শেষের পাতা
ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জে বিএনপি’র রোডমার্চ
সরকারের পদত্যাগ ছাড়া জনগণ রাজপথ ছাড়বে না
স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে
২ অক্টোবর ২০২৩, সোমবার
সরকার পতনের একদফা দাবিতে এবার ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত রোডমার্চ করেছে বিএনপি। রোববার সকালে ময়মনসিংহের বগার বাজার থেকে উদ্বোধনী সমাবেশের মাধ্যমে শুরু হয় বিএনপি’র চলমান ষষ্ঠ রোডমার্চ। বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী রোডমার্চে যোগ দেন। ১১৪ কিলোমিটার পথে ময়মনসিংহের চুরখাই বাজার, সম্ভুগঞ্জ চায়না মোড়, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা, ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইলে পথসভা হয়। সড়কের দুইপাশে দলীয় নেতাকর্মী ও জনতার ভিড় ঠেলে সন্ধ্যার পর কিশোরগঞ্জে পৌঁছে রোডমার্চের বহর। শহরের লতিবাবাদ চক্ষু হাসপাতাল সংলগ্ন ময়দানে সমাপনী সমাবেশের মাধ্যমে রোডমার্চ শেষ হয়। রোডমার্চে নেতৃৃত্ব দেয়ার পাশপাশি কয়েকটি পথসভা, উদ্বোধনী ও সমাপনী সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান। সরকারের পদত্যাগ ছাড়া জনগণ রাজপথ ছাড়বে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মঈন খান।
তিনি বলেন, আজকে আমরা রাজপথে নেমেছি। আপনারা এই প্রত্যয় নিন, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাবো না এবং পাশাপাশি যতক্ষণ পর্যন্ত না এই জনপ্রতিনিধিবিহীন সরকার দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছে, সেই সরকার যতক্ষণ না পদত্যাগপত্র জমা না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাবো না। বিগত এক বছর যাবত আপনারা দেখেছেন যে, আমরা কোটি কোটি মানুষকে সম্পৃক্ত করে রাজপথে সমাবেশ করেছি, মিছিল করেছি, মিটিং করেছি এবং এই সরকারের প্রতি বাংলাদেশের মানুষ অনাস্থা দিয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, চলমান এই আন্দোলনে আমরা জয়লাভ করতে না পারলে আওয়ামী লীগের অত্যাচারে হয় আমাদের জেলখানায় থাকতে হবে, না হয় দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। তাই এই সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক যুদ্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক যুদ্ধে সবাইকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বাধা দিয়ে কখনো বন্যার পানি আটকে রাখা যায় না। এখনো সময় আছে, গাট্টি-গুট্টি বেঁধে বোগলে করে নিয়ে বিদায় নেন। পরে যখন বিদায় নি?তে হ?বে তখন কিন্তু এগুলো নেয়ার সময় পাবেন না, দেশের জনগণ কেড়ে রেখে দিবে। ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি সভাপতি ডা. মাহবুবুর রহমান লিটনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সমাবেশে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
জনসমুদ্র কিশোরগঞ্জ: বিএনপি’র রোডমার্চ ঘিরে জনসমুদ্রে পরিণত হয় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ বালুর মাঠ এলাকা। রোববার বিকাল ৩টা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের পদভারে মুখর হতে থাকে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের মাঠটি। বেলা ৪টার মধ্যেই কানায় কানায় মাঠটি পূর্ণ হয়ে যায়। এরপরও বিভিন্ন যানবাহনে করে কিশোরগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা সভাস্থল অভিমুখে ভিড় জমান। এ সময় নেতাকর্মীরা পার্শ্ববর্তী সড়ক ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। এতে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকা নেতাকর্মীদের দখলে চলে যায়। ফলে সড়কটি বন্ধ হয়ে গেলে বিকল্প সড়কে যানবাহন চলাচল করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রোডমার্চের গাড়ির বহর সভাস্থলে এসে পৌঁছায়। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় ময়মনসিংহের ত্রিশাল বগারবাজার থেকে উদ্বোধনী সমাবেশের পর রোডমার্চ শুরু হয়। এই রোডমার্চে ময়মনসিংহের চুরখাই বাজার, সম্ভুগঞ্জ চায়না মোড়, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা, ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইলে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেসব সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। কিশোরগঞ্জে রোডমার্চ উত্তর সমাপনী সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। বিএনপি’র ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে সমাপনী সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ফজলুর রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় অতিথি ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী সিরাজুল হক, বিএনপি’র কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট শাহ ওয়ারেছ আলী মামুন, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি লায়লা বেগম।
এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবদুল বারী ড্যানি, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, জেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মো. ইসরাইল মিয়া, নাজমুল আলম ও আমিনুল ইসলাম আশফাক, জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবু নাসের সুমন প্রমুখ।
সমাপনী সভায় ডাণ্ডাবেড়ি ও শিকল পরে যোগ দিয়ে দৃষ্টি কাড়েন জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আসাদ। তিনি সাংবাদিকদের জানান, সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গ্রেপ্তারের পর নেতাকর্মীদের ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ হিসেবে তিনি ডাণ্ডাবেড়ি ও শিকল পরে সভায় যোগ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সরকারের পদত্যাগ দাবিতে ১৯শে সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৫ই অক্টোবর পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রংপুর থেকে দিনাজপুর, বগুড়া থেকে রাজশাহী, ভৈরব থেকে সিলেট, বরিশাল থেকে পিরোজপুর, ঝিনাইদহ থেকে খুলনা পর্যন্ত পাঁচটি রোডমার্চ করেছে তারা। এ ছাড়া রাজধানীতে একাধিক সমাবেশ করেছে তারা। এদিকে আগামী ৩রা অক্টোবর ফরিদপুর বিভাগে রোডমার্চ ও ৫ই অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চ করবে বিএনপি।
মন্তব্য করুন
শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন
শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]