মত-মতান্তর
পর্যালোচনা
কৃষিমন্ত্রীকে অভিনন্দন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা
শহীদুল্লাহ ফরায়জী
(১ বছর আগে) ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার, ৯:১৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৫:২৪ অপরাহ্ন

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিএনপিকে ভোটে আনতে সব চেষ্টাই করেছে আওয়ামী লীগ। এমনকি একরাতে সব নেতাকে জেল থেকে মুক্তির প্রস্তাবেও বিএনপি রাজি হয়নি। বারবার নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে আসলে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া হবে। শুধু পিছিয়ে দেয়া নয়, বলা হয়েছে, সবাইকে জেল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে। বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার না করলে বাংলাদেশে আজকে হরতালের দিন গাড়ি চলতো না। এছাড়া আমাদের অন্য কোনো গত্যন্তর ছিল না। বিকল্পও ছিল না। যেটা করেছি আমরা চিন্তাভাবনা করেই করেছি। তাদের জেলে না রাখলে দেশ অচল হয়ে যেতো।
মাননীয় কৃষি মন্ত্রীর কথায় যা স্পষ্ট হয়েছে তা হল, ২০ হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে বন্দি করে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সব চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে কোন সংলাপ বা কোন উদ্যোগ না নিয়ে তাদের ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। আমাদের সবার মনে থাকবার কথা, তফসিল ঘোষণার পূর্বে বিরোধী দলের সাথে সংলাপের জন্য অভ্যন্তরীণ এবং গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তা সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি নাকচ করা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে কী কারণে নেতাকর্মীদের জেলে রেখে গোপন আঁতাতের প্রয়োজন পড়লো তা মাননীয় মন্ত্রীর কথায় বোধগম্য নয়।
নাশকতা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত ২০ হাজার নেতাকর্মীকে এক রাতে ছেড়ে দেওয়া যায়- এতে স্পষ্ট প্রমাণ হয়, ২০ হাজার নির্দোষ নেতাকর্মীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। একমাত্র শাহজাহান ওমর ছাড়া সরকারের সাথে গোপন সমঝোতার প্রশ্নে আর কেউ রাজি না হওয়ায় কারো মুক্তি মিলেনি। মাননীয় মন্ত্রীর কথায় সরকারের সাথে সমঝোতা হলে তাদের বিরুদ্ধে আনীত সমস্ত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে এক রাতে সবাইকে মুক্ত দেয়া সম্ভব হতো। ২০ হাজার মানুষকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা এবং সমঝোতার ভিত্তিতে এক রাতে মুক্তি দেয়া এটি কোন গণতান্ত্রিক দেশে, কোন আইনের শাসনের দেশে, কোন রাজতান্ত্রিক দেশে, কোন কমিউনিস্ট শাসিত দেশে, কোন একদলীয় শাসিত স্বৈরাচারী সরকারের দেশেও সম্ভব নয়। এতে এটা প্রমাণ হয় বর্তমান বাংলাদেশ সরকার উপরোক্ত দেশসমূহের সরকারের চেয়ে একেবারে ভিন্ন। এটাকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ভাষায় নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে হবে।
মাননীয় কৃষি মন্ত্রী আরো বলেছেন, বিশ হাজার কর্মীকে গ্রেপ্তার না করলে আজকে হরতালের দিনে গাড়ি চলতো না। এ ছাড়া আমাদের বিকল্প ছিল না। যেটা করেছি চিন্তা ভাবনা করেই করেছি। তাদের জেলে না রাখলে দেশে অচল হয়ে যেত।
১৯৭১ সালে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার যদি এই সরকারের অনুরূপ বিবেচনায় রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করে পদক্ষেপ নিতো হয়ত ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠের ঐতিহাসিক ভাষণ পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হতে পারত না, ২রা মার্চের পতাকা উত্তোলন, ৩রা মার্চের ইশতেহার পাঠ সম্ভব হতো না। এমনকি জাতি রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের স্বপ্ন অধরাই থেকে যেত।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারি ইস্যুতে অতীতে আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছে, কিন্তু তখন তৎকালীন সরকার আওয়ামী লীগের ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের কথা বিবেচনা করেনি। অথচ বর্তমান সরকার রাজনৈতিক প্রশ্নের মীমাংসা বা নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে গ্রেফতার বা বল প্রয়োগের একমাত্র পথ অনুসরণ করছে, যা দেশকে গভীর রাজনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী বিভাগ নাগরিককে ইচ্ছা বা সুবিধা অনুযায়ী অভিযুক্ত করে গ্রেফতার করবে ও উদ্দেশ্য পূরণ হলে নির্বাহী বিভাগই কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে দিবে, তাহলে রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে এবং আইনের শাসন তথা রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তাই শেষ হয়ে যাবে।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা ও অবমাননার ফলে বাংলাদেশের জনগণ অত্যাচার ও উৎপীড়নের বিরুদ্ধে সর্বশেষ উপায় হিসেবে ১৯৭১ সালে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। সেই দেশে আবার গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আনুগত্যকে নিশ্চিত করে না।
সত্যের দুর্ভিক্ষে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী যে বয়ান উপস্থাপন করেছেন তার জন্য অভিনন্দন প্রাপ্য।
লেখক:
গীতিকবি ও সংবিধান বিশ্লেষক
পাঠকের মতামত
এই ব্যাপারে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন এবং সুশীল বা রাজনীতি ও গনতান্ত্রিক বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতে উদগ্রীব হয়ে আছি!
রাশিয়া ও ভারত এই খবর বিশ্লেষণ করে কিছু বলুক।
মাননীয় মন্ত্রীকে ধন্যবাদ সত্য কথা বলার জন্য।
সত্যের ডোল বাতাসে নরে কেউ মন্তব্য করি হতে পারে আর কেউ সরাসরি বলে পেলে রাজ্জাক সাহেব কে অসংখ্য ধন্যবাদ
Thanks to Shahidullah Faraizee for his valued illustration.
This is the color of 73& 74. This is them.this country freedom ,this land, every thing is only for them
বিশ্ব জানার দরকার আছে, দেশেে আজ কি হচ্ছে, বিচারের নামে কি অমানবিক ঘটনা ঘটছে
এটা এখন বাংলাদেশে হচ্ছে রাজনীতি আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ যথার্থ বলেছেন প্রিয় কবি সাহেব
লেখক/প্রতিবেদকের সাথে সহমত পোষন করছি।
অভিনন্দন, সেই সাথে ধুতুরাফুলের শুভেচ্ছা।।
@us embassy dhaka