বাংলারজমিন
ভোলার চরফ্যাশনে জোয়ারের পানিতে ২০ গ্রাম প্লাবিত, গো-খাদ্যের সংকট
চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
২৪ জুন ২০২২, শুক্রবার
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও পূর্ণিমার প্রভাবে প্লাবিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গ্রামের প্রধান সড়কগুলো প্লাবিত হওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ ছাড়া ফসলি জমি, মাছের ঘের পুকুর ডুবে গেছে। উপজেলার নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপ পূর্ণিমার প্রভাবে কোমর পানিতে ডুবে গেছে গ্রামগুলো। ঢালচর, চরপাতিলা, চরনিজাম, চরফারুকী, চরহাসিনা, চরমাদ্রাজ, জাহানপুর, মুজিবনগর, নজরুল নগর। নীলকমল, নুরাবাদ ও আহাম্মদপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে দিন-রাতে দু’বার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা পরিবারগুলো রান্না-বান্না করতে না পেরে অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তবে এখন পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষদের কোনো সহযোগিতা করা হয়নি বলে অভিযোগ জোয়ারে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল সহ বেড়িবাঁধের বাইরের এলাকার পরিবারগুলোর। নীলকমল ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন হাওলাদার জানান, বেড়িবাঁধের বাইরের কিছু নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে জেনেছি। তবে সরজমিন গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ডিভিশন-২) নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। শনিবার দুপুরের পর থেকে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এ অবস্থা আরও কিছুদিন বিরাজ করবে। এখনো এসব এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। চরমাদ্রাজ এলাকার আবদুল জলিল, লোকমান, সেলিম, কামাল, কালু সর্দার জানান, গত ৪ দিন ধরে জোয়ারের পানিতে বসতঘর ডুবে রয়েছে। শিশুসহ গবাদিপশু নিয়ে খুব বিপদে আছি। গরু, ছাগল কোনোমতে ঘরের মধ্যে বেঁধে রেখেছি। অনেকের হাঁস, মুরগি, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। দিনের তুলনায় রাতে জোয়ার বেড়ে যায়। এতে পরিবার নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। জোয়ারের পানি বেড়ে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। পানির কারণে আমরা ঘর থেকে বের হতে পারছি না।
চরকুকড়ি-মুকড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, ‘চরকুকড়ি-মুকড়ি ইউনিয়নের চরপাতিলা এলাকার ৫০০ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। দিনে-রাতে দুইবার জোয়ার আসে। ভাটায় পানি কিছুটা কমলেও জোয়ার চাপে আবার বেড়ে যায়। ইউপি সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’ ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (ডিভিশন-২) এর চরফ্যাশন উপজেলা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান জানান, বেড়িবাঁধের বাইরে নিম্নাঞ্চলে কিছুটা প্লাবিত হয়েছ। বর্তমানে একটু কমতির দিকে। এরপরও কোথাও কোনো সমস্যা আছে কি না আমরা সব সময় নজর রাখছি। চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান বলেন, সব চরাঞ্চলসহ নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোর খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।