ঢাকা, ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার
৮ মে ২০২৪, বুধবার
mzamin

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন উৎস থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য আরও তহবিল সংগ্রহের জন্য আইওএম’র প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যেহেতু বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিল কমে গেছে, আইওএম’র উচিত এই উদ্দেশ্যে আরও তহবিল সংগ্রহের জন্য নতুন অংশীদারদের খুঁজে বের করা। গতকাল গণভবনে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক (ডিজি) অ্যামি পোপ তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করতে আইওএমকে সহায়তা করতে বলেছেন। কারণ, এখানে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা এবং কর্মসংস্থানসহ সমস্ত সুযোগ-সুবিধা সংবলিত আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরে এ পর্যন্ত ৩০-৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। বৈঠকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে আইওএম মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর কাছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের নিরাপদ অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করেছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দল ও উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং তারা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লিপ্ত রয়েছে। আবার রোহিঙ্গারা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় স্থানীয় লোকজন এখন তাদের এলাকায় সংখ্যালঘু হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন
এ সময় অ্যামি পোপ স্বাগতিক দেশের চাহিদা অনুযায়ী তাদের দক্ষতা বাড়াতে ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর অভিবাসীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়ার ওপর জোর দেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার অন্য দেশের কাউকে বোঝার জন্য পেশা ও ভাষার ওপর যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। দক্ষ জনসংখ্যা তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য সারা দেশে ১১২টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, অভিবাসন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। দারিদ্র্য কমলে অভিবাসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। সরকারপ্রধান বলেন, সরকার অভিবাসীদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জামানত ছাড়াই ঋণ দেয়া। শেখ হাসিনা বলেন, আয়োজক ও উৎস দেশ উভয়েরই অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। যেহেতু তারা উভয় দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অভ্যন্তরীণভাবেও মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি এবং নদী ভাঙন, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে স্থানান্তরিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার কক্সবাজারের খুরুশকুলে ৪ হাজারের বেশি জলবায়ু উদ্বাস্তুকে বাড়ি দিয়েছে। জলবায়ু সহিষ্ণু বাড়ি এবং বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য ভাসমান বাড়ি নির্মাণ করছে এবং গৃহহীনদের মাঝে বিনামূল্যে বাড়ি দিয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং মহামারি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়ার জন্য স্বাধীন প্যানেলের কো-চেয়ার হেলেন ক্লার্কের সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা স্থাপন, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা পদক্ষেপে আস্থা তৈরি এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে জীবন বাঁচাতে মহামারি মোকাবিলায় প্রস্তুতি এবং সাড়া প্রদানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, মহামারি প্রস্তুতি এবং প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত সংস্কার পরিচালনার ক্ষেত্রে উচ্চ-স্তরের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অপরিহার্য। এটি বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার জন্য আওয়াজ তোলে, জনস্বাস্থ্যের হস্তক্ষেপে আস্থা জাগিয়ে তোলে এবং শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচায়। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ মহামারিজনিত জটিলতা মোকাবিলা করার সময় আরও স্থিতিস্থাপক এবং প্রস্তুত বিশ্ব গঠনে আমাদের একটি শক্তিশালী এবং সিদ্ধান্তমূলক নেতৃত্ব অপরিহার্য হবে। তিনি আরও বলেন, অত্যন্ত খণ্ডিত বিশ্ব স্বাস্থ্য শাসন ব্যবস্থাকে মহামারি প্রতিরোধ ও সাড়াদানের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জ্ঞান, প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সক্ষমতা জোরদারে আমাদের অবশ্যই সম্মিলিত রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তাকে আশ্বস্ত করেন যে, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এবং কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় অতীতের সাফল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ এক্ষেত্রে গঠনমূলক ভূমিকা অব্যাহত রাখবে। তিনি আরও মতামত দেন যে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা এবং প্রতিশ্রুতি পদ্ধতিগত পরিবর্তনের জন্য অপরিহার্য যা আমাদের ভবিষ্যতের মহামারি প্রতিরোধ, শনাক্তকরণ এবং কার্যকরভাবে সাড়া দেয়ার ক্ষমতা বাড়াতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, মহামারি প্রস্তুতি এবং প্রতিক্রিয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় একটি অগ্রাধিকার থাকে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব তা নিশ্চিত করেন। 

ওদিকে গণভবনে স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ বিনির্মাণে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কার্যক্রমের রূপরেখা সংক্রান্ত উপস্থাপনা অবলোকনকালে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে দেশের অর্থনীতি কতোটা চাঙ্গা হবে এবং স্থানীয়রা কতোটা উপকৃত হবে তা বিবেচনায় নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের প্রথমে ভাবতে হবে ফলাফল কী হবে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে একটি প্রকল্প নেয়ার পরে জনগণ কতোটা উপকৃত হবে। আমাদের দেশের উন্নয়ন এমনভাবে করতে হবে যাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়বে এবং অন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমবে। রূপরেখা প্রত্যক্ষ করার পর, প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়াতে এবং প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কে এম সাখাওয়াত মুন এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশের কতোটা উন্নয়ন হবে এবং মানুষ কতোটা উপকৃত হবে তা আপনাদেরকে বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, দ্রুত কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে বলে দেশবাসী এর সুফল পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা একটি লক্ষ্য নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তার সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার ছিল জনগণের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, গবেষণার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমরা সফলভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। সরকার রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেছিল এবং উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভের মধ্যদিয়ে সফলভাবে তা বাস্তবায়ন করেছে। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশে রূপান্তর করা। আমরা সেই রূপকল্প বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 
 

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গাদের কেয়ামত পর্যন্ত নিজ দেশে ফিরাতে পারবেননা তার চেয়ে ওদেরকে নাগরিকত্ব দিয়ে দেশের কাজে লাগিয়ে দিন এতে সব পক্ষের মঙ্গল হবে।

মিলন আজাদ
৯ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:১১ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status