপাশি বোলিংটাও করেন একই ছন্দে। এরপর থেকে আর দলে জায়গা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না ২১ বছর বয়সী লেগ স্পিনারকে।
তবে পরিস্থিতি যে সবসময় এমন ছিল না সেটি ভালোই জানা হাথুরুসিংহের। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার সময়ও লেগ স্পিনে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি। তিন সংস্করণেই জুবায়ের হোসেন লিখনের অভিষেক কোচ হাথুরুসিংহের পরিচর্যায়। কিন্তু বেশি দিন টিকতে পারেননি জুবায়ের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুতে এক ওভারে দুটি বাউন্ডারি হজম করেন জুবায়ের। এরপর তাকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় লম্বা সময়ের জন্য। লেগ স্পিনাররা মাঝেমধ্যে এক-দুই ওভার বা কখনও পুরো ম্যাচই যে খরুচে যেতে পারেন, সেটি বিবেচনায় রাখা হয়নি তখন।
শুধু জাতীয় দলই নয়, ঘরোয়া ক্রিকেটেও বরাবর উপেক্ষিতই ছিলেন স্থানীয় বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনাররা। সাম্প্রতিক সময়ে চিত্র কিছুটা বদলাতে শুরু করলেও এখনও ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ, জাতীয় ক্রিকেট লীগ বা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে নিয়মিত ম্যাচ খেলার সুযোগ পান না তারা। বাংলাদেশ ‘এ’ দল, বিসিবি একাদশ বা এই ধরনের কোনো দলে জায়গা পেলে খেলার সুযোগ মেলে কখনও কখনও।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে তাই বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে লেগ স্পিনের মূল্য নিয়ে নিজের উষ্মারই যেন বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন প্রধান কোচ।হাথুরুসিংহে বলেন, “আপনারা সবাই জানেন, আমাদের জন্য দলে লেগ স্পিনার নেওয়াটা কিছুটা চ্যালেঞ্জের। আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না। এটাই মূলত আমাদের সংস্কৃতি। আমরা এর (লেগ স্পিনার) মূল্য বুঝি না।”
বাংলাদেশ দলে প্রধান কোচ বলেন, “প্রথম দুই ওভারে রান দেওয়ার পরও শান্ত শেষ দুই ওভারের জন্য ওকে বোলিংয়ে এনেছে এবং ম্যাচ বদলে দিয়েছে। শান্তকে তাই কৃতিত্ব দিতেই হবে। তো আমার মতে, আমরা এখন দল হিসেবে লেগ স্পিনের মূল্যটা বুঝতে পারছি। দলের ভেতরে আমরা তাকে সমর্থন করছি।”
দলের সমর্থন পেয়ে শ্রীলঙ্কা ম্যাচে রিশাদও নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরেন। প্রথম দুই ওভারে ১৬ রান দিলেও ১৫তম ওভারে আক্রমণে ফিরে পরপর দুই বলে তিনি নেন চারিথ আসালাঙ্কা ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার উইকেট। শেষ ওভারে তার শিকার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। এই স্পেলে ৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে লঙ্কান ইনিংসে লাগাম টানেন এ তরুণ লেগ স্পিনার।
রিশাদের এমন বোলিংয়ের পর তাই স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত বরাবরই লেগ স্পিনারদের নিয়ে উচ্চাশার কথা বলা হাথুরুসিংহে। তিনি বলেন, “আমি মনে করি, সবশেষ ম্যাচে এটিই (রিশাদের বোলিং) সবচেয়ে তৃপ্তিদায়ক ছিল। কারণ আমরা এখন প্রায় এক বছর ধরে তাকে সমর্থন করছি। আমরা জানতাম, সে আমাদের ম্যাচ জেতাবে। আর ওই ম্যাচটিই জেতানো, খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই খুবই সন্তোষজনক ছিল (রিশাদের পারফরম্যান্স)।”