শেষের পাতা
বগুড়া-রাজশাহী রোডমার্চে ফখরুল
নির্বাচন নিয়ে পাতানো খেলা খেলতে দেয়া হবে না
কাজী সুমন, রাজশাহী থেকে
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবার
সরকার পতনের একদফা দাবিতে উত্তরাঞ্চলের দুই বিভাগে তারুণ্যের রোডমার্চ করেছে বিএনপি’র তিন সংগঠন। রোডমার্চের দ্বিতীয় দিন বগুড়া থেকে শুরু করে রাজশাহীতে গিয়ে শেষ হয়। প্রায় ১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে চারটি পথসভা সহ ছয়টি স্থানে বক্তব্য দেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোডমার্চ থেকে একটা বার্তা দিতে চাই, আসুন, জেগে উঠুন, এই অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করুন। আজকে জনগণের অবস্থান একদিকে ভোট চোরেরা একদিকে। ভোট চোরের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে হবে। একইসঙ্গে সরকারের পতন ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল। নির্বাচন নিয়ে পাতানো খেলা খেলতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি মহাসচিব।
গতকাল বেলা পৌনে ১২টায় বগুড়ায় এরুলিয়া থেকে এ রোডমার্চ শুরু করে বিএনপি’র অঙ্গ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। রোডমার্চে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল নিয়ে অংশ নেন। দীর্ঘ পথমালায় রাস্তার দুই পাশের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে রোডমার্চের বহরকে স্বাগত জানান স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
দুইদিনের রোডমার্চ শেষে রাজশাহী ঈদগা মাঠে সমাপনী সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে অস্তিত্বের প্রশ্ন, স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব টিকে থাকবে কিনা প্রশ্ন, গণতন্ত্র ফিরে আসবে কিনা প্রশ্ন। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আদালত, সংসদ সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। এটা করতে গিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে খুন, গুম করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে রেখেছে। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, মানুষ জেগে উঠেছে, রাজপথে নেমেছে। রাজপথে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরবো। আওয়ামী লীগ আবারো নির্বাচন নিয়ে পাতানো খেলা খেলতে চায়। আমরা নির্বাচন নিয়ে পাতানো খেলা খেলতে দেবো না।
ডিসি-এসপি পরিবর্তন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই রাজশাহীতে ফোন আলাপ বেরিয়েছে, ওসি বলছেন একজন মন্ত্রী তাকে এনেছেন নির্বাচন করিয়ে দেয়ার জন্য। তিনি বলেন, আসুন, আজকে আমরা রুখে দাঁড়াই, এই সরকারকে মানুষকে না বলে দিয়েছে।
সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে তালি দিয়েছে, সাহস জুগিয়েছে, উৎসাহ দিয়েছে। আন্দোলন সফলতার দ্বারপ্রান্তে। মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভোট চোরদের ধরার জন্য। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে একজন একজন করে তালিকা করার জন্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে কোনো রেজিম ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। আমাদের নেতা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রক্ত দিয়ে হলেও এই সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করার। তফসিল ঘোষণা করে কোনো লাভ নাই। ভোটের বাক্স গুদামেই পড়ে থাকবে, এদিক সেদিক যাবে না।
তিনি আরও বলেন, যারা খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিশ্ব নেতাদের পেছনে ঘুরঘুর করছে। সেলফি তুলছে। কোনো লাভ হবে না। এদের দেশেও কেউ নেই, দেশের বাইরেও কেউ নেই। তাদের একমাত্র ভরসার জায়গা হচ্ছে পুলিশ। তিনি আরও বলেন, শুধু সরকারের পতন ঘটালেই হবে না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত রাস্তায় থাকবো। যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এসএম জিলানী, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রমুখ।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। এর আগে বগুড়ায় এরুলিয়ায় উদ্বোধনী সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন- রোডমার্চ থেকে এই বার্তাই দিতে চাই, আসুন জেগে উঠুন। এই সরকারকে পরাজিত করুন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যাকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন আপনাদেরই সন্তান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, লড়াই করতে হচ্ছে কেন? ভোটের অধিকার, মানুষের অধিকার, ভাতের অধিকারের জন্য। চালের দাম কতো এখন ৭০/৮০ টাকা তাই না? চাল, ডাল, তেল প্রত্যেকটা জিনিসের দাম আকাশচুম্বী। বিদ্যুতের দাম তিনি চারবার করে বাড়াচ্ছেন।
তিনি বলেন, এই সরকার শুধু দ্রব্যমূল্যের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে তাই নয়, এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার চুরি করে দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে। সবচেয়ে বড় চুরি করেছে আমাদের ভোটের অধিকার। আবারো তারা চুরি করে ক্ষমতায় আসতে চায়। এ সময় তিনি জনতার কাছে জানতে চান, পারবে এবার ভোট চুরি করতে? উপস্থিত জনতা সমস্বরে বলেন ‘না’।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বন্দি করে রেখেছে। আজকে তিনি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। উন্নত চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। ডাক্তারা বলছেন, তাকে বাঁচাতে হলে তাড়াতাড়ি তার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা দরকার, সেটা বিদেশ ছাড়া সম্ভব নয়। বার বার আমরা বলছি, পরিবার থেকে বলছে কিন্তু তিনি (শেখ হাসিনা) শুনতে রাজি নয়...। পরিষ্কার করে বলতে চাই, অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা করার সুযোগ দিতে হবে। অন্যথায় সকল দায় দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।