বাংলারজমিন
কয়রায় কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনে পরীক্ষার্থীদের থেকে চাঁদা আদায়
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
২০ নভেম্বর ২০২৩, সোমবারখুলনার কয়রা উপজেলায় একটি পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে মৌখিক পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাইয়ে দিতে দুই দফা টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। কয়রা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, মৌখিক পরীক্ষায় ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত বহিরাগত ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষকদের খুশি করতে দেয়ার কথা বলে পরীক্ষার্থীদের থেকে এ টাকা নেয়া হয়। পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক বাবুল আক্তার ও মো. ওলিউল্লাহ কামিল পরীক্ষার্থীদের থেকে মাথাপিছু তিনশ’ করে টাকা নিচ্ছেন। টাকা না দিলে তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বাধা দেয়া হচ্ছে। একপর্যায়ে পরীক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক গোপাল চন্দ্র, অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম ও কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল মালেকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর পুলিশ এসে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মোহসিন হোসেন এসে টাকা নেয়া বন্ধ করেন। তবে তিনি চলে যাওয়ার পরে ফের টাকা নেয়া শুরু হয়।
জানা যায়, পরীক্ষা চলাকালীন কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মাসুদুর রহমানের নির্দেশে অফিস সহকারী কামরুল ইসলাম অ্যাসাইনমেন্টের খাতায় স্বাক্ষর ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য জনপ্রতি পাঁচশ’ করে টাকা নেন। কামিল পরীক্ষার্থী আরাফাত ও একরামুল বলেন, আমরা কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। আমাদের মাদ্রাসা থেকে কোনো প্রবেশপত্র দেয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পরীক্ষার্থী বলেন, মৌখিক পরীক্ষা ও অ্যাসাইনমেন্টের খাতা বাবদ অবৈধভাবে দুই দফায় আমাদের থেকে আটশ’ টাকা নিয়েছে। আমরা ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে পারিনি। নীরবে সব মেনে নিয়েছি।
ঝিনাইদহ সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. রুহুল কুদ্দুস ও খুলনা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মো. গোলাম মোস্তফা মৌখিক পরীক্ষায় ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত বহিরাগত পরীক্ষক ছিলেন।কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান বলেন, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষা পরিচালনা করছি। প্রবেশপত্র বাবদ টাকা নিয়ে পরীক্ষার যাবতীয় খরচ মেটানো হচ্ছে। মৌখিক পরীক্ষায় বহিরাগত পরীক্ষকদের কিছু দেয়ার জন্য মাদ্রাসা থেকে বলা হয়। না দিলে নাকি ভালো নম্বর দেন না। এ জন্য মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাসুদ পরীক্ষা চলাকালীন টাকা তুলেছিল। তবে সেই টাকা থেকে মৌখিক পরীক্ষার খরচ দেয়ার কথা থাকলেও এক টাকাও দেননি। অবশেষে বাধ্য হয়ে খরচ মেটাতে তিনশ’ টাকা করে উত্তোলনের চেষ্টা করি। তবে বিশৃঙ্খলা হলে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দিই। আর যাদের থেকে নেয়া হয়েছিল তাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে আমার ঢোকা নিষেধ। কী হচ্ছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানতে পারছি না। ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক যোগসাজশে অনিয়ম করছেন। আমাকে বাদ দিয়ে বাইরের লোক দিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন কন্ট্রোলার। প্রবেশপত্র বিতরণের ক্ষমতাও আমাদের দেয়া হয়নি। কয়রা কলেজের অধ্যক্ষকে দিয়ে প্রবেশপত্র বিতরণ করানো হয়। সব বিষয় নিয়ে ভিসির কাছে লিখিত অভিযোগ করবো।
মন্তব্য করুন
বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]