শেষের পাতা
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা, শুটারসহ গ্রেপ্তার ৪
স্টাফ রিপোর্টার
১৮ মে ২০২৪, শনিবারনড়াইলের লোহাগড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিকদার মোস্তফা কামালকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- প্রধান আসামি শুটার সাজেদুল মল্লিক (২৫), পাভেল শেখ (২৮), মামুন মোল্যা (২৬) ও মো. রহমত উল্লাহ শেখ (১৯)। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বায়েজিদ ও নড়াইল এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা উক্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে র্যাব। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম। তিনি বলেন, গত ১০ই মে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালকে দুর্বৃত্তরা অতর্কিত হামলা করে ও এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগীর বড় ভাই বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করে।
একজন সাবেক ইউপি সদস্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে র্যাব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে মাঠে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব-৭ এবং র্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে ওই হত্যার ঘটনায় জড়িত শুটারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের বরাত দিয়ে কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, দীর্ঘ বিরোধের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। ভুক্তভোগী নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আকবর হোসেন লিপনের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্ব থেকে শত্রুতা বিরাজমান ছিল। আরাফাত ইসলাম বলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে পূর্ব বিরোধের জের ধরে ভুক্তভোগী মোস্তফা কামাল এবং আকবর হোসেন লিপনের অনুসারীদের মধ্যে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে লিপন গুরুতর আহত হয় এবং তার একটি হাত কাটা পড়ে। পরবর্তীতে লিপন ও তার অনুসারীরা মোস্তফা কামালের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। লিপনের নির্দেশনায় ঘটনার দিন সকালে তার ছোট ভাইয়ের বাড়িতে গ্রেপ্তারকৃত সাজেদুলসহ অন্য আসামিরা মোস্তাফা কামালকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মোস্তফা কামালের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় গ্রেপ্তারকৃত সাজেদুলসহ অন্য আসামিরা সুইচ গিয়ার চাকু, রাম দাসহ বিদেশি অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে ওত পেতে থাকে। ঘটনাস্থলে পৌঁছানো মাত্রই সুযোগ বুঝে গ্রেপ্তারকৃত সাজেদুলের হাতে থাকা বিদেশি পিস্তল দিয়ে মোস্তফা কামালকে লক্ষ্য করে ৩ রাউন্ড গুলি করে যার মধ্যে ২ রাউন্ড গুলি তার বুকে ও পিঠে লাগে। র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত সাজেদুল স্থানীয় একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট’র ১ম বর্ষের ছাত্র। সে আকবর হোসেন লিপনের অন্যতম প্রধান সহযোগী। সে লিপনের নেতৃত্বে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদকসেবনসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি, চুরি ও চাঁদাবাজি সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত রহমত উল্লাহ পেশায় একজন শ্রমিক। সে গ্রেপ্তারকৃত সাজেদুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ মারামারি, ছিনতাই, মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে জানা যায়। গ্রেপ্তারকৃত সাজেদুলের সহযোগী হিসেবে তাকে উক্ত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার জন্য ১ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছিল এবং হত্যাকাণ্ডের সময় সে গ্রেপ্তারকৃত সাজেদুলের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি সংক্রান্ত ১টি মামলা রয়েছে এবং উক্ত মামলায় কারাভোগ করেছে। গ্রেপ্তারকৃত পাভেল স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। সে লিপনের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। সে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি ও চুরি সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে। অপর আসামি মামুন মোল্যা পেশায় একজন গাড়িচালক। সে লিপনের নেতৃত্বে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তার কাছে থাকা ছুরি চাকুসহ অন্যান্য দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গ্রেপ্তারকৃতরা ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে মোস্তফা কামালকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি ও চুরি সংক্রান্ত ২টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য হয়ে গেল ক্যামনে?