শেষের পাতা
ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে যুবদল নেতাকে
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে
২৯ নভেম্বর ২০২৩, বুধবারকারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে যশোর যুবদল নেতা আমিনুর রহমান মধুকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে হাসপাতালে। এ ছাড়া তার পরিপূর্ণ চিকিৎসায় বাধা দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আমিনুর রহমান মধু যশোর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি। তিনি সদর উপজেলার আমদাবাদ ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক। মধু একই সংগঠনের যশোর জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট যশোর জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক।
গত ২রা নভেম্বর কলেজ থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ অবস্থায় ১২ই নভেম্বর মধু হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কারাগার থেকে তার দুই পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি ও হাতকড়া লাগিয়ে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই রাতেই তাকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন ১৩ই নভেম্বর কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। দুই পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে ও ডান হাতে হাতকড়া লাগানো অস্থায় হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে। আবার হাতে একগুচ্ছ দড়িও প্যাঁচানো ছিল। তার শরীরে ডাণ্ডাবেড়ি এবং হাতকড়া এমনভাবে লাগানো যাতে সামান্য নড়েচড়ে বসারও কোনো সুযোগ নেই। তার বাম হাতে ক্যানোলা লাগানো।
এ বিষয়ে বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের হাতে আইনের শাসন ও মানবাধিকার কতোটুকু পর্যদুস্ত হতে পারে, আমিনুর রহমান মধুকে জামিন না দেয়া ও চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার ঘটনা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইবাদত আলী খান বলেন, বাংলাদেশে আইন কাগজ-কলমে আছে, বাস্তবে নেই। মধু যে রোগে অসুস্থ তাতে যেকোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তার ওপর একজন শিক্ষককে এমন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে রাখা দেশ ও জাতির জন্য খুবই লজ্জাজনক। তার স্ত্রী-সন্তান অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, বিষয়টা খুবই আমনবিক। একজন হৃদরোগ আক্রান্ত ব্যক্তিকে এভাবে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে রেখে চিকিৎসা দেয়া মোটেও সমীচীন নয়। আইন-আদালত মানুষের কল্যাণের জন্যে, অকল্যাণের জন্যে নয়। মধুর স্ত্রী নাহিদা সুলতানা লাবনী বলেন, পরিবারের অভিভাবক গুরুতর অসুস্থ হয়ে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমি আমার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন। এমতাবস্থায় তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। তার ওপর কতো অমানবিকভাবে দুই পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি ও হাতে হাতকড়া পরিয়ে রেখেছে।