ঢাকা, ৯ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

উপজেলায় ১০ গুণ জামানত বাড়িয়ে কী বার্তা দিতে চায় ইসি?

মো. আল-আমিন
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবার
mzamin

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। একইসঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানত ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সভায় এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। তবে ইসির এমন সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এতে সরকারের কোষাগারে বাড়তি কিছু অর্থ যুক্ত হওয়া ছাড়া অন্য কোনো ইতিবাচকতা নেই। ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করতে পারতো। এ ছাড়া এতে জনপ্রিয় গরিব প্রার্থীরা ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য আরও বাড়বে। 

এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা ও নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। গতকাল সভা শেষে এসব পরিবর্তনের কথা জানিয়ে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকে প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত সময়ে সর্বোচ্চ ৫ জন সঙ্গে নিয়ে জনসংযোগ করতে পারবেন। আগে বিধিমালায় এ বিধান ছিল না।

বিজ্ঞাপন
এখন জামানত রক্ষায় প্রার্থীদের প্রদত্ত ভোটের এক-অষ্টমাংশ ভোট পেতে হয়। এটি ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ ভোট না পেলে তার জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হবে। এ ছাড়া সাদাকালো পোস্টারের পাশাপাশি রঙিন পোস্টার ছাপানো যাবে, এমন প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়েছে। চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের নির্বাচনী ব্যয় ২৫ লাখ টাকা এবং মহিলা সদস্যদের ১ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। মনোনয়নপত্রে লিঙ্গ হিসেবে হিজড়াদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত বছর গণপ্রতিনিধত্ব আদেশ সংশোধন করে কিছু ক্ষেত্রে সাজা ও ক্ষমতা বাড়ানো হয়। উপজেলা নির্বাচন বিধিমালায় এটি সমন্বয় করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। তবে ইসি সিদ্ধান্ত নিলেও এখনই এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না। ইসির এসব সিদ্ধান্ত ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে তা আবার ইসির কাছে ফেরত পাঠাবে। তারপর ইসি পর্যালোচনা করে তা আবার আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠালে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

ওদিকে প্রার্থীদের জামানত ১০ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ১ লাখ টাকা করা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন শিক্ষক, গবেষক ও শাসন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, এতে সরকারের কোষাগারে বাড়তি কিছু অর্থ যুক্ত হওয়া ছাড়া অন্য কোনো ইতিবাচকতা নেই। ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করতে পারতো। ছবিযুক্ত রঙিন পোস্টার করার সিদ্ধান্তকে ভুল পদক্ষেপ বলে মনে করছেন এই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, এতে নির্বাচনী ব্যয় বেড়ে যাবে। বিত্তশালী প্রার্থীরা খরচ করতে পারলেও গরিব প্রার্থীরা খরচ করতে পারবে না। সাদা কালোর পাশাপাশি কেউ চাইলে রঙিন পোস্টারও করতে পারবেন এমন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। ভোটে দাঁড়ানো মানুষের অধিকার জানিয়ে ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৫ শতাংশ ভোট কেন পেতে হবে? তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ভোটারের সমর্থনের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দাখিলের বিধান বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্তটি ভালো উদ্যোগ বলে মনে করেন তিনি। বলেন, এটি (সমর্থন স্বাক্ষর) ব্যাপক অর্থে সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। তাছাড়া এটি ইসির জন্যও বাড়তি প্রশাসনিক ঝক্কি-ঝামেলা তৈরি করে। 

সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, জামানতের টাকা ১০ গুণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সঙ্গত নয়। জামানতের টাকা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। সংসদ সদস্য নির্বাচনে যদি ২৫ হাজার টাকা জামানত হয় সেক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা করা হলেও সঙ্গত হতো। তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমানোর জন্য যদি এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তাহলে অনেকে সংকোচন নীতি হিসেবে দেখবে। গরিব প্রার্থীরা নির্বাচন করতে পারবেন না। যদিও বর্তমান অবস্থায় যাদের টাকা, দলীয় আনুগত্য এবং পেশিশক্তি নেই তাদের নির্বাচন করা আর না করার মধ্যে কোনো তফাত নেই। আমরা তো আমাদের গণতন্ত্র বিকশিত করতে পারিনি। যেখানে নির্বাচনযোগ্য প্রার্থীরা অর্থাভাবে থাকলেও ভোট করার সুযোগ পাবেন এবং তাদের ন্যায্য ব্যবহার করা হবে। প্রদত্ত ভোটের শতকরা ১৫ ভাগ অপেক্ষা কম ভোট পেলে জামানত বাজেয়াপ্তের প্রস্তাবকে ভালো উদ্যোগ মনে করেন তিনি। কারণ হিসেবে সাবেক এই সচিব বলেন, অকারণে নির্বাচন করার একটি প্রবণতা মানুষের মধ্যে আছে। তাদের জন্য এটি একটি বার্তা হতে পারে যে, অকারণে নির্বাচনে দাঁড়াবেন না। 

উপজেলা নির্বাচনের ব্যয় ১০ গুণ বাড়ানো ঠিক হয়নি জানিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার প্রশ্ন তুলে বলেন, নির্বাচন কমিশন কি শুধুমাত্র বিত্তশীলদের নির্বাচন করার সুযোগ করে দিতে চাই? বিপুল পরিমাণে জামানত বাড়ালে গরিব অনেক জনপ্রিয় প্রার্থীরা ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। ইসির এমন সিদ্ধান্তে রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য আরও বাড়বে বলে জানান তিনি। সাদা-কালোর পাশাপাশি কেউ চাইলে রঙিন পোস্টারও করতে পারবেন এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে অহেতুক ব্যয় বাড়বে। রঙিন পোস্টারের কী এমন ক্ষমতা রয়েছে যেটি সাদা-কালো পোস্টারে সম্ভব না? গরিব প্রার্থীরা টাকার অভাবে রঙিন পোস্টার করতে পারবেন না। এ ছাড়া প্রদত্ত ভোটের শতকরা ১৫ ভাগ অপেক্ষা কম ভোট পেলে জামানত বাজেয়াপ্তের প্রস্তাবকে সঠিক সিদ্ধান্ত মনে করছেন না তিনি। যুক্তি হিসেবে তিনি বলছেন, নতুন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ১৫ শতাংশ ভোট পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। এটি করা হলে প্রার্থী কমে আসবে। প্রতিযোগিতাও কমবে। 
 

পাঠকের মতামত

ভণ্ড কমিশন !!!!

Imran
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:১০ অপরাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status