বিশ্বজমিন
জয়ের আশায় নির্বাচন করি না
২৩৮ বার ফেল, এবারও নির্বাচন করবেন পদ্মরাজন
মানবজমিন ডেস্ক
(৪ সপ্তাহ আগে) ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২:০৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৫ পূর্বাহ্ন
ভারতের নির্বাচনে রেকর্ড গড়েছেন কে. পদ্মরাজন। তিনি নির্বাচনে ২৩৮ বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। কিন্তু সব সময়ই পরাজিত হয়েছেন। এবার লোকসভা নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার এই নির্বাচনী পাগলামী দেখে লোকজন হাসাহাসি করে। কিন্তু তিনি বলেন, একজন সাধারণ মানুষও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে সেই প্রমাণ দেখাতে চাই আমি। বিশ্বে এমন রেকর্ড আর কারো কোথাও আছে কিনা জানা নেই। বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর দিয়েছে।
৬৫ বছর বয়সী পদ্মরাজনের আছে গাড়ির টায়ার মেরামতের দোকান। তার ভিতর হঠাৎ নির্বাচনের নেশা পেয়ে বসে ১৯৮৮ সালে। তখন তামিলনাড়র মেত্তুর থেকে তিনি নির্বাচন শুরু করেন।
তার কাছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যেই বিজয় লুকিয়ে আছে। অপরিহার্যভাবে তিনি নির্বাচনে হেরে যান। তারপর বলেন, এই পরাজয়ে তিনি খুশি। এবার ৬ সপ্তাহ ধরে চলবে ভারতে জাতীয় নির্বাচন। ভোটগ্রহণ শুরু হবে ১৯শে এপ্রিল। এতে তামিলনাড়ুর ধর্মপুরি জেলার লোকসভা আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।
স্থানীয় জনগণের কাছে তিনি এখন ‘ইলেকশন কিং’। বেশির ভাগ মানুষ ভালবেসে তাকে এই নামে ডাকে। এর কারণ সারাদেশে নির্বাচনে তিনি বিভিন্ন স্থানে নানা রকম নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে আছে প্রেসিডেন্সিয়াল থেকে স্থানীয় নির্বাচন।
এসব নির্বাচনে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী, মনমোহন সিং এবং কংগ্রেস দলের উত্তরাধিকারি রাহুল গান্ধীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। তাতে কিছু এসে যায় না। তিনি বলেন, বিজয় হলো দ্বিতীয় পর্যায়ের বিষয়। বিরোধী দলে কে আছেন, তা আমার কাছে কোনো ধর্তব্যের বিষয় নয়। তার এখন সেই পরাজয়ের ধারাকে ধরে রাখাই মূল লক্ষ্য।
তবে বিষয়টি যতটা সস্তা ভাবা হয় ততটা নয়। কারণ, তিন দশকের বেশি সময়ে মনোনয়ন ফি বাবদ হাজার হাজার ডলার খরচ করেছেন। এর মধ্যে আছে নিরাপত্তা জামানত ২৫ হাজার রুপি। যদি মোট ভোটের শতকরা কমপক্ষে ১৬ ভাগ ভোট তিনি না পান, তাহলে এই অর্থ ফেরত পাবেন না।
তার সবচেয়ে বড় জয় হলো ভারতে সবচেয়ে বেশিবার ব্যর্থ প্রার্থী হিসেবে লিমকা বুক অব রেকর্ডসে স্থান করে নেয়া। তিনি সবচেয়ে ভাল পারফর্মেন্স দেখিয়েছিলেন ২০১১ সালে। এ সময় তিনি মেত্তুর থেকে বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী পেয়েছিলেন ৭৫ হাজার ভোট। তিনি পেয়েছিলেন ৬২৭৩ ভোট। তবে তিনি নিজে বলেন, আমি তো একটা ভোটও যে পাব সেই আশাও করি নাই। তা সত্ত্বেও ভোটের এই হিসাব দেখিয়ে দেয় যে, মানুষ আমাকে গ্রহণ করছে।
পদ্মরাজনের টায়ার মেরামতের দোকান ছাড়াও তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা দেন। স্থানীয় মিডিয়ায় সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। এসব কাজের মধ্যে তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনে অংশ নেয়া। পদ্মরাজন বলেন, বিষয়টা হলো অংশ নেয়া। মানুষ মনোনয়ন নিতে দ্বিধাবোধ করে। তাই আমি একটি রোল মডেল হতে চাই। সৃষ্টি করতে চাই সচেতনতা।
এর আগে যেসব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হয়েছেন তার সবটার মনোনয়নপত্র এবং পরিচয়পত্র সযত্নে রেখেছেন তিনি। সবটাকে লেমিনেটিং করে রেখেছেন, যাতে নষ্ট না হয়। এর মধ্যে আছে তার বিভিন্ন রকম নির্বাচনী মার্কা। যেমন মাছ, আংটি, টুপি, টেলিফোন, টায়ার ইত্যাদি।
একসময় তিনি উপহাসের পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু এখন ছাত্রদের সামনে তাকে বক্তব্য দিতে বলা হয়। পরাজিত হলেও কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, সে সম্পর্কে তিনি শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করেন। তিনি বলেন, আমি জিততে চাই না। ফেল করাই আমার জন্য উত্তম। যদি আমরা এটা স্মরণ রাখি, তাহলে আমরা হতাশায় ডুববো না। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন দেশের প্রতিজন মানুষের উচিত তাদের অধিকার চর্চা করা। তিনি বলেন, এটা তাদের অধিকার। তাদের উচিত ভোট দেয়া। এক্ষেত্রে কে জিতল আর কে হারল তা কোনো বিষয় নয়।
এখানেই শেষ নয়। পদ্মরাজন বলেন, তিনি থামবেন না। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত নির্বাচনে লড়াই চালিয়ে যাবেন। তবে কোনো নির্বাচনে যদি তিনি বিজয়ী হন কখনো, তাহলে তিনি বিস্মিত হবে। হতাশ হবেন। হাসতে হাসতে বলেন, তাহলে আমি হয়তো হার্টএটাকই করে বসবো।
ছক্কা ছয়ফুরের জয় হোক এবার।
তার আত্মার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করি