নির্বাচিত কলাম
বেহুদা প্যাঁচাল
জেনে নিন কে বসবে বিরোধী দলে?
শামীমুল হক
২২ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবার১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবির আন্দোলনে আওয়ামী লীগ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল। সে সময় জনতার মঞ্চ করে দিনের পর দিন অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে গেছে তৎকালীন বিরোধী দলগুলো। সে সময় জনতার মঞ্চে যোগ দেন সরকারের সচিব, আমলাসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারাও। দীর্ঘ ২৭ বছর পর বিএনপি আবার অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এ নিয়ে তারা বৈঠক করে যাচ্ছে। কৌশল সাজাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি কোন কৌশলে অসহযোগ আন্দোলন এগিয়ে নিবে তা এখন দেখার বিষয়। একদিকে নির্বাচন, অন্যদিকে অসহযোগ। পরিস্থিতি দিন দিন ঘোলাটে হচ্ছে। এই ঘোলাটে পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কি কোনো পথ নেই? থাকবেই না কেন? শুধুমাত্র ইচ্ছাই যথেষ্ট।
নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা সবারই জানা। কে সরকার গঠন করবে তাও জানা। কে কয়টি আসন পাবে- এ নিয়েও মোটামুটি ধারণা রয়েছে জনমনে। ভোটের আগেই ফলাফল জানার এ নির্বাচনে তাই মানুষের আগ্রহ কম। তারা রাস্তা-ঘাটে, হাট-বাজারে, মাঠে-ময়দানে, হোটেল-রেস্টুরেন্টে, অলি-গলিতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। গ্রামের চা-স্টলগুলো তো এখন জমজমাট। তবে এবার সরকারি দল আওয়ামী লীগ নতুন এক সংযোজন করেছে নির্বাচনে। তাহলো ডামি প্রার্থী। অর্থাৎ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন। এমনটা করলে তাদের কাউকে বহিষ্কার করা হবে না। আরও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়েছে নির্বাচনকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ করে তুলতেই তাদের এ সিদ্ধান্ত। এ ঘোষণার পর তিনশ’ সংসদীয় আসনেই ডামি প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। যাচাই বাছাইয়ে কারও কারও মনোনয়নপত্র বাতিল হলে আপিল করে আবার বৈধ হয়ে মাঠে নামেন। প্রতীক পেয়ে তারা এখন মাঠে। একদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীর প্রচারণা এখন জমে উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে- এই ডামি প্রার্থীর কেন প্রয়োজন হলো? জাতীয় পার্টিসহ ২৮ থেকে ২৯টি দল তো নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তারা কী নির্বাচনকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ করতে পারবে না? কেউ কেউ বলছেন, মানুষ জানে দেশে দুটি দলই আছে যারা একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচন করলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। অন্যথায় নয়। এ চিন্তা থেকেই হয়তো আওয়ামী লীগ ডামি প্রার্থীর বিষয়টি সামনে এনেছে। কারণ বিএনপিসহ তাদের সমমনা জোট নির্বাচনে যাচ্ছে না। একদফার আন্দোলন নিয়ে তারা মাঠে। কিন্তু এই একদফার আন্দোলনও ২৮শে অক্টোবর পুলিশের সাউন্ড গ্রাউন্ড নিমিষেই নিঃশেষ করে দেয়। এরপর চলে গ্রেপ্তার অভিযান। যা এখনো চলছে। এ পর্যন্ত বিএনপি’র শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে গ্রামে গ্রামে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত এ অভিযানে ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে বিএনপি দাবি করেছে। অপরদিকে আগের সব পুরনো মামলায় একের পর এক বিএনপি নেতাকর্মীদের কারাদণ্ড দিতে থাকে আদালত। ইতিমধ্যে বিএনপি’র সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে বলে বিএনপি জানিয়েছে। কিন্তু এসব কেন? বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কৌশল না করে হার্ডলাইনে যাওয়ার কারণ কি? অবশ্য ইদানীং কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের একটি বক্তব্য দেশজুড়ে আলোচনা হচ্ছে।
