শেষের পাতা
সাক্ষাৎকারে এ্যানী
আমাদের আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে
কিরণ শেখ
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার
কারাগারে থাকা নেতাদের মুক্তির পর আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি প্রণয়ন করবে বিএনপি। এ জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে বলে মনে করেন সদ্য কারামুক্ত দলটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আন্দোলনে ব্যর্থতাসহ নানা ইস্যুতে কথা বলেন তিনি। চার মাস কারাভোগের পর গত বৃহস্পতিবার মুক্তি পান এই সাবেক ছাত্রনেতা।
২৮শে অক্টোবরের আগের বিএনপি’র সম্ভাবনাময় একটা সময় ছিল, এখন সাধারণ মানুষসহ বিএনপি’র নেতাকর্মীরা মনে করেন যে, তাদের সামনে আর কোনো সুযোগ নাই। এই মুহূর্তে বিএনপি কী করবে- এমন প্রশ্ন করা হলে এ্যানী বলেন, বিএনপি মাঠে আছে। আমাদের অনেক সিনিয়র নেতাকর্মীরা বিগত আন্দোলন-সংগ্রামের সময় জেলে ছিলেন, হাজার হাজার নেতাকর্মী এখনো জেলে আছে। এরমধ্যে অনেকে বের হয়েছেন। সবাই বের হওয়ার পরে আলাপ-আলোচনা করবেন। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে এই ফ্যাসিবাদ মোকাবিলায় আমাদের কর্মসূচি নতুনভাবে গ্রহণ করবো। এই লড়াইকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এজন্য আমাদের আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। কিন্তু আমাদের যে দাবি, একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এই দাবির পথে আমাদের যে কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার সেটা ধারাবাহিকভাবে আমরা চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হবোই।
আপনি কর্মসূচির কথা বলছেন, সামনে এই কর্মসূচিগুলো কীভাবে আসবে- এ প্রসঙ্গে এ্যানী বলেন, মাঠে এখনো কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। সেই কর্মসূচি চলছে। এখন ৭ তারিখের আগে যে ধরনের কর্মসূচি পালন করেছি, সেই কর্মসূচি আমরা দ্রুত নিয়ে আসবো- সিনিয়র অনেক নেতা এখনো জেলে আছেন। আমরা আমাদের ফোরামে আলোচনা করে আরও কঠিন কর্মসূচি কীভাবে নিয়ে আসা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবো।
সভা-সমাবেশগুলোতে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের দেখা যায়, কিন্তু যখন কঠোর কর্মসূচি দেয়া হয় তখন তাদের মাঠে দেখা যায় না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি’র এই প্রচার সম্পাদক বলেন, ১০ই ডিসেম্বর আমরা কর্মসূচি দিয়েছি। এর আগে আমাদের অনেক কর্মসূচি ছিল। সেসব কর্মসূচিতে তারা (সরকার) পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। ২৮ ও ২৯শে জুলাই আমরা দুটি অনুষ্ঠান করেছি। দুটি কর্মসূচিতেই তারা পরিকল্পিতভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করে এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে আমাদের এই কর্মসূচিগুলো পণ্ড করে দিয়েছে। সর্বশেষ ২৮শে অক্টোবর, তার আগে ১৮ই অক্টোবরসহ সকল কর্মসূচিতে সরকার একচেটিয়াভাবে জনসম্পৃক্ত দলগুলোকে দমন করার জন্য যা যা করার তার সবই তারা করেছে।
এখানেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির দেউলিয়াত্ব। জোর-জবরদস্তি করে আজকে তারা একটা কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত করেছে। এখানে হয়তো আজকে আমরা তাদের হঠাতে পারি নাই। কালকে আমাদের চেষ্টা করতে হবে এবং পরশু আমাদেরকে বিজয় অর্জন করতে হবে। এই মনোবলটুকু আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে আছে।
