ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

মত-মতান্তর

শ্র দ্ধা ঞ্জ লি

আসাদ চৌধুরী আমাদের ভালোবাসা

আমীরুল ইসলাম
৬ অক্টোবর ২০২৩, শুক্রবার
mzamin

কবি আসাদ চৌধুরী আমাদের অতি প্রিয় কবি। আমাদের অভিভাবক। আমাদের সাহিত্যের প্রদর্শক। অপরিসীম ভালোবাসার এক মানুষ। তরুণ নবীন থেকে শুরু করে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গ পর্যন্ত আসাদ চৌধুরীকে গাঢ়ভাবে ভালোবাসেন। ‘মাই ডিয়ার’ শব্দটির বাংলা জানি না। কবি আসাদ চৌধুরী মধুর ও আনন্দময় এক ব্যক্তি। ‘মাই ডিয়ার’ তার জন্য প্রযুক্ত। 

আমার লেখালেখির সমান বয়স থেকে আমি কবি আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে আছি। পুরো দেশ তার সঙ্গে আছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের নবীন প্রবীণ লেখককুলের সঙ্গে তার বন্ধুতা। তার বিশাল ও উদার হৃদয়ের দরোজায় সবার প্রবেশাধিকার সমান।  

মিতভাষী, সজ্জন, হৃদয়বান, ছান্দসিক কবি আসাদ চৌধুরীর মতো কেউ নেই দুই বাংলায়। 
আসাদ চৌধুরীর কবিতায় আছে নতুন সুর। হৃদয়শালী আন্তরিক গীতিধর্মী তার কবিতা। লিরিকের সঙ্গে আধুনিকতার মিশ্রণ। ছন্দ উপলব্ধির সঙ্গে ছন্দহীনতার দ্রবন তিনি কবিতার শরীরে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তার কবিতায় আমরা মুগ্ধ পাঠক। দেশ, দেশের ঐতিহ্য, লোকায়ত জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, প্রেম, সহজিয়া ভাব এসবই তার কবিতার উজ্জ্বলতা। আধুনিকতার নামে অকারণ দুর্বোধ্যতা তিনি এড়িয়ে চলেন। কবিতার প্রথম শর্ত হৃদয় সংবেদ। আসাদ চৌধুরীর কবিতা তার উজ্জ্বল উদাহরণ। 

