শরীর ও মন
৫০ বছরের রহস্যের পর নতুন রক্তের গ্রুপ শনাক্ত করলেন গবেষকরা
মানবজমিন ডিজিটাল
(১ সপ্তাহ আগে) ১৪ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

১৯৭২ সালে যখন একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, তখন চিকিৎসকরা আবিষ্কার করেন অন্যান্য সমস্ত পরিচিত লোহিত রক্তকণিকায় পাওয়া অণু ওই নারীর রক্তে অনুপস্থিত। ৫০ বছর পর এই অদ্ভুত আণবিক অনুপস্থিতি অবশেষে যুক্তরাজ্য এবং ইসরায়েলের গবেষকদের মানুষের রক্তের গ্রুপের একটি নতুন গ্রুপ শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
২০২৪ সালে গবেষক দলটি এই আবিষ্কারের উপর তাদের গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার হেমাটোলজিস্ট লুইস টিলি জানিয়েছিলে, চিকিৎসাশাস্ত্রে এটি একটি বিশাল অর্জন এবং দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফল।
অবশেষে এই নতুন রক্তের গ্রুপ আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ রোগীদের সর্বোত্তম যত্ন প্রদান করতে সহায়তা করবে।
প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন টিলি। তিনি এবং তার টিম ১৯৭২ সালে আবিষ্কৃত ‘AnWj’ রক্তের গ্রুপ অ্যান্টিজেনের জেনেটিক পটভূমি শনাক্ত করেছেন। হেমাটোলজিস্ট লুইস টিলির কথায়, ‘যদিও আমরা সকলেই ABO রক্তের গ্রুপ সিস্টেম এবং Rh ফ্যাক্টর সম্পর্কে বেশি পরিচিত, মানুষের আসলে অনেকগুলো ভিন্ন রক্তের গ্রুপ সিস্টেম রয়েছে যা কোষ-পৃষ্ঠের প্রোটিন এবং শর্করার বিস্তৃত বৈচিত্র্যের উপর ভিত্তি করে আমাদের রক্তকণিকাকে আবৃত করে।’
টিলি বলেন, ‘এই আবিষ্কারের ফলে শুধু থ্যালাসিমিয়া বা রক্তের ক্যানসারে ভোগা রোগীরা নন, বিরল অসুখে ভোগা রোগীদেরও আরও ভালো চিকিৎসা পরিষেবা দেয়া যাবে। এই আবিষ্কার রক্তদান প্রক্রিয়াকে আরও নির্ভুল ও নিরাপদ করে তুলবে।’
বেশিরভাগ প্রধান রক্তের গ্রুপ বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে শনাক্ত করা হয়েছিল। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৯৯.৯ শতাংশেরও বেশি মানুষের রক্তে AnWj অ্যান্টিজেন রয়েছে যা ১৯৭২ সালের রোগীর রক্তে অনুপস্থিত ছিল। এই অ্যান্টিজেনটি মাইলিন এবং লিম্ফোসাইট প্রোটিনের উপর নির্ভর করে, যার ফলে গবেষকরা নতুন বর্ণিত সিস্টেমটিকে MAL রক্তের গ্রুপ বলে অভিহিত করেছেন।
ওয়েস্ট অফ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষ জীববিজ্ঞানী টিম স্যাচওয়েল বলছেন, ‘MAL হলো একটি খুব ছোট প্রোটিন যার কিছু আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর জন্য এটি শনাক্ত করা কঠিন। এর অর্থ হলো এই রক্তের গ্রুপ সিস্টেম প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে আমাদের একাধিক গবেষণার পথ অনুসরণ করতে হবে।’
কয়েক দশক ধরে গবেষণার পর সঠিক জিনটি নির্ধারণ করার জন্য দলটি AnWj-নেগেটিভ রক্তকণিকায় স্বাভাবিক MAL জিনটি প্রবেশ করায়। এটি কার্যকরভাবে সেই কোষগুলোতে AnWj অ্যান্টিজেন সরবরাহ করে। MAL প্রোটিন কোষের ঝিল্লি স্থিতিশীল রাখতে এবং কোষ পরিবহনে সহায়তা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে জানা যায়।
তাছাড়া পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে, AnWj আসলে নবজাতক শিশুদের মধ্যে উপস্থিত থাকে না তবে জন্মের পরপরই দেখা দেয়। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত সকল AnWj-নেগেটিভ রোগীর একই মিউটেশন ছিল। এখন যেহেতু গবেষকরা MAL মিউটেশনের পিছনে জেনেটিক মার্কারগুলো শনাক্ত করেছেন, রোগীদের পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে যে, তাদের নেতিবাচক MAL রক্তের গ্রুপটি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত নাকি অন্য কোনও অন্তর্নিহিত চিকিৎসা সমস্যার লক্ষণ।এই বিরল রক্তের বিষয়গুলো রোগীদের উপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে, তাই আমরা যত বেশি তাদের বুঝতে পারব, তত বেশি রোগীদের জীবন বাঁচানো যাবে। এই গবেষণাটি ‘ব্লাড’ নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র : সায়েন্স এলার্ট