ঢাকা, ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

অনলাইন

সিলেটের ৬ উপজেলায় উজানের ঢলের তাণ্ডব

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

(৩ বছর আগে) ২২ জুন ২০২২, বুধবার, ১২:০৩ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৫:৫৩ অপরাহ্ন

mzamin

সিলেটের দুটি প্রধান নদী। একটি সুরমা। অপরটি কুশিয়ারা। এতোদিন ছিলো সুরমা, সারি, ধলাই, পিয়াইনের তাণ্ডব। উজানের প্রবল ঢলে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো। এবার নতুন করে কুশিয়ারা তাণ্ডব শুরু করেছে। উজান থেকে আসছে প্রবল ঢল। ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকা। এতে করে অন্তত ৭ লাখ মানুষ নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বহু এলাকায়। নেই বিদ্যুৎ সংযোগও। 

সিলেটের জকিগঞ্জ এসে বরাক কুশিয়ারা ও সুরমায় রূপ নিয়েছে। আসামের প্রবল বন্যার পানি নামছে বরাক দিয়ে। এতে করে কুশিয়ারা নদী দিয়ে গত রাত থেকে তীব্র স্রোত আসছে। জকিগঞ্জ হচ্ছে বরাকের পাদদেশের এলাকা। গতকাল রাতভর হাজার হাজার মানুষ জকিগঞ্জের কুশিয়ারা তীরবর্তী এলাকায় রাতজেগে বাঁধ পাহারা দিয়েছেন। কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে তীব্র বেগে পানি ঢুকছে। কোথা কোথাও বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে। এতে করে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জকিগঞ্জের পৌর কাউন্সিলর রিপন আহমদ জানিয়েছেন- এতো প্রবল বেগে ঢল জকিগঞ্জের মানুষ আগে কখনো দেখেননি। নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষকে সরিয়ে আনা হয়েছে। প্রায় ৪০টি আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা হচ্ছে না মানুষে। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। 

জকিগঞ্জের ভাটির এলাকা বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ। দুটি উপজেলার শতাধিক গ্রামে পানি ঢুকেছে। শ্যাওলা দিয়ে তীব্র বেগে পানি ঢুকছে। এতে করে দুটি উপজেলায় প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় কে কোথায় আছেন বলা যাচ্ছে না। অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে মানুষ। নদী ও তীরবর্তী এলাকায় ঢল অব্যাহত থাকার কারণে অনেক এলাকায় খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব নয়। গোলাগঞ্জের বুধবারী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল আহমদ জানিয়েছেন- নদী দিয়ে কয়েকটি ঘরবাড়ি ভেসে যেতে দেখেন। এখনো বুঝা যাচ্ছে না কী ঘটছে। ঢলের কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে সেনাবাহিনী দিয়ে আটকা পড়া লোকজনকে উদ্ধারের আহবান জানান তিনি। 
ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। দুই উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি। বিভিন্ন স্থানে নদী উপচে ঢুকছে বানের পানি। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বহু এলাকায়। সিলেটের সঙ্গে বালাগঞ্জের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় শামীম আহমদ জানিয়েছেন- রাত থেকে ঢল নামছে। এক রাতেই অন্তত দেড় ফুট পানি বেড়েছে। আগে থেকেই এলাকা ছিলো বন্যা কবলিত। এখন পানি বাড়ায় দুটি উপজেলার অন্তত ৯০ ভাগ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাণ্ডব চালাচ্ছে কুশিয়ারা। প্রলয়ঙ্করী রূপ নিচ্ছে। বালাগঞ্জে কুশিয়ারা ডাউক হুমকির মুখে। ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ সদরে বুক সমান পানি। 

ওসমানীনগরে প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি। সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ অবস্থা সাদিপুর, পশ্চিম পৈলনপুর, উসমানপুর, গোয়ালাবাজার, খাদিমপুর এলাকার। স্থানীয় জাকির হোসেন জানিয়েছেন- ওসমানীনগরের উপজেলার সদরের সঙ্গে প্রায় সব এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বিভিন্ন ইউনিয়নের রাস্তার উপর সাঁতার পানি। উদ্ধার কাজে নৌকাও পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষজন টিনের চালে, মাচাংয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তীব্র খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে ওসমানীনগরে। পানির কারণে হাওর এলাকার চিত্র জানা যাচ্ছে না। 

পানি উন্নয়ননের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- বরাক দিয়ে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে ওই ৬ উপজেলা। কানাইঘাট ও সিলেটের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ঢল নামার কারনে কুশিয়ারা নদীর অমলসীদ, শ্যাওলা, ফেঞ্চুগঞ্জ, শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার এক থেকে দেড় মিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভাটির এলাকা সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার কারণে পানি নামছে না।
 

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status