তিনি বলেছেন, একরাতে বিএনপি’র সব নেতাকে মুক্তি দেয়ার শর্তেও তারা নির্বাচনে আসেনি। একইসঙ্গে বলেছেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করলে দেশ অচল হয়ে যেত। ভেবেচিন্তেই সব করা হয়েছে। কৃষিমন্ত্রীর কথায় এটা স্পষ্ট নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন করতেই সব করা হয়েছে। মন্ত্রীর এমন সরল স্বীকারোক্তি কী বার্তা দিচ্ছে? ইতিমধ্যে প্রচারণা শুরু হতে না হতেই দেশের বিভিন্ন নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থক ও ডামি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি, মারামারি, সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেছে। আবার বিএনপি ও তাদের সমমনাদের হরতাল অবরোধে গাড়ি পোড়ানো চলছে। গাজীপুরে ট্রেন লাইনে নাশকতার পর তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুনে চার জনের মর্মান্তিক মৃত্যু সারা দেশকে নাড়া দিয়েছে। কিন্তু এ রহস্যজনক আগুন কারা দিয়েছে তা এখনো অজানা রয়ে গেছে। ওদিকে নির্বাচনকে বয়কটের ডাক দিয়েছে বিএনপি ও সমমনারা। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে।
এবার নির্বাচনে ভোট টানার কৌশলে নেমেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। আগে যেখানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়া হতো কেন্দ্রে না যেতে। এবার ডামি প্রার্থী দেয়াই হয়েছে যেন ভোটারকে কেন্দ্রে আনা যায়। এমনকি সকল প্রার্থীকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে ভোটারকে কেন্দ্রে আনার। ইতিমধ্যে পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, সরকারের সুবিধাভোগীদের উপর জোর দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে সুবিধাভোগীদের বিভিন্ন কার্ড নিজেদের কাছে রেখে দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে- ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিলে কার্ড ফেরত দেয়া হবে। এ ছাড়া এই ডামি প্রার্থীর আইডিয়া কাজে লেগেছে বলে মনে হয়। বেশক’টি আসনে ডামি প্রার্থীর সভা-সমাবেশে হাজার হাজার মানুষের ভিড় দেখা গেছে। আড্ডায় এখন এ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। ডামি প্রার্থীদের বেশির ভাগই ঈগল প্রতীকে লড়ছেন। এ সংখ্যা ১৫১ জন। আড্ডায় উঠে আসছে এই ঈগল প্রতীকের প্রার্থীদের একটি বড় সংখ্যা যদি জয়ী হয় তারা একতাবদ্ধ হয়ে বিরোধী দলের আসনে বসতে পারে। কারণ হিসাবে তারা তুলে আনছেন তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যা। সামনে আনছেন জাতীয় পার্টিকে। সমঝোতায় জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ এই ২৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নেই। কিন্তু এসব আসনে আওয়ামী লীগের অনেক শক্ত ডামি প্রার্থী রয়েছে। যাদের কাছে হেরে যেতে পারেন জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাও। এসবই অবশ্য আন্দাজ। বাস্তবে কী ঘটে ৭ই জানুয়ারি নির্বাচনের দিন বুঝা যাবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, ডামি প্রার্থীরা জয়ী হয়ে সংসদে গিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিবে। কারণ তারা তো আওয়ামী লীগের নেতাই। ওদিকে আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর মনও ভালো নেই। তাদের চাহিদা অনুযায়ী আসন না দেয়ায় তারা ক্ষুব্ধ। আর মিত্র বলতে জাতীয় পার্টি তো এখন একেবারেই নীরব। তারা না পারছে গিলতে না পারছে ফেলতে। সব মিলিয়ে তারা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। আর কিংস পার্টিগুলোও