ঢাকা, ১৬ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

শিল্পখাত

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় ঋণ প্রবাহে ভাটা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২৪ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার আশঙ্কা ও শিল্পের কাঁচামাল-মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমায় শিল্পখাতে ঋণ প্রবাহে ভাটার টান পড়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) শিল্পঋণ কমেছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে করোনা মহামারির পর থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোদমে শুরু হলে শিল্পঋণের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। যদিও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকে সাপ্লাই চেইন ব্যাহত ও আমদানি মূল্য বাড়ার কারণে শিল্পঋণ পরিমাণে বাড়লেও বিশ্ব অর্থনীতি স্লো ডাউনের কারণে উৎপাদন বাড়েনি। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির ব্যাপক বৃদ্ধি এবং ডলার সংকট ও আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ থাকায় শিল্প খাতের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। যা এই খাতের ঋণ বিতরণ কমিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ধীরগতি, চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও শিল্পের কাঁচামাল-মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমায় শিল্পঋণ প্রবাহে ভাটা পড়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ প্রান্তিকে শিল্পখাতের ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) শিল্পঋণ কমেছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা বলেছেন, আন্তর্জাতিক মার্কেটে তেল, গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মূল্য ও ডলারের দাম ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীদের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। এ ছাড়া ডলারের সংকটে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে না পারায় উৎপাদন অনেক কমেছে।

বিজ্ঞাপন
যার প্রভাবে শিল্পখাতের ঋণ বিতরণ কমেছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হ্রাস, ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল ঋণের সুদ বেড়ে যাওয়ায় ও মূল্যস্ফীতির কারণে শিল্প কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাপক ব্যাহত হয়েছে। যার কারণে শিল্পঋণের চাহিদা অনেক কম ছিল। তারা বলেন, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি মোকাবিলা করতে একই কৌশল ব্যবহার করছে। প্রধান অর্থনৈতিক দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি রোধে সুদহার বাড়িয়েছে। 

বেসরকারি খাতের একজন উদ্যোক্তা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বেশকিছু কারণে শিল্প খাতে বিনিয়োগ কমছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো- গ্লোবাল মার্কেট ঘোলাটে ও ডলারের মূল্য বেশি থাকা। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর ইন্টারেস্ট রেট বেড়ে গেছে। যার কারণে শিল্প খাতের বিনিয়োগ কমছে। তিনি বলেন, কিছু কিছু ব্যাংকের তারল্য সংকট রয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনের বছর হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে নানা চিন্তা-ভাবনা করছেন। এসব কারণে বিনিয়োগ কমছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, কাঁচামাল আমদানি ও ক্যাপিটাল মেশিনারি গেল অর্থবছরে ব্যাপক পরিমাণে কমেছে, যার কারণে এই খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে ব্যাহত হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছর ২০২২-২৩ সালের (জুলাই-মার্চ) ৯ মাসে এলসি সেটেলমেন্ট কমেছে যথাক্রমে ৩১% এবং ৬.৬৮%। শিল্প খাতের আমদানির মধ্যে টেক্সটাইল ফেব্রিক, ফার্মাসিউটিক্যাল কাঁচামাল, কটন কাঁচামাল, কটন ইয়ার্ন, সিন্থেটিক ফাইবার ও ইয়ার্নের জন্য এলসি খোলা ৩০ থেকে ৭০% কমেছে। এ ছাড়া ক্যাপিটাল মেশিনারির বেলায় এলসি ওপেনিং ও সেটেলমেন্ট কমেছে যথাক্রমে ৫৫.৮৮% ও ১৪.৯৩%। 
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, শিল্পখাতে বিনিয়োগ কমার অন্যতম করণ হলো এলসি বিষয়ক ক্যাপিটাল মেশিনারি ও কাঁচামাল আমদানি কমছে। যার ব্যাপক প্রভাব এই খাতে পড়েছে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর তারল্য অনেকটা চাপে রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ব ও দেশের পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন। যার কারণে বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে। 

আরেকটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি কমাতে প্রাইভেট সেক্টরের ঋণের লক্ষ্যমাত্র কমিয়ে এনেছে। বিশ্বের অন্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশও পলিসি রেট বাড়িয়েছে, যার কারণে এই খাতের ঋণের পরিমাণ কমছে। গত জুনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। এ নীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রজেকশন ১৪.১% থেকে কমিয়ে ১১% করা হয়। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি টানা সাত মাস ধরে কমতে কমতে এ বছরের জুনে ছিল ১০.৪৯%; যা ১৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯.৬৯%, যা এক বছর আগে একই সময়ে ছিল ৭.৪৮%। মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৯৪%; যা ১১ বছর দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে শিল্পখাতে বকেয়া ঋণের পরিমাণ ২০ শতাংশ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, যেখানে শিল্পখাতে বকেয়া ঋণের পরিমাণ ২০২৩ সালের মার্চ শেষে ১ লাখ ১২ হাজার ৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৯৩ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও যেসব ঋণ পরিশোধ করা হয়নি, সেগুলোকে বকেয়া ঋণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, ২০২২ সালে ব্যাংকগুলো শিল্পখাতের ঋণ বিতরণ করেছে ৫ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। যা এর আগের বছরের তুলনায় ১ লাখ ১ হাজার ৩২১ কোটি টাকার বেশি। গত ২০২২ অর্থবছরের আগস্ট থেকে আমদানির পরিমাণ কমতে থাকায় বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২.১৪% যা গত ১১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমলেও উল্টো চিত্র দেখা গেছে শিল্পখাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক রিপোর্টে দেখা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারির তুলনায় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে অতিপ্রয়োজনীয় আট ধরনের পণ্যের গড় মূল্যবৃদ্ধির হার- কয়লা ২৮৫%, পেট্রোলিয়াম ৩০০%, লোহা ও ইস্পাত ২০%, সয়াবিন ৭৬%, গম ৬৩%, চিনি ১০০%, সার ৭৫%, তুলা ৬৮%। অর্থাৎ গড়ে ৭৭% মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

রাস্তায় রাস্তায় ট্যাংক/ হামাস-ইসরাইল তীব্র লড়াই

সমমনাদের সঙ্গে বিএনপি’র বৈঠক/ যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতকে নেয়ার পরামর্শ

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status