কবি আসাদ চৌধুরীকে চির প্রণাম। আসাদ ভাইয়ের মধুর ব্যক্তিত্বের সুগন্ধি উপলব্ধি করার জন্য বারবার তার সঙ্গসুধা পান করেছি। আসাদ ভাইয়ের সীমাহীন গুণপনা। তাকে নিয়ে কোনো লেখারই সমাপ্তি নেই। তিনি এক অশেষ কবিতার মধুর শেষ হবে না কখনো। 
নিচে কয়েকটি টীকা ভাষ্য দিয়ে কবি আসাদ চৌধুরীকে আমার ব্যক্তিগত বিবেচনা করতে পারি কিনা তা দেখা যাক।
১. আসাদ চৌধুরী সদা হাস্যময় মধুমাখা এক ব্যক্তি।
২. আসাদ চৌধুরীর কণ্ঠস্বর ঐন্দ্রজালিক। তিনি দেশবরেণ্য আবৃত্তি শিল্পী। বাংলাদেশের আবৃত্তি চর্চার ইতিহাসে তিনি অগ্রগণ্য পুরুষ। 
৩. বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, চ্যানেল  আই কিংবা বাংলা একাডেমি বা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ যেকোনো অনুষ্ঠানের তিনি সফল উপস্থাপক।  শিল্প-সাহিত্যের উপস্থাপক হিসেবে তিনি খ্যাতিমান। 
৪. আসাদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে আমরা কখনো প্যান্ট শার্ট স্যুটেড, বুটেড অবস্থায় দেখিনি। পায়জামা পাঞ্জাবি তার প্রিয় পরিধান। শীতে কাঁধে ঝোলানো উত্তরীয় বা চাদর। 
৫. বাংলাদেশের ভূগোল তিনি খুব ভালোভাবে জানেন। পুরো দেশটা তিনি অনেকবার চষে বেড়িয়েছেন। জেলা-উপজেলা এমন কী সুদূর গ্রাম, বাংলা নদী তার সকলখানে কবি আসাদ চৌধুরীর পদাস্পর্শ পড়েছে। 
৬. কবি আসাদ চৌধুরীর পূর্বপুরুষ জমিদার বংশ। চৌধুরী পরিবারের সম্মানিত সদস্য তিনি। 
৭. অতি বিনয় ও আচার ব্যবহারের কোমলতা কবি আসাদ চৌধুরীকে করেছে জনপ্রিয়। 
৮. বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ। বাংলা ভাষার সেরা ব্যক্তিরা তার শিক্ষক। তিনি নিজেও শিক্ষকতা করেছেন। কিন্তু তার চরিত্রে কোনো ‘ভড়ং’ নেই।
৯. কবি আসাদ চৌধুরীর কবিতা সরল ও লোক সংস্কৃতির গন্ধ মাখা। তার কবিতার বইয়ের নাম সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। ভিন্নসুর, ভিন্নস্বর। 
১০. বিদেশ ভ্রমণ তার প্রিয় শখ। বছরের অনেকটা সময় তিনি দেশের বাইরে পরিযায়ী পাখির মতো উড়ে বেড়ান। 
১১. কবি আসাদ চৌধুরী খুব অভিযানপ্রিয়। নানা ধরনের পেশায় আবর্তিত রয়েছে তার জীবন। কখনো শিক্ষকতা, কখনো বাংলা একাডেমির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কখনো জার্মান বেতারের বাংলা বিভাগের কর্মকর্তা, কখনো রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী, কখনো সম্পূর্ণ বেকার।
১২. স্বল্পাহারী ব্যক্তি। যা খাবেন তার ভেতরেই মাধুর্য খুঁজে পাবেন। তার জিহ্বায় স্বাদ গ্রহণের তীব্র ক্ষমতা, যদিও নিরন্তর ‘পান’ চিবুতে পছন্দ করেন। 
১৩. কোনো লবি নিয়োগ করে কখনো পুরস্কার ও সম্মাননা গ্রহণ করেননি। ভালোবাসায় অর্জিত পুরস্কারকে তিনি মহার্ঘ মনে করেন। 
১৪. কবি আসাদ চৌধুরীর অভিধানে ‘না’ নেই। শারীরিক অসুস্থতা থাকলেও তিনি ঢাকা বা ঢাকার বাইরে কোনো অনুষ্ঠানে কথা দিয়ে থাকলে সেখানে অংশগ্রহণ করবেনই। কাউকে তিনি কখনো উপেক্ষা করেন না। 
১৫. যেকোনো লেখককে তিনি সর্বোচ্চ  পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ৪
সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেন। 
১৬. ছোট-বড়, ধনী-নির্ধন উদার- অনুদার, সংস্কারমুক্ত- সংস্কারাচ্ছন্ন, ভালো-মন্দ, সাম্প্রদায়িক-অসাম্প্রদায়িক, কুলীন-অকুলীন কাউকে তিনি অবজ্ঞা করেন না। মানুষের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা।  
১৭. নতুন কবিকে তিনি সাদরে বরণ করেন। 
১৮. উপেক্ষিত লেখকদের তিনি বুকে জড়িয়ে ধরেন। 
১৯. সদালাপি, নিরহংকারী, মিশুক প্রকৃতির ব্যক্তি। 
২০. সুবক্তা। প্রধান অতিথি বা সভাপতি পদে তিনি সবসময় মনোমুগ্ধকর বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। 
২১. কবি আসাদ চৌধুরী কবিতা অন্তপ্রাণ। জীবন উৎসর্গ করেছেন বাংলা কবিতার জন্য। 
২২. কবিতার বাউল স্বভাব কিন্তু ঘোরতর সংসারী তিনি। সার্থক পিতা তিনি। 
২৩. কেউ অসুস্থ হলে অবধারিতভাবে কবি আসাদ চৌধুরী তাকে দেখতে যাবেন। তার খোঁজখবর রাখবেন। 
এরকম টীকাভাষ্য আরও লেখা যায়। অনেক গুণাবলী উল্লেখ করা যায়। তবু আসাদ চৌধুরী ভাইকে নিয়ে কিছু লেখার কোনো সমাপ্তি নেই। আজকাল আসাদ ভাইয়ের স্বাস্থ্যের খবর নিতে গেলে স্মিত হেসে তিনি বলতেন, 
ভালো না। ভালো নাই। আসাদ ভাইয়ের কথা বলার বাকভঙ্গিও একেবারে নিজস্ব। বাংলা, আরবি, ফারসি ও ইংরেজি শব্দ অনর্গল ব্যবহার করেন। 
দুঃসংবাদ শুনে মারাত্মকভাবে আহত হলাম। আমাদের প্রিয় আসাদ চলে গেলেন চিরঘুমে। 
আসাদ ভাই, আপনার মৃত্যু নাই। অমরত্ব পান করেছেন আপনি।

 

 

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status