অনলাইন
গণসংহতি আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া
বাজেটে সরকার স্বীকার করেছে দেশ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে
স্টাফ রিপোর্টার
(১১ মাস আগে) ১০ জুন ২০২৪, সোমবার, ৮:১৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৩:২৩ অপরাহ্ন

প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকার স্বীকার করল যে দেশ একটা অর্থনৈতিক সংকটের মুখে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে গণসংহতি আন্দোলন। এ প্রসঙ্গে দলটি বলছে, এই সংকট আসলে এবছর বা একদিনে তৈরি হয়নি, বহুদিন থেকেই এই সংকট তৈরি হচ্ছে। বহুদিন থেকে সেই সংকট অস্বীকার করে যেভাবে অর্থনীতি চালানো হয়েছে তারই পরিণামে এই সংকট আরো গভীর হয়েছে। সরকার ঋণ করে মেগা প্রকল্প চালু করে দফায় দফায় খরচ বাড়িয়ে সেসব প্রকল্প শেষ করার মাধ্যমে দেশকে ঋণগ্রস্ত করে ফেলেছে। এবারের বাজেটের সবচাইতে বড় খাত হচ্ছে এই সমস্ত ঋণের সুদ পরিশোধের খাত। সোমবার রাজধানীর হাতিপুলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণসংহতি আন্দোলনের বাজেট প্রতিক্রিয়া জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতৃবৃন্দরা এসব কথা বলেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এবারের বাজেটেও ফ্ল্যাট ১৫% ট্যাক্স দিয়ে কালো টাকা সাদা করার বিধান রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, অনেকেই তাদের বৈধ টাকা প্রদর্শন না করায় তাদের টাকা কালো টাকায় পরিণত হয়েছে। সেটাকেই সাদা করার সুযোগ দিচ্ছে সরকার। আর এই বাজেটের একটি ঘোষিত লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। প্রথমত মূল্যস্ফীতির হিসেবেই রয়েছে ঘাপলা। সরকারিভাবে মূল্যস্ফীতি বলা হচ্ছে ৯ শতাংশের বেশি। কিন্তু বিআইডিএসের হিসাব বলছে মূল্যস্ফীতি ১৫%।
তারা বলেন, সরকার আসলে কত পারসেন্ট থেকে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ছয় পার্সেন্ট নিয়ে আসতে চায় সেই প্রশ্ন আসে গোড়াতেই। তারপরও দেখা যাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোন কার্যকর ব্যবস্থা এই বাজেটে অনুপস্থিত। বরং ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে, বিদ্যুৎ জ্বালানির দাম বৃদ্ধিও প্রভাব ফেলবে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে। শুধু সুদহার বাড়িয়েই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরার চিন্তাটা আসলে হাস্যকর। বরং উচ্চ ঘাটতি সম্পন্ন বাজেট করে, ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে তা বাস্তবায়নের যে পরিকল্পনা তা মূল্যস্ফীতিকে আরো বাড়াবে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অব্যাহত দরপতনও ভূমিকা রাখবে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, প্রতিবছরই শিক্ষাতে যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে ইত্যাদি নানা গল্প সরকার করে। কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থের মান, বরাদ্দের ক্ষেত্র এবং মোট জিডিপির তুলনায় এই বরাদ্দের হার দেখলে বোঝা যায় সরকার আদতে শিক্ষাক্ষেত্রকে খুবই কম গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০২১-২২শে শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ২.০৮ শতাংশ, ২২-২৩ শে বরাদ্দ ছিল ১. ৮৩ শতাংশ, ২৩-২৪ শে বরাদ্দ ছিল ১.৭৬ শতাংশ আর ২০২৪-২৫ এ তা এসে দাঁড়িয়েছে ১.৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ জিডিপির তুলনায় শিক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দ ধারাবাহিকভাবে কমছে। এই বরাদ্দ শিক্ষাক্ষেত্রে আসলে কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এটাও একটা গুরুতর প্রশ্ন।
তারা আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দও অপ্রতুল। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে জনগণ ব্যয় করেন মোট ব্যয়ের ৬৯শতাংশ। আর সরকারের ব্যয় ২৩ শতাংশ। ফলে এক্ষেত্রে ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানো দরকার ছিল বিপুল পরিমাণে। কিন্তু গত বাজেটের তুলনায় তা বেড়েছে সামান্যই এবং মুদ্রাস্ফীতি হিসেবে নিলে আসলে তা কমেছে। এই বরাদ্দের ক্ষেত্রেও কোথায় ব্যয় হচ্ছে সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামোগত কিংবা যন্ত্রপাতি কেনায় যেরকম আগ্রহ দেখা যায়, তার কানাকড়ি আগ্রহ দেখা যায় না দক্ষ জনবল তৈরিতে। বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা কম, আরো কম প্রশিক্ষিত নার্সের সংখ্যা, প্রশিক্ষিত ধাত্রির সংখ্যা, তার চাইতেও কম যন্ত্রপাতিগুলো চালানোর জন্য এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, অপারেটর ইত্যাদি। অথচ এসব খাতে বরাদ্দ দিয়ে নতুন জনবল তৈরির কোন প্রচেষ্টাই সরকারের নেই।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়েনি তো বটেই বরং গত বছরের সংশোধিত বাজেটের হিসাবে এই খাতে বরাদ্দ কমেছে। দেশে সামগ্রিকভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। এই ঋণ আদায় কোন কার্যকর উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে না থাকলেও উল্টো কৃষকদের কাছ থেকে কৃষিঋণ আদায়ে নতুন করে মামলার তোড়জোর চলছে। কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য সরকার যে ঋণ দেয় সেটা উল্টো কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। অথচ দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ খাতের একটি কৃষি খাতে উন্নত দেশগুলোও প্রচুর পরিমাণে ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। অথচ সরকারের দিক থেকে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সিন্ডিকেটের দিকে আঙ্গুল না তুলে বরং কৃষককেই দায়ী করা হচ্ছে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য। সরকারের গণবিরোধী চরিত্রের আরেক নিদর্শন হলো এটা।