শরীর ও মন
পাইল্স রোগ হলে জটিলতা এড়াতে দেরি করে চিকিৎসা নয়
ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
২ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবারপায়ুপথ বা এনাল ক্যানালের ভেইন যখন ফুলে গিয়ে ক্ষুদ্র বলের আকার ধারণ করে তখন তাকে পাইলস বলে। সাধারণত এর বর্ণ নীল হয়ে থাকে। পাইলস রোগের ধরন অনুযায়ী বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়। পাইলস তেমন জটিল রোগ না। তবে অবহেলা, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা, হাতুড়ে চিকিৎসকদের মাধ্যমে অপচিকিৎসা করে এর জটিলতা তৈরি করা হয়।
অবস্থানগত প্রকারভেদে পাইলস তিন প্রকারের হয়। যেমন-
১. ইন্টারনাল;
২. এক্সটারনাল;
৩. ইন্টারোএক্সটারনাল।
ইন্টারনাল পাইলস: পাইলসের লক্ষণগত প্রকারভেদও আছে।
১. কিছু অসুখের কারণে পাইলস। যেমন-
ক. রেকটাল ক্যান্সার;
খ. গর্ভবতী মহিলা;
গ. মূত্রনালী মহিলা;
ঘ. ক্রনিক কষা পায়খানা।
২. কারণবিহীন পাইলস, কোনো কারণ ছাড়াই পাইলস।
কারণসমূহ
১. জন্মগত বা বংশগত: একই পরিবারের একাধিক সদস্যের মধ্যে দেখা যায় যাদের ভেইনের ওয়ালের দুর্বলতা থাকে বা অসাধারণ শিরা সংযুক্ত থাকে।
২. আকৃতিগত: যেমন ভেইনে কোনো ভাল্ভ থাকে না। ফলে রেকটামের ভেইনের ওপর প্রচুর চাপ থাকে।
৩.এনাটমিক্যাল:এনোরেকটাম ভেইনের ভেতর রক্ত চলাচলে বাধা তৈরি হয়। সাবমিউকাস স্তরের টিস্যুর চাপ কম। চাপ দেয় তখন ভেইনের রক্ত বাধাগ্রস্ত হয়।
ফলে ভেইন ফুলে গিয়ে পাইলস তৈরি করে।
৪. ডায়রিয়া হলে পাইলস হয়।
৫. ক্রনিক কষা পায়খানা থাকলে পাইলস হয়।
৬. যারা অতিমাত্রায় পায়খানা হওয়ার ওষুধ সেবন করে তাদের পাইলস হয়।
প্যাথলজি: ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে মিল রেখে পাইলসের অবস্থান নির্ণয় করা হয়।
যেমন- ৩, ৭ ও ১১০ পজিশন।
লক্ষণ
১. রক্তক্ষরণ;
২. মিউকাস ক্ষরণ;
৩. প্রোলাপস;
৪. ব্যথা;
৫. রক্তশূন্যতা।
পরীক্ষা
১. প্রোকটোসকোপ;
২. সিগময়ডোসকোপ;
৩. ডিজিটাল রেকটাল পরীক্ষা-গ্লাভস পরে তর্জনি আঙুল দিয়ে রেকটাম পরীক্ষা।
জটিলতা
১. পচন;
২. ঘা;
৩. থ্রোম্বাস;
৪. পুঁজ;
৫. ইনফেকশান থেকে লিভার এবসেস হয়।
একাধিক চিকিৎসাসমূহ
১. যে লক্ষণ থাকে তার চিকিৎসা প্রদান;
২. ইনজেকশন;
৩. ব্যানডিং;
৪. সার্জারি;
৫. লঙ্গো বা কাটাবিহীন সার্জারি।
জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসা
১. থ্রোম্বাস, গ্যাংগ্রিন, স্ট্রাংগুলেশান;
ক. পূর্ণ বিশ্রাম;
খ. ব্যথামুক্তির ওষুধ;
গ. গরম পানির সেঁক;
ঘ. হিপ বাথ।
এই চার পদ্ধতি প্রয়োগে উন্নতি হবে। তখন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রয়োগ করতে হবে। অনেক সময় ১ মাস বা আরও পরে সার্জারি করা প্রয়োজন।