নির্বাচনের আগে বহির্বিশ্ব বিএনপি’র প্রতি সমর্থন এবং আগ্রহ দেখিয়েছিল, এখন তারা নীরব কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের এই গণতান্ত্রিক আন্দোলন। এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, গণতন্ত্রের উপর আঘাত এসেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর উপর আঘাত এসেছে। এদেশে যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, এজন্য গণতন্ত্রমনা দেশগুলো কথা বলেছে। কিন্তু এখন যারা জোর করে ক্ষমতায় আছে তারা অনেকের কথাই শুনে নাই। তারা তাদের মনগড়া অপরাজনীতি এবং ফ্যাসিবাদী শাসন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সবকিছুর শেষ আছে। আর আমরা দেশ-বিদেশে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার প্রেক্ষিতে আমাদেরকে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বিএনপি’র মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব বলেন, কোন প্রসঙ্গে পশ্চিমা বিশ্ব নিষেধাজ্ঞা দেয়, এটা তাদের দেশের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। বিএনপি’র যে কাজ, আমরা মাঠ পর্যায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আমাদের ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বসে আছি। আমরা সেদিকে বেশি মনোযোগী। আর বহির্বিশ্ব তারা তাদের হিসাবনিকাশ করবে। আর এধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞার জন্য আমরা বসে নাই।
জামায়াতের সঙ্গে একত্রিত হয়ে আন্দোলনে নামার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জোটগতভাবে আমাদের সঙ্গে জামায়াতের কোনো ঐক্য নাই। কিন্তু রাজপথে এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা কর্মসূচি দিচ্ছি। জামায়াতও যুগপৎ আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে আমাদের সঙ্গে মিল রেখে কর্মসূচি দিচ্ছে। এখানে তো অসুবিধার কিছু নাই।
এখন দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কেমন- এমন প্রশ্নের জবাবে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, দেশে কী রাজনীতি আছে? দেশের রাজনীতি নিচ থেকে শুরু করে উপর পর্যন্ত সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। মান-সম্মান ও ইজ্জত বলতে কিছু নাই। রাজনীতিবিদদের কোনো মান-সম্মান আছে? কোনো ইজ্জত আছে? আর যারা আজকে ক্ষমতায় আছেন, তারা কি মনে করে-খুব ইজ্জতের সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছেন? আমরা আশা করছি, সরকার গণতান্ত্রিক আচরণ এবং ব্যবহার করবে।
২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে যায়নি। ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। আবার ২০২৪ সালেও নির্বাচনে যায়নি। সেক্ষেত্রে সামনের নির্বাচনে কী হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি’র এই নেতা বলেন, রাজনীতি যদি না থাকে এই নির্বাচনের হিসাবনিকাশ করে লাভ কি? আগে রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সব রাজনৈতিক দলকে একটা টেবিলে বসতে হবে। সেটা সরকারি এবং বিরোধী দলসহ সকল রাজনৈতিক দলকে। রাজনৈতিক একটা কাঠামো তৈরি করতে হবে। রাজনীতির প্রতি মানুষের যে সম্মান, ইজ্জত, ভালোবাসা এবং যে শ্রদ্ধা- সেটা ফিরিয়ে আনতে হবে। তারপরেই ভোটের হিসাবনিকাশ।
পাঠকের মতামত
পাকিস্তানের ইমরান খানের মতো আমাদের দেশে কবে একজন নেতা জন্ম নেবে আমরা কেউ জানি না। আল্লাহ তুমি আমাদের দেশের জন্য হযরত ওমর(রা:) এর মতো একজন নেতা পাঠিয়ে দাও।
আরো ত্যাগ স্বীকার না, দরকার বিএনপির নেতাদের ভাষায় ও ভাষণে পরিবর্তন, ফোকাস ঠিক রাখা ও পরিকল্পিত, সমন্বিত, ফোকাসড ও লক্ষ্যভেদী প্রচারনা যেন সরকারের ও হাসিনার কট্টর সমর্থকরা তার প্রতি আস্হা হারায়, না হয় সমর্থন করা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে, টকশোতে যারা যায় তাদের এক ভাষায় কথা বলাসহ পরিকল্পিত আন্দোলন ।