এখন চরম বেকায়দায়। তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান লড়ছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য নূরুল ইসলাম নাহিদের বিরুদ্ধে। নাহিদ এ আসনের একাধিকবারের এমপি। বলতে গেলে এ আসনটি যেন নাহিদের জন্যই বরাদ্দ। আর মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার লড়ছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে। এ আসনের তিনবারের এমপি হলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক। গাজীর অবস্থানও এলাকায় সুদৃঢ়। সেখানে তৈমূর কতোটুকু সুবিধা করতে পারবেন আল্লাহ মালুম। ডামি প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনার তুঙ্গে মাধবপুর-চুনারুঘাট আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়্যেদুল হক সুমন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এখানে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। তবে এলাকায় আলোচনা আছে ব্যারিস্টার সুমন এগিয়ে আছেন অনেক। আবার ডামি প্রার্থীদের মধ্যে ব্রাহ্মণবড়িয়া-২ আসনের মঈন উদ্দিন মঈন আলোচনায়। এই আওয়ামী লীগ নেতা ২০১৮ সালের নির্বাচনে অল্প ভোটে হেরে যান বিএনপি প্রার্থীর কাছে। এবার এ আসনে বরাবরের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়েছে জাতীয় পার্টিকে। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থী রেজাউলের বাড়ি সদর আসনে। তিনি সদর আসন ছেড়ে কেন বারবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে লড়তে আসেন তা এক রহস্য। কারণ এ আসনের সাবেক দুই বারের এমপি জিয়াউল হক মৃধা জাতীয় পার্টির হয়ে লড়ে জয়ী হয়েছেন। এবারো জিয়াউল হক মৃধা লড়ছেন ঈগল প্রতীকে। ফলে এবারো শ্বশুর-জামাই আবার মুখোমুখি হয়েছেন। এখানে মঈদের অবস্থান অনেক ভালো। নির্বাচন নিয়ে যতই হিসাবনিকাশ করি না কেন
বিএনপি’র বয়কটের ডাক এখন সামনে এসেছে। তারা ভোটারদের কেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। এরই মধ্যে বিএনপিসহ সমমনাদলগুলো অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবির আন্দোলনে আওয়ামী লীগ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল। সে সময় জনতার মঞ্চ করে দিনের পর দিন অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে গেছে তৎকালীন বিরোধী দলগুলো। সে সময় জনতার মঞ্চে যোগ দেন সরকারের সচিব, আমলাসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারাও। দীর্ঘ ২৭ বছর পর বিএনপি আবার অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এ নিয়ে তারা বৈঠক করে যাচ্ছে। কৌশল সাজাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি কোন কৌশলে অসহযোগ আন্দোলন এগিয়ে নিবে তা এখন দেখার বিষয়।
একদিকে নির্বাচন, অন্যদিকে অসহযোগ। পরিস্থিতি দিন দিন ঘোলাটে হচ্ছে। এই ঘোলাটে পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কি কোনো পথ নেই? থাকবেই না কেন? শুধুমাত্র ইচ্ছাই যথেষ্ট। এ ইচ্ছার উপরই ভর করছে ভবিষ্যৎ। দেশের মানুষ এখন সেদিকেই তাকিয়ে আছে।
BAL 280 ; JP 5 ; Mcua Ibrahim 1 ; Independent 14
আওয়ামী স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই জয়ী হয়ে বিরোধী দলের আসনে বসবেন। কারণ আওয়ামীলীগ মাঠে আর কাউকে দেখতে চায় না। জাতীয় পার্টিকে ছাড়ও দিয়েছে, বাঁশও দিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়ে। ডামি প্রার্থী দিয়ে আওয়ামীলীগ এক ডিলে অনেক গুলো শিক্ষা দিচ্ছে নিজ দলের প্রার্থী ও জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য পার্টিকে। দলের মনোনয়ন বঞ্চিতদের মন রক্ষাও হলো। সাজানো এবং প্রতারণার নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ছাড়া আর কেউ নেই। বাকীরা সবাই ডামি।