খেলা
‘ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট’ বিরাট কোহলি
আতিকুল ইসলাম
২০ নভেম্বর ২০২৩, সোমবার
বিরাট কোহলি যেন ২০১৪ ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপের লিওনেল মেসি। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দুঃখ নিয়ে ভেজা চোখে আসর সেরার পুরস্কার নিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক মেসি। এবার সেই স্মৃতি ফিরলো যেন আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ২০২৩ আইসিসি ওয়ার্ল্ডকাপের ‘ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট’ হলেন রানার্সআপ ভারতের বিরাট কোহলি। বিশ্বকাপজুড়ে নান্দনিক পারফরম্যান্স উপহার দেন বিরাট কোহলি। রাউন্ড রবিন লীগ, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল মিলিয়ে ১১ ম্যাচে ৫৪.২৭ এবং ৯০.৩১ স্ট্রাইকরেটে ৭৬৫ রান করেন তিনি। যা আসরের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। বিশ্বকাপের ফাইনালে ৬৩ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন কোহলি। এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড ও প্রথম ব্যাটার হিসেবে এক আসরে ৭০০ রান ছোঁয়ার কীর্তি আগেই গড়েছিলেন বিরাট কোহলি। ফাইনালে ফিফটি করে নিজের রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করলেন তিনি। এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ফিফটি ছোঁয়া ইনিংসের রেকর্ডও তিনি গড়েছেন আগেই। ফাইনালের ফিফটিতে সেটিও বাড়িয়ে নিলেন। ১১ ইনিংসের ৯টিতেই তিনি পৌঁছেছেন পঞ্চাশে। এর মধ্যে ৩টিকে রূপ দিয়েছেন সেঞ্চুরিতে। সেই ৩ সেঞ্চুরির একটি করেছিলেন সেমিফাইনালে। যে সেঞ্চুরিতে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন শচীন টেন্ডুলকারকে। ওয়ানডে ক্রিকেটে কোহলির সেঞ্চুরি এখন ৫০, শচীনের ৪৯। কোহলি ফিফটি করলেন ফাইনালে। আর কোনো ভারতীয় ব্যাটার বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনালে টানা দুই ইনিংসে পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি। ২০০৩ বিশ্বকাপে শচীন টেন্ডুলকার করেন ৬৭৩ রান। সেই রেকর্ড পেছনে ফেললেও শচীনের বাউন্ডারির রেকর্ড ছুঁতে পারেননি কোহলি। ওই আসরে সবচেয়ে বেশি ৭৫টি বাউন্ডারি মেরেছিলেন টেন্ডুলকার, এক বিশ্বকাপে যা রেকর্ড। পরে ২০০৭ আসরে ৬৫৯ রানের পথে ৬৯টি চার মেরেছিলেন ম্যাথু হেইডেন। এবার কোহলি থামলেন ৬৮ বাউন্ডারিতে। ফাইনালে এদিন কোহলির শুরুটা হয়েছিল দারুণ কয়েকটি বাউন্ডারি মেরে। মিচেল স্টার্কের ওভারে উড়িয়ে মেরে একটি বাউন্ডারির পর ওই ওভারেই টানা দুটি বাউন্ডারি মারেন দৃষ্টিনন্দন দুটি শটে। পরে আরেকটি চার মারেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে কাট শটে। এরপরই রোহিত শর্মা ও শ্রেয়াস আইয়ার অল্প সময়ের মধ্যে বিদায় নিলে সাবধানী হয়ে যান কোহলি। ঝুঁকির পথ পরিহার করেন। তবে খোলসে ঢুকে যাননি। এক-দুই করে নিয়ে ইনিংস গড়তে থাকেন। ফিফটিতে পা রাখেন ৫৬ বলে। একটু পরই কামিন্সের সেই ডেলিভারি। শর্ট অব লেংথ থেকে বলকে অনেকটা লাফিয়ে তোলেন কামিন্স। মন্থর উইকেটে কিছুটা থমকে আসে বল। কোহলি শরীর থেকে একটু দূরে ব্যাট পেতে দেন। ব্যাটের কানায় লেগে বল ছোবল দেয় স্টাম্পে। হতাশায় কয়েক মুহূর্ত ক্রিজেই দাঁড়িয়ে থাকেন কোহলি। করতে পারলেন না প্রথম ব্যাটার হিসেবে এক বিশ্বকাপে ৮০০ রানের কীর্তি। প্রথম ভারতীয় হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি করার সুযোগটা হাতছাড়া হলো এতে। ফাইনালে সেঞ্চুরি করতে পারলে শচীন টেন্ডুলকারের একটি রেকর্ডও স্পর্শ করতে পারতেন কোহলি। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে শচীনের সেঞ্চুরি ৬টি। কোহলি ৫টিতে থামলেন বিশ্বকাপে। শেষটা হয়তো তার প্রত্যাশা মতো হলো না। তবে এই বিশ্বকাপে যা করলেন তিনি, রেকর্ড-অর্জন-কীর্তি ভরা তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে দ্যুতিময় প্রাপ্তিগুলোর মধ্যেই থাকবে তা।