ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে করণীয়

ডা. মাহমুদুল হাসান সরদার
১১ জুন ২০২২, শনিবার
mzamin

বর্তমানে সারাবিশ্বে উপসর্গ ও ধরন অনুযায়ী  প্রায় ২০০ প্রকারেরও বেশি ক্যান্সার রয়েছে, যেগুলোর প্রতিটির প্রকারই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের। আর একেক  বৈশিষ্ট্যের ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতিও একেক রকম।  ক্যান্সার কি ? ক্যান্সার (cancer) শব্দের বাংলা অর্থ হলো কর্কটরোগ। আবার অনেকে এটিকে দুরারোগও বলে থাকেন। এই ক্যান্সার মূলত: দেহে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত একাধিক রোগের সমষ্টি। আবার অন্যভাবে বলা যায়  শরীরে বিভিন্ন কারণে বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট এই ২(দুই) ধরনের টিউমার হয়ে থাকে। এই দুই ধরনের টিউমারের মধ্যে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকে ক্যান্সার বলে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা স্বাস্থ্য সচেতন তাদের ক্যান্সার রোগ কম হয়। আবার এসব ব্যক্তিরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও শুধু সচেতনতার জন্য এবং শুরুতে চিকিৎসার জন্য অনেকেই ক্যান্সার থেকে আরোগ্য লাভ করতে পেরেছেন।  

বিনাইন/ননম্যালিগনেন্ট টিউমার  অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম হয়ে বৃদ্ধি পাওয়া কলাকে নিওপ্লাসিয়া (টিউমার) বলে; এমন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কোষকে বলা হয় নিওপ্লাস্টিক।

বিজ্ঞাপন
এই নিওপ্লাস্টিক কোষ যখন এর আশেপাশের কলা বা টিস্যুভেদ করতে না পারে তখন তাকে বলে বিনাইন টিউমার।  বিনাইন টিউমারকে  সাধারণত ক্যান্সার বলা যায় না বা এগুলো ক্ষতিকর না। তবে বিনাইন থেকেও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ক্যান্সার প্রথমে বিনাইন টিউমার হিসাবে শুরু হলেও পরে তা পরিবর্তিত হয়ে ম্যালিগন্যান্ট হয়ে যায়।   ম্যালিগন্যান্ট টিউমার  নিওপ্লাসিয়া যখন আশেপাশের কলা বা টিস্যু ভেদ করার ক্ষমতা সম্পন্ন হয়, তখন তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বলে। এই ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হলো  আশেপাশের টিস্যুভেদ করে ছড়িয়ে পড়ে, যাকে ক্যান্সার বলে।   

কারণসমূহ ঠিক কী কারণে ক্যান্সার বা কর্কটরোগের সৃষ্টি হয় সেটা  এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি  গবেষকরা। তবে সাধারণ কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে, তাহলো- বয়স বয়স বাড়তে থাকলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কারণ এ সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা  কমে যায়।  খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন ব্যবস্থাপনা  খাদ্যাভ্যাস ও জীবন ব্যবস্থাপনা ক্যান্সারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, ধূমপান বা মদ পানের সঙ্গে ফুসফুস, মুখ ও কণ্ঠনালীর এবং লিভারের ক্যান্সারের  সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে পান-সুপারি, জর্দা, দোক্তা, গুল, লাল মাংস, অতিরিক্ত লবণ, চিনি ইত্যাদি খাবারের সঙ্গেও ক্যান্সারের যোগসূত্র রয়েছে।  আবার যারা অলস প্রকৃতির বা যারা সাধারণত শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম কম করেন, তাদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি। 

 জিনগত কারণ  গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যান্সারের সঙ্গে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে। পরিবারের কারও যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থাকে তাহলে অন্যদেরও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়াার ঝুঁকি  বেশি।  বিরূপ পরিবেশ এবং পেশাগত জীবন রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক রয়েছে। যেমন- যদি কেউ রঙ্গের কারখানা, রাবার বা গ্যাসের কাজে, বা কৃষি কাজের সময় কিটনাশক ব্যবহারের জন্য নিয়োজিত থাকেন তারা এক ধরনের বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে মুত্রথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। পরিবেশগত কারণের অন্যতম একটা হচ্ছে সূর্য। রোদে বেশিক্ষণ থাকার কারণে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।  লক্ষণসমূহ খুব ক্লান্ত বোধ করা বা ক্লান্ত লাগা ক্ষুধামন্দা বা  ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া শরীরে চাকা বা দলা দেখা দেয়া  

দীর্ঘস্থায়ী কাশি  মলত্যাগে অস্বাভাবিক পরিবর্তন  রাতে ঠাণ্ডা লাগা, ঘেমে যাওয়া বা জ্বর আসা অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া ত্বকের পরিবর্তন দেখা দেওয়া মানসিক অস্বস্তি চিকিৎসা সমূহ পূর্বেই বলেছি ক্যান্সারের বৈশিষ্ট্য ও ধরণ অনুযায়ী একেক রকম ক্যান্সারের একেক  রকমের চিকিৎসা করতে হয়। ক্যান্সার নিরাময় ও প্রাদুর্ভাব কমাতে কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিগুলো হলো- অস্ত্রোপচার  সাধারণত এই পদ্ধতিতে শরীরের যে অংশে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়  সে অংশের আক্রান্ত কোষগুলো এবং তার আশেপাশের কোষগুলোকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে সরিয়ে ফেলা হয়। তবে এটি বেশি কার্যকর ক্যান্সার যদি অল্প একটু জায়গাজুড়ে থাকে এবং বেশি ছড়িয়ে না যায়।  রেডিওথেরাপি (Radiotherapy) নিয়ন্ত্রিতভাবে শরীরের অংশবিশেষে তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রয়োগ করে কোষগুলোকে ধ্বংস করার পদ্ধতিকে বলা হয় রেডিওথেরাপি। 

তবে  এই চিকিৎসা শুধু চিকিৎসকের পরামর্শে দিতে হয়। কেমোথেরাপি (Chemotherapy) এই  পদ্ধতিতে ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ৫০টির বেশি ধরনের কেমওথেরাপি ওষুধ রয়েছ, যেগুলোর মধ্যে কোনোটি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল হিসেবে খেতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ওষুধগুলোকে স্যালাইনের সঙ্গে বা অন্য কোনো উপায়ে সরাসরি রক্তে দিয়ে দেয়া হয় যা রক্তের সঙ্গে মিশে এই ওষুধগুলো শরীরের যেখানে যেখানে ক্যান্সার কোষ রয়েছে সেখানে গিয়ে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। 

হরমোন থেরাপি অনেক ক্ষেত্রে রোগীর শরীরের কিছু হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন করার মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। অন্যান্য চিকিৎসা এছাড়া আন্তর্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্জাতিক মানের হোমিও ডোজ আছে, যা কেবল অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা করালে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে ক্যান্সারের সর্বোৎতম চিকিৎসা হলো প্রতিরোধ  এবং ক্যান্সার আক্রান্তের শুরুতে চিকিৎসা করানো এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বৃদ্ধি করানো।  

লেখক: হোমিও চিকিৎসক ও ক্যান্সার গবেষক, সরদার হোমিও হল ৬১/সি আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭। সেল: ০১৭৪৭৫০৫৯৫৫

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status