শেষের পাতা
আনোয়ারেই ভরসা মন্ত্রীর
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৯ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবারসিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীতেই ভরসা সিলেট-১ আসনের এমপি প্রার্থী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের। মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে রাখা হয়েছে সিটি মেয়রকে। মন্ত্রীর নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বও পাচ্ছেন মেয়র। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন; সংসদ নির্বাচন হওয়ার কারণে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী নিজেই সিলেট-২ আসনের এমপি প্রার্থী। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুকউদ্দিন আহমদও সিলেট-৫ আসনে এমপি প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া গত নির্বাচনে মন্ত্রীর হয়ে মাঠে কাজ করা তাদের পারিবারিক স্বজন ড. আহমদ আল কবির সিলেট-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া মন্ত্রী পরিবারের আরেক ঘনিষ্ঠজন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল নিজ এলাকা মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। এ কারণে মন্ত্রীর কাছে এখন তেমন কোনো অপসন নেই। তিনি এবার নির্বাচনে কাছে টেনেছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। মনোনয়নপত্রে তিনি প্রস্তাবক হয়েছেন। আর সমর্থক হয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ।
নগর আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- বৃহস্পতিবার রাতে নগর আওয়ামী লীগের নেতারা জরুরি সভা করেছেন। আর ওখানে উপস্থিত ছিলেন নগরের সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও। সভায়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নগর নেতারা এবারের সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার করেছেন। এ নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায়ও বৈঠক হয়েছে। সিলেট-১ আসনে গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের সঙ্গে লড়াই করে জিতেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি দাবি করে দুপুরের পর নির্বাচন বয়কট করেছিলেন খন্দকার মুক্তাদির। এবার এ আসনে মন্ত্রী প্রার্থী হয়ে মুখোমুখি হচ্ছেন নিজ দলের আরেক নেতা এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের। মিসবাহ সিরাজ সিলেট আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
সিলেট আওয়ামী লীগের একজন অভিভাবক হিসেবে তিনি এখন পরিচিত। সিলেটে মন্ত্রী পরিবারের সঙ্গে মিসবাহ সিরাজ ও আওয়ামী লীগের একাংশের দূরত্ব সব সময়ের। এবার মিসবাহ প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের ভোটেই তিনি আঘাত করতে যাচ্ছেন। এ ছাড়া নৌকা বিরোধী ভোটও তার পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেট আওয়ামী লীগের কিছু নেতা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মিসবাহ সিরাজকে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন না। এ কারণে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পেয়েই মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে সক্রিয় হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন নিজেও। ইতিমধ্যে তিনি ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। পাশাপাশি এবার প্রার্থী হয়ে তিনি গেছেন সিলেটের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের বাসায়ও। আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে ধরে রাখতে তিনি কাজ করছেন। এক্ষেত্রে সফল হচ্ছেনও তিনি। তবে নিজ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে কখনো কখনো উন্নয়ন নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে মন্ত্রীকে। গত ৫ বছরে সিলেট উন্নয়নে অনেক পিছিয়ে ছিল। চলমান কোনো উন্নয়নই আলোর মুখ দেখেনি। এ কারণে ভোটার মহলেও আছে বিভ্রান্তি।
সিলেট আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে; মন্ত্রী তার নিজের পছন্দেই এবার নির্বাচন পরিচালনায় কাছে টানছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে একই ভাবে তিনি কাছে টেনেছিলেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে। সাবেক মেয়র নৌকার জয়ে ওই নির্বাচনে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। এবার আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও সেটি করবেন। সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠে নামা আনোয়ারুজ্জামান এখন দল এবং দলের বাইরে পরিচিত ব্যক্তি। ভোটার মহলে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এজন্য এবারের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বও পড়তে যাচ্ছে আনোয়ারের কাঁধে। সঙ্গে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাও থাকবেন। তবে মন্ত্রীর এই সমীকরণে ভেতরে ভেতরে বাষ্প তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
তাদের মতে; সিলেট আওয়ামী লীগের অনেক নেতা সেটি চাইছেন না। সবার সিদ্ধান্তে যেটি হবে সেটিকেই তারা গ্রহণ করবেন। সেজন্য মঞ্চ প্রস্তুতের দায়িত্ব নিতে হবে মন্ত্রীকে। যদি এতে ব্যত্যয় ঘটে তাহলে সিলেট আওয়ামী লীগের বড় অংশের নেতারা কৌশলে চলে যেতে পারেন স্বতন্ত্র মিসবাহ সিরাজের পক্ষে। এতে সিলেটে মন্ত্রী পরিবার হারলেও আওয়ামী লীগের হারার কোনো সম্ভাবনা নেই। মিসবাহ সিরাজও সিলেট আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা।