শেষের পাতা
পশ্চিমা চাপ মোকাবিলায় ভারতের সাহায্য
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, দিল্লি ইতিবাচক
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২১ জুন ২০২২, মঙ্গলবারইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে পশ্চিমা চাপ এড়াতে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ। নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকে ঢাকার তরফে আনুষ্ঠানিক এ আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে প্রত্যাশা করা হয় দুর্দিনের পরীক্ষিত বন্ধু দিল্লি অবশ্যই এ বিষয়ে ঢাকাকে বুদ্ধি-পরামর্শ তথা কৌশল শিখিয়ে দেবে। উল্লেখ্য, এর আগে গত মাসে ভারতের আসামে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন আসামের বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পশ্চিমা বাধা সত্ত্বেও ভারত যেভাবে জ্বালানি সমস্যা সামাল দিয়েছে অর্থাৎ রাশিয়া থেকে তেল কিনেছে, বাংলাদেশও সেটাই করতে চায়। কিন্তু ভয় হচ্ছে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা। ভারতের কাছে বাংলাদেশ জানতে চেয়েছে তারা কীভাবে ওই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও গম কীভাবে কিনেছে? জেসিসি বৈঠকেও ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর পশ্চিমা চাপের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে গতকাল বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী মোমেন বলেন, যুদ্ধকে ঘিরে সৃষ্ট আঞ্চলিক অস্থিরতাসহ অন্য প্রভাব নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। আঞ্চলিকভাবে আমরা স্থিতিশীলতা কীভাবে অর্জন করতে পারি, তা নিয়ে আলাপ করেছি। বাংলাদেশ শান্তির পক্ষে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এক কর্মকর্তা বলেন, দিল্লির প্রতিনিধিরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নোটে নিয়েছেন। তবে তারা তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। হয়তো বরাবরের মতো নীরবেই বাংলাদেশকে সহায়তা করবেন। জেসিসি বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। আর ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ইউক্রেন সংকট শুরুর পর ভারত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে পড়ে। ভারতকে পক্ষে নিতে রীতিমতো চাপ দেয়া হয়। একই চাপ বাংলাদেশের ওপরও রয়েছে। তবে ভারত চাপ সামলে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে। বাংলাদেশও একইভাবে রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়। এ কারণে বুদ্ধি, পরামর্শসহ বন্ধু হিসেবে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ।
বন্যার আগাম তথ্য শেয়ারে জোর: এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে জানান, বাংলাদেশ ও ভারত বন্যা ব্যবস্থাপনার আগাম এবং বিস্তৃত তথ্য বিনিময়ে সম্মত হয়েছে। বন্যা ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনার সুনির্দিষ্ট কোনো পথ থাকলে তাতেও সহযোগিতা করতে রাজি ভারত। উল্লেখ্য, জেসিসি বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তব্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণে ভারতের তরফে সব রকম সহযোগিতার প্রস্তাব করেন। জানান, বাংলাদেশে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ কার্যেও সহায়তা দিতে চায় ভারত। দুই দেশের সম্পর্ককে বিবেচনায় নিয়ে এ ক্ষেত্রে যেকোনো কার্যকর পদক্ষেপকে ভারত সমর্থন দেবে বলে জানান দিল্লির বিদেশমন্ত্রী। রোববার নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) ৭ম বৈঠক হয়। এতে ভারতের বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর এই আগ্রহের কথা জানান। দিল্লির বিদেশ মন্ত্রক প্রচারিত তথ্য মতে, জেসিসি বৈঠকের সূচনা বক্তব্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অভাবনীয় বন্যা পরিস্থিতিতে আমরা সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করছি। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতও একই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে।
বৈঠকের পর দেয়া যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিন্ন নদী ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, তথ্যপ্রযুক্তি ও সাইবার নিরাপত্তা, পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা আরও গভীর ও শক্তিশালী করতে দুই মন্ত্রী সম্মত হয়েছেন। করোনা মহামারির চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দুই দেশ নিরাপত্তা ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, পরস্পরের জন্য লাভজনক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক মাল্টিমডেল কানেক্টিভিটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সহযোগিতা, উন্নয়ন সহযোগিতা, সংস্কৃতি ও জনগণের মাঝে সম্পৃক্ততাসহ সবক্ষেত্রে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী অষ্টম জেসিসি বৈঠক আগামী বছর বাংলাদেশে আয়োজনের ব্যাপারে সম্মত হন।