শেষের পাতা
শিশু বক্তা রফিকুল ইসলামকে আটকের গুজব
সুনামগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ২১ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবার
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে আলোচিত শিশু বক্তা মুফতি রফিকুল ইসলাম মাদানীকে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের মঞ্চে প্রবেশে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে উপস্থিত মুসল্লি এবং পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২১ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ২ রাউন্ড গ্যাস ছুড়েছে। এতে সালাউদ্দিন এবং ওসমান নামের দুই পুলিশ সদস্য আহত ও এক মাদ্রাসাছাত্র আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এরা হলেন- উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মাহারাম গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে মোজাম্মিল হক লিটন (৩৩), একই ইউনিয়নের কাস্তাল গ্রামের মৃত মাওলানা তবারক ইসলামের ছেলে রায়হান, পৈলানপুর গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে বশির আহমেদ (৩৮), তার সহোদর নাসির উদ্দিন। গত সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বাদাঘাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
জানা যায়, উপজেলার বাদাঘাট বাজার সংলগ্ন ‘বাদাঘাট আলেয়া মাদ্রাসা’ মাঠে হিলফুল ফজল পরিষদ নামে একটি সংগঠন ১৯ ও ২০শে ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি করা হয় আলোচিত শিশু বক্তা মুফতি রফিকুল ইসলাম মাদানীকে। মাহফিলে অন্য বক্তাদের ওয়াজ শেষে প্রধান অতিথি মঞ্চে আসতে চাইলে অনুমতি না থাকায় পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে মাহফিলে উপস্থিত মুসল্লিরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। হঠাৎ মঞ্চে সংবাদ আসে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে আটক করে পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর মুসল্লিরা ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাদাঘাট তদন্তকেন্দ্রে ঘেরাও করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক সংঘর্ষের পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিতে ২৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ২ রাউন্ড গ্যাস ছুড়ে। এ ঘটনায় এলাকায় বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এইদিকে ঘটনার পর পর অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার অর্থ ও প্রশাসন (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আবু সাঈদ, সহকারী পুলিশ সুপার (তাহিরপুর সার্কেল) মো. নাসিম উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বাদাঘাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই নাজমুল ইসলাম জানান, বাদাঘাট বাজার সংলগ্ন বাদাঘাট মাদ্রাসা মাঠে হিলফুল ফজল পরিষদ নামে একটি সংগঠন প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ১৯ ও ২০শে ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করে। গত সোমবার বাদ জোহর মাহফিল শুরু হয়ে রাত ১২টা অবধি সমাপ্ত হয়। হঠাৎ শিশু বক্তা মুফতি রফিকুল ইসলাম মাদানীকে মাহফিলে আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে মুসল্লিগণের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়। রফিকুল ইসলাম মাদানীকে আটক করে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। তারপর শত শত মুসল্লিগণ সংঘবদ্ধ হয়ে বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের চারপাশে জড়ো হয়ে অতর্কিতভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা, ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।
তাহিরপুর থানার (ওসি) মো. নাজিম উদ্দিন দৈনিক মানবজমিনকে জানান, রফিবুল ইসলাম মাদানীকে পুলিশ আটক করেনি, তিনি মূলত তাফসির মাহফিলে আসেননি। এটি গুজব রটিয়ে পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ২৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ২ রাউন্ড গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বিষয়টি খতিয়ে দেখে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে, মানবজমিন থেকে শিশু বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানী মঞ্চের আশপাশে ছিলেন বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পাঠকের মতামত
এর নাম ধর্মীয় স্বাধীনতা
বাংলাদেশ কাফের রাষ্ট্র থেকেও খারাপ হয়ে গেছে। ওয়াজ করতেও হিন্দুদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে করতে হবে।
ভাবতেই অবাক লাগে বাংলাদেশ কি আসলেই মুসলিম রাষ্ট্র? যে দেশে ওয়াজ মাহফিল গুলোতে সচরাচর পুলিশের বাধা প্রদান ওয়াজের জন্য পুলিশের অনুমতি এলাকার নেতাদের মর্জি অনুযায়ী হুজুরদের কে ওয়াজ করতে বাধ্য করা ইত্যাদি সব দেখে মনে হয় বাংলাদেশের আলেমসমাজ ও মুসলমানরা আজ কতো বেশি অসহায়!!
ওয়াজ করবে অনুমতি লাগবে কেন?