ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

যে কারণে উপজেলায় বিএনপি’র এত নেতা প্রার্থী

কাজী সুমন
৮ মে ২০২৪, বুধবারmzamin

৭ই জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে গেলেই নিশ্চিত এমপি হওয়ার সুযোগ ছিল বিএনপি নেতাদের সামনে। সরকারি দলের তরফ থেকে অনেকটা প্রকাশ্যেই দেয়া হয়েছিল এমন লোভনীয় অফার। কিন্তু দলীয়ভাবে বর্জন করায় দু-একজন ছাড়া বিএনপি’র কোনো নেতাই একতরফা ওই নির্বাচনে অংশ নেননি। এমনকি দলটির ভোট বর্জনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রমুখী হননি। কিন্তু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চিত্র ভিন্ন। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা করে চার ধাপের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি’র তৃণমূলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী প্রার্থী হয়েছেন। দফায় দফায় কেন্দ্রের শোকজ ও বহিষ্কারাদেশের পরও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি তারা। উল্টো বহিষ্কৃত প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের অনেক  নেতা। যেখানে নিশ্চিত সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ থাকার পরও যেসব নেতা জাতীয় নির্বাচনে যাননি তারা কেন উপজেলায় প্রার্থী হলেন। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন বিএনপি’র দায়িত্বশীল একাধিক নেতা। তারা বলেছেন, ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি’র তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধারণা ছিল- পশ্চিমা বিশ্বের তৎপরতার কারণে এবার একতরফা নির্বাচন করতে পারবে না সরকার। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে। এলাকায় রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে ও হতাশা কাটিয়ে উঠতে অনেক নেতা উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া উপজেলায় বিএনপি’র যেসব নেতা প্রার্থী হয়েছেন তাদের একটি অংশ দলের কমিটি গঠনের সময় অবমূল্যায়িত হয়েছেন কিংবা পদবঞ্চিত হয়েছেন। অনেককে আগে থেকেই বহিষ্কার করে রাখা হয়েছে। অনেকের আবার এলাকায় জনপ্রিয়তা ও পারিবারিক-সামাজিক অবস্থান রয়েছে। তারা মনে করছেন- প্রায় প্রতিটি উপজেলায় সরকার দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। আওয়ামী লীগের ভোট তাদের মধ্যে ভাগাভাগি হবে। সেক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বিএনপি প্রার্থীরা। তাদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। সেই সমীকরণ থেকে অনেকে প্রার্থী হয়েছেন।
এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে অনেকে মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন, অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দলের এমন অনেক নেতা ও নেত্রী ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। তাদের বিশ্বাস- নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে সরকারের মামলা-হামলার নিপীড়ন থেকে বাঁচা যাবে। 

এদিকে উপজেলায় প্রার্থী হওয়া নেতাদেরকে নির্বাচন থেকে সরানোর ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। শুধু কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে বহিষ্কারের হুমকি ও শোকজ নোটিশ পাঠিয়ে দায় এড়ানো হয়েছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর জন্য স্ব স্ব জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র নেতাদের দিলে ফলাফল অন্য রকম হতো বলে মনে করছেন তারা।

বিএনপি’র দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপে বিভিন্ন উপজেলায় ৮১ জন নেতা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। গত ২৬শে এপ্রিল ৭৩ জন, ২৭শে এপ্রিল ৩ জন, ২৯শে এপ্রিল আর ১ জন এবং ৩০শে এপ্রিল ৪ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। এরপর দ্বিতীয় ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ৬১ জন নেতা প্রার্থী হন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ১৯ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ১৬ জন রয়েছেন। গত ৪ঠা মে তাদের সকলকে দলের সব ধরনের পদ থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এ ছাড়া দ্বিতীয় ধাপে প্রার্থী হওয়ায় গতকাল আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদিকে তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য বিপুলসংখ্যক বিএনপি নেতা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদেরও পর্যায়ক্রমে বহিষ্কার করা হবে।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জেলা বিএনপি’র মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ দলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আব্দুল মান্নান মানবজমিনকে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখানে দলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তখন বিএনপি’র ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত ছিল সঠিক। কিন্তু উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কোনো দলীয় নির্বাচন নয়। আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন করছি। এই নির্বাচনে ভোট বয়কটের বিষয়টি যদি আরও কয়েক মাস আগে দেয়া হতো বিষয়টি বিবেচনা করা যেতো। কিন্তু এখন নির্বাচনে মাঠে নেমে গেছি, তাই সরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। ভোটারদের কাছে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।  তাছাড়া ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার কারণেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। পাশাপাশি আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা।

প্রথম ধাপের প্রার্থী ও নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এবং দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল মানবজমিনকে বলেন, এখানে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে আমার মাঠের অবস্থান খুব ভালো। জনপ্রিয়তায় আমার ধারে কাছে কেউ নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় প্রার্থী বেশি হওয়ায় জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি বেশি হবে। 

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি এবং  উত্তর বড়দল ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাসেম মানবজমিনকে বলেন, ঠুনকো অভিযোগে আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দল বর্জন করলেও আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। এলাকায় আমার বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। সুষ্ঠু ভোট হলে বিজয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। 

এ বিষয়ে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি নেতাদের প্রার্থী হওয়ার মূল কারণ হলো- গত ১৭ বছর ধরে জোর করে ক্ষমতা দখল করে রাখায় স্থানীয় পর্যায়ে তারা বঞ্চিত হয়ে আসছেন। আমাদের দলের তৃণমূলের কিছু নেতা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সে কারণে দলীয় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তারা প্রার্থী হয়েছেন। এতে দলীয় শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মানবজমিনকে বলেন, সরকার একতরফা জাতীয় নির্বাচন করার পর দেশে-বিদেশে আস্থার সংকটে ভুগছে। সেজন্য উপজেলা নির্বাচনকে প্রলোভনের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করছে। আমাদের দলের কিছু নেতা এই প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়েছে। তবে সেই সংখ্যাটা বেশি নয়। দলের নির্দেশনা অমান্য করে তারা বিশ্বাসঘাতকার পরিচয় দিয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের বহিষ্কার করে দলকে আগাছামুক্ত করেছি। কিন্তু যারা আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন তারা কেউই উপজেলায় প্রার্থী হননি।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি’র যারা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন তারা ৫-১০ বছর আগে দল করতো, এখন আর তারা পদ-পদবিতে নেই। ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী যারা হয়েছেন তারা কেউ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে হয়েছেন কেউ বা অর্থের লোভে হয়েছেন। কিন্তু তারা মাঠে  প্রচারণার জন্য কর্মী পাচ্ছে না। এই নির্বাচন নিয়ে কারও কোনো আগ্রহ নেই। 
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status