দেশ বিদেশ
বেনারসি পল্লীতে হতাশা
নাইম হাসান
২৫ মার্চ ২০২৪, সোমবারমিরপুরের বেনারসি পল্লী। বেনারসি ছাড়াও ঢাকাই মসলিন, জামদানি, টাঙ্গাইল তাঁত ও হাফ সিল্ক, রাজশাহী সিল্ক, জর্জেট, কাতানসহ নানা ধরনের বাহারি কাপড় পাইকারি এবং খুচরা বিক্রির স্থান এটি। ঈদের মৌসুমে শাড়ির দোকানগুলো রমরমা থাকার কথা থাকলেও গতকাল বেনারসি পল্লী ঘুরে দেখা গেল ভিন্নচিত্র। দোকানগুলোয় বিরাজ করছে সুনসান পরিবেশ। ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন দোকানিরা। তারা নিজেরাই শাড়ি বের করে দেখছেন, আবার ভাঁজ করে রেখে দিচ্ছেন। কয়েকটি দোকানে দু’চার জন ক্রেতা থাকলেও তারা দেখে ফিরে যাচ্ছেন। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্রেতা সংকটে ধুঁকছে দেশীয় ঐতিহ্যবাহী শাড়ি বেনারসির সবচেয়ে বড় বাজার রাজধানীর মিরপুরের বেনারসি পল্লী। একই সঙ্গে কাজকর্ম কমে গেছে দেশের প্রাচীনতম এই শিল্পের কারিগরদের। বেচাকেনা কম ও ঈদে কর্মীদের বেতন-বোনাসের চিন্তা নিয়ে অনেকটা চাপের মধ্যে দিন পার করছেন তারা।
তিনি বলেন, প্রতি মাসে বেচাকেনার উপরে ব্যবসায়ীদের সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভ্যাট-ট্যাক্সের যে বিষয়টা, উন্নত বিশ্বের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যখন ব্যাকফুটে থাকে তখন সরকার তাদের সত্যিকারের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়, খোঁজখবর নেয়। কিন্তু আমাদের দেশে তা হচ্ছে না।
ঈদে বেচাকেনার কোনো আমেজ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে আমি এখানে আসছি, তখন এখানকার অবস্থা অনেক ভালো ছিল। যদিও বেনারসি পল্লী বিয়ের বাজারের জন্য বিখ্যাত, রমজানে বেচাকেনা একটু হালকা-ই থাকে। এখন এতটাই হালকা যে, আশেপাশে থেকে কেউ ঘুরতেও আসে না। ২০১৬ সালে আমি দেখছি, কতো মিডিয়া এখানে আসতো, সাক্ষাৎকার নিতো। এখন এর প্রতি কারও তেমন নজরও নেই। আমাদের আত্মীয়স্বজনদেরও অনেক মার্কেটে দোকান আছে। তাদের সবারই এক অবস্থা। তিনি বলেন, এখানে তাঁতীরাও সংযুক্ত আছে। তারা দুই পিস শাড়ি বুননোর পরে আমাদের দেয়। এই শাড়ির দাম যদি ১০ হাজার টাকা হয়, উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তারা সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকা লাভ করে। আমার তো ৫ হাজার টাকার বিক্রিই নাই, আমি কীভাবে তাকে ১০ হাজার টাকা দেবো। তিনি তো একজন না, একেক পণ্য একেক জায়গা থেকে আসে।
দোকানের স্টাফদের বেতন ও ঈদের বোনাস নিয়ে চিন্তিত নাজ বেনারসির ব্যবস্থাপক মো. শামীম আনসারী। তিনি বলেন, এতজন মানুষের সংসার চলছে এই দোকানের উপরে। আমাদের স্টাফদের সেলারি আর ঈদে একটা বোনাস আছে। খরচটা দ্বিগুণ। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। অথচ সেভাবে বিক্রি নাই। এখনো ১০ থেকে ১২ দিন আছে ঈদের। দেখি এখন কি হয়। অবস্থা একেবারেই ভালো না। খুবই চিন্তিত আছি। ব্যাংকগুলো করোনার সময়ে পেছনে পেছনে ঘুরেছে। এখন তারা কোনো ধরনের সুবিধা দিচ্ছে না।
