শেষের পাতা
দেশজুড়ে প্রতিবাদ
শিক্ষক হত্যার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা ও সাভার এবং বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার
৩০ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবারশিক্ষক হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন
শিক্ষক হত্যার প্রধান আসামি আশরাফুল আহসান জিতুকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এর আগে মঙ্গলবার রাতে জিতুর পিতাকে কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওদিকে আশুলিয়ায় শিক্ষক হত্যা ও নড়াইলে শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে দেশজুড়ে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শিক্ষক হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেছেন। বুধবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়স্থ রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে তারা এ আমরণ অনশন শুরু করেন। শিক্ষকের ওপর এ ধরনের বর্বরোচিত হামলায় জড়িত অপরাধী কোনোভাবেই একজন শিক্ষার্থী হতে পারে না উল্লেখ করে তারা দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে আশুলিয়ায় হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কলেজের সামনের সড়কে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও কালো ব্যাজ ধারণ করেন তারা। মানববন্ধন থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছয়টি দাবির কথা জানিয়েছেন। এতে উপস্থিত ছিলেন- কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হযরত আলী। শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী তার ভাতিজার ছেলে।
আশুলিয়ায় হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত স্কুলছাত্রের পিতা উজ্জ্বলকে পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। মঙ্গলবার মধ্যরাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আশুলিয়ায় বখাটে এক শিক্ষার্থীর মারধরের শিকার আহত শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার সোমবার সকালে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত শনিবার দুপুরে নিহত শিক্ষকের কর্মস্থল আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী কলেজে প্রকাশ্যে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে ও খুঁচিয়ে গুরুতর আহত করে ওই প্রতিষ্ঠানেরই দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জিতু। ৩৫ বছর বয়সী এই শিক্ষক রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক এবং অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। এক ছাত্রী জিতুর বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ দিয়েছিলেন নিহত শিক্ষক উৎপলের কাছে।
এ নিয়ে ওই ছাত্রকে শাসানোই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। পিতাকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল র্যাব প্রধান আসামি জিতুকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল সন্ধ্যায় র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, জিতুকে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে নড়াইল জেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের শিক্ষককে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় মামলা দায়েরের পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে সোমবার দুপুরে মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শেখ মোরছালিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন। নড়াইলে পুলিশের উপস্থিতিতে কলেজ অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে হেনস্তার প্রতিবাদে এবং সাভারে কলেজ শিক্ষক উৎপল কুমার বিশ্বাসের হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানববন্ধন করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। বুধবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে সামনে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রায় অর্ধ-শতাধিক নেতাকর্মী এতে উপস্থিত ছিলেন?।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাহিত্য সম্পাদক জাহিদ আহসানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন এবং সহ-সভাপতি আসিফ মাহমুদ। ৫ দিনের রিমান্ডে জিতুর বাবা আশুলিয়ায় শিক্ষক উৎপল হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি বখাটে জিতুর বাবা উজ্জ্বলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই এমদাদুল হক বলেন, চিত্রশাইল এলাকার উজ্জ্বলের বাড়ির এক ভাড়াটিয়ার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। তার বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন উজ্জ্বল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘সকালে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে পাঠানো হলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক হত্যাকারী জিতুকে গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল সকালে তৃতীয় দিনের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
এ ছাড়া সাভার সরকারি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও উৎপল কুমার সরকারকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এতে বক্তারা বলেন, শিক্ষক হলো জাতির কারিগর, মানুষ গড়ার কারিগর। তাদেরকে যারা হত্যা করে আমি মনেকরি তারা দেশের কীটপতঙ্গ। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অন্যদিকে কী কারণে এভাবে কলেজ শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে তা জানতে নিহত উৎপলের সহকর্মী, শিক্ষার্থী, প্রত্যক্ষদর্শী, স্কুলের স্টাফ ও স্থানীয়রা জানান, জিতুর সঙ্গে এক ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। উৎপলকে পেটাতে পরিকল্পনা করেই স্টাম্প নিয়ে সেদিন স্কুলে এসেছিল জিতু। এটি নিছক ঝোঁকের বসে ঘটিয়ে ফেলা কোনো অপরাধ নয়। কিছুদিন আগেও স্কুলের একটি কক্ষে জিতু ও সেই মেয়েকে দেখার পর শিক্ষক উৎপল তাদেরকে শাসন করেন। ওই মেয়ের পরিবারকে তিনি ফোন করে সব জানিয়ে সতর্কও করেন। মেয়েটা জিতুকে এসব বিষয় জানালে সে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই স্যারকে পিটিয়েছে।
সেদিন জিতুর সঙ্গে আরও ৩ জন ছিল। পেটানোর পর ৪ জন একসঙ্গে হেঁটে চলে যায়। উল্লেখ্য, গত শনিবার দুপুরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে ওই শিক্ষকের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ক্রিকেটের স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে একই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র জিতু। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার মারা যান।