শেষের পাতা
সাদেক কাণ্ড
সাংবাদিকদের তথ্য না দিতে ওসমানী কর্তৃপক্ষের নোটিশ
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবারসাদেক কাণ্ডের ঘটনার পর ওসমানী হাসপাতালের দুর্নীতির নানা চিত্র বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এতে দেখা গেছে, সিলেট বিভাগের চিকিৎসার শীর্ষ এ প্রতিষ্ঠান সাদেকসহ প্রশাসনের একটি অংশের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল এবং তারা ইচ্ছামতো হাসপাতালের প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করেছেন। আউট সোর্সিংয়ের নামে হাতিয়ে নিয়েছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। গণমাধ্যমে দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক নেমে এসেছে। প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর থেকে সাদেকের নিয়োজিত স্টাফ-নার্সদের সরিয়ে তাদের পূর্বের কর্মস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতালের দুর্নীতি রুখতে কঠোর হয়েছেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া। নানা দুর্নীতির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন তিনি। এই অবস্থায় সাংবাদিকদের কোনো প্রকার তথ্য না দিতে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি নোটিশ জারি করেছেন।
গতকাল জারি করা এ নোটিশে তিনি জানিয়েছেন, ‘ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হতে বিভিন্ন তথ্য বাইরে প্রকাশ করা হচ্ছে বিশেষ করে সাংবাদিকদের নিকট, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া হাসপাতাল সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ বাইরে কোথাও প্রকাশ না করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এর ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ নোটিশের অনুলিপি তিনি হাসপাতালের ১৩টি দপ্তরকে প্রেরণ করেছেন। চিঠির বিষয়ে গতকাল বিকালে হাসপাতালের উপ-পরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি নেগেটিভ সেন্সে দেয়া হয়নি। হাসপাতালের যেকোনো বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাই ভালো দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে দেখা গেছে কোনো কোনো কর্মচারীরাও ভুল তথ্য পরিবেশন করেন। এতে করে হাসপাতালের দুর্নাম হয়। বিষয়টিকে মাথায় রেখে এই নোটিশ দেয়া হয়েছে। অন্য কোনো কারণে নয়।’
নোটিশের জবাব নেই সাদেকের: সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘুষের ৬ লাখ টাকাসহ সাদেকের দুই সহযোগী ৯ই জানুয়ারি গ্রেপ্তার হয়। এরপর থেকে ওসমানীর দুর্নীতির মূলহোতা ব্রাদার ও নার্সেস এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ইসরাঈল আলী সাদেক লাপাত্তা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগে যে মামলা দায়ের করেছে সে মামলার প্রধান আসামি সাদেক। মামলাটি তদন্ত করছেন সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর রাশেদ ফজল। এক মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি সাদেককে গ্রেপ্তার করতে পারেননি। গতকাল রাশেদ ফজল মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সাদেককে গ্রেপ্তারে প্রতিদিনই পুলিশ তার বালুচরস্থ বাসা এবং সম্ভাব্য স্থানে খোঁজ করা হচ্ছে। কিন্তু তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে; পুলিশ চেষ্টায় আছে। সাদেককে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযানের পাশাপাশি মামলার তদন্ত চলছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ নার্স সাদেক। ঘুষের টাকাসহ তার দুই সহযোগী আমিনুল ও সুমন গ্রেপ্তার হয়। দুই সহযোগী গ্রেপ্তারের পর থেকে সাদেক কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত মাসেই নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তরকে পত্র দিয়ে এ বিষয়টি জানিয়েছে। পরে অধিদপ্তরের পরিচালক (শিক্ষা ও শৃঙ্খলা) সাদেককে কর্মস্থলে অনুপস্থিত এবং ঘুষ দুর্নীতির বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে জবাব দেয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছিলেন।
নোটিশে বলা হয়েছিল; স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে জবাব দিতে হবে। কিন্তু গত সপ্তাহে নোটিশের মেয়াদকাল শেষ হয়ে গেলেও সাদেক কোনো জবাব দেননি। সিলেট ওসমানী ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবা তত্ত্ববধায়ক রিনা বেগম জানিয়েছেন, অধিদপ্তর থেকে যে চিঠি দেয়া হয়েছিল সেটি তিনি পেয়েছেন। কিন্তু সাদেকের পক্ষ থেকে তার কাছে জবাব আসেনি। অন্য কোথাও জবাব দিলে তিনি সেটি জানেন না। তবে সাদেক অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি জানিয়ে তিনি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবগত করেছেন। হাসপাতালের স্টাফ-নার্স সাদেক কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন- সাদেককে অধিদপ্তর থেকে যে কারন দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল সেটির জবাব তার তরফ থেকে দেয়া হয়নি। পাশাপাশি সে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এখন নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তরই তার ব্যাপারে সিদ্বান্ত নেবে বলে জানান তিনি।
সরকারি মেডিকেল কলেজের তালিকায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ ৭ নম্বরে। সৌমিত্র বাবুর নোটিশের ধরন দেখে যে কেউ ভেবে নেবে এটা কোন ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠান! পাবলিকের পয়সায় পরিচালিত পাবলিক প্রতিষ্ঠানের খোঁজখবর নেওয়ার অধিকার জনগণের আছে। জনস্বার্থের বিরুদ্ধে না গেলে পাবলিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাবলিকলি প্রকাশ হবে এটাই কাম্য। অতএব ওখানে যারা পদে বসে আছেন তাদের নিয়ম নীতিগুলা ভালোভাবে জেনে নিতে হবে কথা বলার পুর্বে।
What are you guys hiding here? It is better for everyone sooner you guys come clean with your corrupt system and everyone in it. All corrupt thugs must be punish first and then sack these thugs from top to bottom.