ঢাকা, ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বাংলারজমিন

মৌলভীবাজারে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট

ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে
৩০ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার
mzamin

মৌলভীবাজারে বানভাসিরা চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন। নিজেরা যেমন ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রিত হয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তেমনি তাদের গবাদিপশুগুলোও খাদ্য ও বাসস্থান সমস্যায় চরম বেহাল দশায়। বন্যা শুরু হওয়ার প্রায় ১৫ দিন। কিন্তু বন্যা পরিস্থিতি রয়েছে অনেকটাই অপরিবর্তিত। অল্প করে পানি কমলেও থেমে থেমে বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যেই সেই। এখন বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে জলাবদ্ধতায় রূপ নিচ্ছে। জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলা কমবেশি বন্যা আক্রান্ত। এ অবস্থায় মানুষের মতো দুর্ভোগে পড়েছে তাদের গৃহপালিত পশুগুলোও। মানুষের বসতভিটা যেমন পানিতে নিমজ্জিত। তেমনি গবাদিপশুগুলোরও অবস্থা। বানের পানিতে কৃষি ক্ষেত ও রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়াতে এখন  গো-খাদ্য সংকটে পড়েছেন জেলার নদী ও হাওর পাড়ের কৃষিজীবীরা। কদিন থেকে এ সংকট তীব্র হচ্ছে। বানের পানিতে ঘাস ও ক্ষেতের জমি নিমজ্জিত। তাই গবাদিপশুগুলোর খাদ্য সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। আর ধানের শুকনো খড় আর কুড়োও বানের পানিতে পঁচে যাওয়ায় বন্যার্তরা গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে। তাই এখন গো খাদ্য নিয়ে শুধুই হাহাকার। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঘরে নিজেদের খাবার নেই। তারপর আউশ ও সবজি ক্ষেতের জন্য মহাজন ও এনজিও সংস্থার কাছ থেকে ঋণ আনায় পাওনাদারদের তাগিদ আসছে বার বার। কৃষিক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আয় রোজগারও নেই। তাই অভাবের তাড়নায় নিজেদের সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়েই বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের গরু, মহিষ ও ছাগল। নদী ও হাওর তীরের কৃষিজীবী মানুষের শেষ সম্বল গৃহপালিত এই পশুগুলো বিক্রি করে আগামীতে জমি চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। বন্যাদুর্গতরা জানান, না খাওয়া উপোষ গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও হাঁস মুরগি ক্ষুধার জ্বালায় হাঁক ডাক দিচ্ছে। কিন্তু না আছে ঘাস। আর না আছে খড় কিংবা কুড়া। হাকালুকি হাওর পাড়ের মীরশংক, গৌরি শংকর, মদন গৌরি গ্রামের কৃষক সাবিত, সালাম, আকুল ও কালাম মিয়া জানান, গবাদিপশু নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। বাড়ির আশপাশে গুরু মহিষ রাখার মতো কোনো জায়গাও নেই। তাই আশপাশ এলাকায় যাদের আত্মীয়স্বজন বন্যাকবলিত নয়। ওদের বাড়িতে অথবা চা বাগান এলাকায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর অনেকেই নিজ এলাকার উঁচু স্থানে অথবা আশ্রয়কেন্দ্রে গাদাগাদি করে গরু, ছাগল ও মহিষগুলো রেখেছেন বন্দি অবস্থায়। অন্য কোথাও থেকে যে খড় কিনবো সেই টাকা পয়সাও হাতে নেই। নিজের খাবার নেই আর গো-খাদ্য কিনবো কীভাবে। ওদের আর না খাইয়ে রাখতে চাইনা। চোখের সামনে পোষা প্রাণিগুলোর এমন কষ্ট সহ্য হয় না। তাই বিক্রি করে দেবো। অন্য গৃহস্তের ঘরে গিয়ে যাতে তারা শান্তিতে থাকে। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে আশ্রয়কেন্দ্রে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও অন্যান্য ২৭৩৯টি গৃহপালিত পশু আশ্রয় নিয়েছে। জেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিনথিয়া কবির মানবজমিনকে বলেন, বন্যাকবলিত এলাকার গবাদিপশুর জন্য কীভাবে এই আপদকালীন সময়ে খাদ্য সংগ্রহ করবেন ও খাওয়াবেন সে দিকনির্দেশনার সঙ্গে পানিবাহিত নানা রোগবালাই থেকে রক্ষায় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বন্যাকবলিত গবাদিপশুগুলোর রোগবালাই থেকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ওষুধের চাহিদা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।  

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

দেনমোহর কমাতে অভিনব কৌশল/ তালাকের পর আবার বিয়ে, কিছুই জানে না গৃহবধূ

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status