শেষের পাতা
আইএমও কাউন্সিল সদস্য নির্বাচনে বাংলাদেশের জয়
কূটনৈতিক রিপোর্টার
৩ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবারইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) কাউন্সিল সদস্য পদে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। শুক্রবার লন্ডনে আন্তর্জাতিক ওই সংস্থার কাউন্সিল সদস্য নির্বাচনে ১২৮ ভোট পেয়ে ২০টি পদের মধ্যে ১৬তম স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ওই ভোটাভুটিতে ১৭৫ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৬৮ রাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি সশরীরে উপস্থিত থেকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ‘সি’ ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ১৫২ ভোট পেয়ে প্রথম হয়েছে সিঙ্গাপুর। ১৪৩ ভোট পেয়ে সম্মিলিতভাবে দ্বিতীয় হয়েছে ৩টি দেশ। তারা হলো- মাল্টা, সৌদি আরব ও তুরস্ক। তৃতীয় হয়েছে মিশর, তাদের প্রাপ্ত ভোট ১৪২। ‘সি’ ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে আইএমও এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল সদস্য পদে সর্বশেষ নির্বাচন করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই নির্বাচনে জয় আসেনি। তাছাড়া চলতি বছরের মাঝামাঝিতে অনুষ্ঠিত আইএমও’র মহাসচিব পদে প্রার্থী দিয়েছিল বাংলাদেশ। মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে দেশে দেশে ব্যাপক প্রচার প্রচারণাও চালানো হয়েছিল। কিন্তু ভোট শুরুর কয়েক মিনিট আগে ঢাকা তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়। পর পর দু’টি নির্বাচনে (এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল ও মহাসচিব পদে) বাংলাদেশের কাক্সিক্ষত ফল না আসার প্রেক্ষিতে এবারে ছিল তৃতীয় চেষ্টা, যদিও তা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। ৩৩তম অধিবেশনে আইএমও কনভেনশনের ১৬ ও ১৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ৩টি ক্যাটাগরিতে কাউন্সিলের সদস্য পদে নির্বাচন হবে। যার মধ্যদিয়ে ২০২৪-২০২৫ সালের জন্য ৪০ সদস্যের নতুন আইএমও কাউন্সিল নির্বাচিত হয়। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ১০টি পদের বিপরীতে ১১টি দেশ প্রার্থী হয়েছিল। আন্তর্জাতিক শিপিং পরিষেবা প্রদানে সর্বাধিক আগ্রহী ওই গ্রুপে লড়ছে চীন, গ্রিস, ইতালি, জাপান, লাইবেরিয়া, নরওয়ে, পানামা, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, রাশিয়ান ফেডারেশন, যুক্তরাজ্য, উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র। ক্যাটাগরি ‘বি’ অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সমুদ্রবাহিত বাণিজ্যে সর্বাধিক আগ্রহী গ্রুপে ১০টি পদের বিপরীতে ১০টি দেশ প্রার্থী হয়। ফলে এতে কোনো ভোটাভুটি হয়নি। ‘এ’ এবং ‘বি’তে নির্বাচিত নয় অথচ যাদের সামুদ্রিক পরিবহন বা নেভিগেশনে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে এবং যাদের কাউন্সিলে নির্বাচন বিশ্বের সব প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে- সে সকল দেশের প্ল্যাটফরম ‘সি’। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় সি ক্যাটাগরিতে। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিশেষায়িত সংস্থা। এটি শিপিং সুরক্ষা ও নিরাপত্তা এবং জাহাজ দ্বারা সামুদ্রিক ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ প্রতিরোধের দায়িত্ব নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করে। আইএমও’র কাজ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে সহায়তা করে। বৈশ্বিক সামুদ্রিক শিল্প ও সরকারের সকল নিয়ন্ত্রক, আর্থিক, আইনগত ও কারিগরি সহযোগিতার সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ১৭৫টি সদস্য রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত একটি মর্যাদাপূর্ণ সংস্থা আইএমও। যার হেডকোয়ার্টার লন্ডনে অবস্থিত।
বাংলাদেশের কাউন্সিল জয়ের দু’দিন আগে আইএমও’র ৩৩তম অ্যাসেম্বলির প্রথম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন বৃটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এবং আইএমওতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সাইদা মুনা তাসনিম। বাংলাদেশের ওই জয়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাইদা মুনা তাসনিম মানবজমিনকে শুক্রবার রাতে বলেন, চারদিকে অনেক নেতিবাচক খবরের মাঝখানে আইএমওতে বাংলাদেশের মর্যাদাপূর্ণ জয়টি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জয়কে বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থার প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন আইএমওতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুনা তাসনিম।