প্রথম পাতা
ভূমিকম্পে আতঙ্ক, কুমিল্লায় হুড়োহুড়িতে আহত ৮০ শ্রমিক
স্টাফ রিপোর্টার ও বাংলারজমিন ডেস্ক
৩ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবাররাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। কুমিল্লায় একটি গার্মেন্টস কারখানার কর্মীরা দ্রুত নিচে নামতে গিয়ে অন্তত ৮০ জন আহত হন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবনে ফাটল দেখা দেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা রবিউল হক বলেন, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। এটা বেশ ঝূঁকিপূর্ণ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, রামগঞ্জ উপজেলা থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরপূর্বে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। ভূমিকম্পের মাত্রা উৎপত্তিস্থলে ছিল ৫ দশমিক ৫।
এদিকে ভূমিকম্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের বিভিন্ন স্থানের পলেস্তারা খসে পড়েছে, তাছাড়া রিডিং রুমের জানালার গ্লাস, দোতলার বারান্দার একটি অংশও ধসে পড়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় হুড়াহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন কয়েকজন। শিক্ষার্থীরা জানান, ভূমিকম্প শুরু হলে সবাই কক্ষ থেকে বেরিয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। এর মধ্যেই হলের তৃতীয়তলা থেকে একজন শিক্ষার্থী লাফিয়ে পড়ে আহত হন। এছাড়াও কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে ২য়তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে দুই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তারা হলো- উপজেলার ঢালুয়া রহমতিয়া আলিম মাদরাসার হিফজ বিভাগের মুনতাসির ও সায়েম। আহত দুই শিশুকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ক্লিনিকে ও পরে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। অন্যদিকে ভূমিকম্পে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ছুপুয়া আমির শার্টস নামক গার্মেন্টসে আতঙ্কিত হয়ে নামতে গিয়ে অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ আহত শ্রমিকদেরকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন লিডার দিদারুল আলম।
ভূমিকম্পে কুবিতে ৫ আবাসিক হলের দেয়ালে ফাটল
কুবি প্রতিনিধি জানান, দেশের রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। সেই কম্পনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ৫ আবাসিক হলের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। গতকাল সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
সরজমিন দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু হলের ২০৯ নম্বর কক্ষের দেয়াল ও ৫০৪ নম্বর কক্ষের সামনের করিডরের মেঝের দুটি টাইলস্ উঠে গেছে। একই তলায় নতুন ও ব্লকের সংযোগস্থলের করিডরে নতুন ফাটল দেখা গেছে। পাশাপাশি দক্ষিণ ব্লকের দুই করিডরের মাঝের সংযোগস্থলে পুরো পাঁচতলাব্যাপী ফাটল ধরেছে। এ ছাড়া নজরুল হলের দোতলার ২০৭ নম্বর কক্ষের দেয়ালে, টিভি রুমের সামনের পিলারের সংযোগস্থলে নতুন ফাটল দেখা গেছে। নওয়াব চৌধুরানী ফয়জুনেজা হলের ৪ তলায় ৪০৩ রুমে এবং ৫ তলার ৫০৩, ৫১১ রুমে এবং ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও হলের পুরাতন ফাটলগুলো বড় হয়ে গেছে। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ৫০০১ রুমেও ফাটল দেখা দেয়। এ ছাড়াও নতুন নির্মিত শেখ হাসিনা হলের রিডিং রুমে ফাটল দেখা দেয়।
কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জোবায়ের আহমেদ বলেন, ভূমিকম্প শুরুর সময় আমি প্রেয়ার রুমে পড়ছিলাম হঠাৎ করে কম্পন শুরু হলে প্রথমে বুঝতে পারিনি কি হচ্ছে। তারপর যখন বুঝলাম ভূমিকম্প হচ্ছে তখন দ্রুত ফাঁকা জায়গায় চলে যাই এবং হল থেকে অনেককেই বেরিয়ে যেতে দেখি, এসময় ১৭তম আবর্তনের আকাশ নামের একজন আহত হয়।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার বলেন, পরিস্থিতি যখন শান্ত হলে দেখি হলের কয়েকটি ফ্লোরে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। ৪র্থ তলার তিনদিকে ও ৫ম তলার ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী এসএম শহিদুল হাসান বলেন, ভূমিকম্পে যে-সব ভবনে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কারণ এই ভবনগুলোর দেয়াল এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ভূমিকম্প হলে মূল কাঠামোতে সরাসরি প্রভাব পড়ার আগেই দেয়ালে প্রভাব পড়বে এবং ঝাঁকুনিটা দেয়ালেই লাগবেই। যোগাযোগের পর বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট সরজমিন ফাটলগুলো পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরে কথা বলবেন বিষয়টি দেখার জন্য।
নাঙ্গলকোটে লাফিয়ে পড়ে দুই শিক্ষার্থী আহত
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে ২য় তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে ২ মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার ঢালুয়া রহমতিয়া আলিম মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের মুনতাসির ও সায়েম নামে দুই শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। আহত মুনতাসির স্থানীয় বদরপুর গ্রামের ওলামা বাড়ির জহিরুল ইসলাম ও সায়েম শহিদুল ইসলামের ছেলে। শিশু ২টিকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ক্লিনিকে ও পরে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়।
সূত্র মতে, উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের ঢালুয়া রহমতিয়া আলিম মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির ও সায়েম মাদ্রাসা ভবনের ২ তলার বারান্দায় খেলা করছিল। ভূমিকম্প শুরু হলে শিশু দু’টি ২য় তলা থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যায়। পরে তাদেরকে মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উদ্ধার করে স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে যায়। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শিশু দু’টিকে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেয়। মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল খায়ের বলেন, মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের ২ শিশু শিক্ষার্থী ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে ২য় তলা থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে যায়। পরে মাদ্রাসা শিক্ষক শিক্ষার্থীরা তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।