২. রক্তক্ষরণের চিকিৎসা
পাইলসের ওপর এড্রিনালিন গজ দিয়ে চাপ দিতে হবে। রক্তশূন্যতা দেখা দিলে রক্ত দিতে হবে।
৩. লিভার এবসেস: পাইলসের ইনফেকশন হলে বা পুঁজ তৈরি হলে তা পোর্টাল ভেইন দিয়ে লিভারে যায়। লিভারে ইনফেকশন তৈরি হয়। শুরুতে ভালো অ্যান্টিবায়োটিক দিলে তা আর লিভারে অগ্রসর হবে না। ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে। অসুখ ধরতে না পারলে এই লিভার ইনফেকশন থেকে লিভার এবসেস হবে। তখন লিভারে সার্জারি লাগবে। ভালো চিকিৎসা প্রয়োগ করলে তা নিরাময় হয়ে যায়। আর ভালো চিকিৎসা না হলে সেখান থেকে নানাবিধ জটিলতা দেখা দেয়। এমনকি মৃত্যুরও কারণ হতে পারে।
এক্সটারনাল পাইলস: পায়ুমুখে এই রোগের অবস্থান। এখানে যে চামড়া থাকে তার ভেতরে এই পাইলস অবস্থান করে।
কাদের হয়: যারা শারীরিক পরিশ্রম করে, যেমন-ভারী ওজন উত্তোলন করে তাদের ওই স্থানে হঠাৎ করে রক্ত বাঁধে, যা খুবই বেদনাদায়ক।
পরিণতি কী হয়
১. মিলে যায়;
২. ইনফেকশন হয়;
৩. পুঁজ হয়;
৪. ফেটে যায়;
৫. রক্তক্ষরণ হয়।
এক্সটারনাল পাইলস যখন তৈরি হয় রক্ত জমাটবাঁধা থেকে তখন সেখানে যে ব্যথা তৈরি হয় তা ৪-৫ দিনে ভালো হয়ে যায়।
চিকিৎসা: স্বাভাবিক নিয়মে ভালো না হলে সার্জারি করতে হবে। অবস্থানগত দিকের কারণে চিকিৎসায় তারতম্য ঘটে। কোথায় এর অবস্থান তা নির্ণয় করতে হবে। রোগ ভুল নির্ণয় হয়ে সার্জারি করলে সেখান থেকে এনাল ফিশার দেখা দেয়। পায়ুপথের মুখের চামড়া ঝুলে থাকে। যার নাম এক্সটারনাল হেমোরয়েড। এটা তেমন ক্ষতিকারক কিছু না। দীর্ঘদিন ধরে থাকে। কখনো কোনো সমস্যা তৈরি করে না। তবে মাঝে মাঝে সমস্যা তৈরি হয়। যদি কখনো ওই বর্ধিত মাংসে ইনফেকশন হয় তবে সেখান থেকে তা ফুলে গিয়ে এবসেস তৈরি করে। যা খুবই বেদনাদায়ক, মল ত্যাগ করতে গেলে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, বসতে পারে না। কোথাও কোনো শক্ত জিনিসের ওপর বসলে ভীষণ ব্যথা হয় বিধায় এক পায়ের ওপর ভর করে বসে। এটা অনেক ক্ষেত্রে ফেটে গেলে পুঁজ নির্গত হয়। তাতে ব্যথা কমে যায় কিন্তু ফিস্টুলা তৈরি হয় যা খুবই ক্ষতিকারক। ক্ষেত্র বিশেষে এই রোগ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে হতে পারে। অনেক সময় লোকাল এনেস্থেসিয়া দিয়েও অপারেশন করা যায় যা অসুখকে সম্পূর্ণরূপে ভালো করে দেয়। তবে অতি অল্পসংখ্যক রোগীর এই অসুখ ভালো হয়ে যাওয়ার পর এনাল ফিশার হতে পারে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ) কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বার: ১৯ গ্রিন রোড, এ. কে. কমপ্লেক্স, লিফট-৪, ঢাকা।
ফোন-০১৭১২৯৬৫০০৯