পাবনা বেনারসি মিউজিয়ামের স্বত্বাধিকারী মো. শামীম আকরাম। ২৫ বছর যাবৎ বেনারসি পল্লীতে ব্যবসা করে এখন পর্যন্ত তিনি ৩টি দোকান স্থাপন করেছেন। তিনি মানবজমিনকে বলেন, অনেকেরই একটা ধারণা যে, এটা একটা বিয়ের শাড়ির মার্কেট। যার কারণে এই মার্কেটের ঈদের নির্ধারিত খুচরা কাস্টমার বাদে বাকিরা ভিড় করে না। যদিও ইফতারের পরে আমাদের ভিড় একটু বেশি হয়। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছরে ভিড় অনেকটাই কম। এর কারণ কি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো তা নয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সরকার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। বেনারসি পল্লীর এই শাড়ির ব্যবসায় কেউ ঢুকলে আর বের হওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে ২৫ শতাংশ ব্যবসায়ী লাভে আছেন, ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ী কোনোভাবে টিকে আছেন।
বাকি ২৫ শতাংশ ব্যবসায়ী লোকসানে আছেন। যেখানে একটি শাড়ির দোকান দিতে গেলে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা দোকানের সিকিউরিটি বাবদ অগ্রিম খরচ করতে হয়। ডেকোরেশন করতে ২০ লাখ এবং ২ কোটি টাকার পণ্য উঠানো হয়। রড-সিমেন্টের মতো শাড়ি তো বিক্রি করা যায় না। কেউ চাইলে একবারে ৫০ লাখেও সব শাড়ি বেচতে পারবে না। এই কারণে এই ব্যবসায় ঢুকলে আর বের হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। বের হলে একদম সর্বস্বান্ত হয়ে বের হতে হয়।
তিনি বলেন, এমন কোনো শাড়ি নেই যা এখানে নেই। শাড়ি বিক্রির সময়ে কাস্টমারকে ইন্ডিয়ান শাড়ির কথা বললে খুশি হয়। তবে আমাদের দেশের শাড়ি ইন্ডিয়ান শাড়ির থেকে গুণেমানে সবদিক থেকেই শ্রেষ্ঠ। ইন্ডিয়ার কিছু কাস্টমার আছে, তারা বাংলাদেশের শাড়ি বললে খুশি হয়। তবে ইন্ডিয়া থেকে জর্জেট ও সিল্ক টাইপের কিছু শাড়ি এখানে আসে। আমাদের ৭০ শতাংশ কাস্টমারদের চাহিদা দেশীয় শাড়ির ওপরে।
আমি দুই একবার বেনারসি পল্লীতে গিয়েছি ওখানে এমন দাম চায় যে সাধারণ ক্রেতাদের দাম বলাও দুস্কর। ৩০/৩৫ বছর আগে সদরঘাটে যে অবস্থা ছিল ঠিক সেই অবস্থা।
অথচ "বয়কট ইন্ডিয়া" আন্দোলনের সুযোগে স্বল্পমূল্যে দেশীয় শাড়ি বিক্রি করে এই ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারতে।
এখানে এত বেশী দাম চায়, যাতে ক্রেতাসাধারণ যেতে ভয় পায় । উদাহরন সরুপ, যদি কোন শাড়ীর ক্রয় মূল্য থাকে ১০০০ টাকা, ঐ শাড়ীর দাম চায় ৫০০০/৭০০০ টাকা । আমার সাথে এমন হয়েছে, তাই আমি আর এখানে যাই না ।আমার মত হয়তো অনেকেই যায় না।আপনারা একদামে বিক্রির প্রথা চালু করেন ক্রেতা কিছুনা কিছু অবশ্যই বাড়বে ইনশাল্লাহ ।