ঢাকা, ৪ অক্টোবর ২০২৩, বুধবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মত-মতান্তর

বাঙালীর গৌরব গাঁথা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’

সিফাত আহমেদ

(১ মাস আগে) ১৫ আগস্ট ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:৩৭ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১১:৪৬ অপরাহ্ন

mzamin

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতির পিতা। তিনি হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তাঁর বদৌলতেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। সমগ্র জীবন তিনি বাংলার মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। তাঁর জীবনের ওপর স্বরচিত অসামান্য গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ২০১২ সালের জুন মাসে প্রকাশিত হয়। বইটি আরো ১২টি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। এ পর্যন্ত বইটি ইংরেজি, উর্দু, জাপানি, চীনা, আরবি, ফরাসি, হিন্দি, তুর্কি, নেপালি, অসমিয়া ও রুশ ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬-৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় বইটি লিখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফখরুল আলম বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। ইংরেজিতে বইটির নাম 'Unfinished Memories'।

বিজ্ঞাপন
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি প্রকাশ করেছে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস ও পেঙ্গুইন বুকস।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ যেটিকে আমরা ইংরেজিতে ‘অটোবায়োগ্রাফি’ বলে থাকি। বঙ্গবন্ধু এই গ্রন্থটি লেখা শুরু করেছিলেন ১৯৬৭ সাল থেকে। এই বইটিতে যেসব ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো ১৯২০ সাল থেকে ১৯৬৪ সালের ঘটনা। বঙ্গবন্ধু বইটি সমাপ্ত করার আগেই ঘাতকের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সপরিবারে নিহত হন।
বইটির ভূমিকায় বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিভাবে এই বইয়ের নথিগুলো খুঁজে পেয়েছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, হত্যাকারীরা অনেক নথিপত্র পুড়িয়ে দিয়েছিল কিন্তু ভাগ্যবশত বঙ্গবন্ধুর জীবনীর নোটগুলো খেয়াল করেনি। ভূমিকায় বঙ্গবন্ধু কন্যা এই নোটগুলি দিয়ে কীভাবে বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা উল্লেখ করেছেন।
বইটিতে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংগ্রামের কথা তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন। এ বইটিতে তিনি তাঁর (জন্ম, বংশ, শৈশব, বিবাহ) শিক্ষাজীবন, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের বর্ণনা দিয়েছেন। বইতে তিনি তাঁর বংশ নিয়ে অনেক তথ্য দিয়েছেন যা অনেকের কাছেই অজানা। বঙ্গবন্ধু ছিলেন শেখ পরিবারের ছেলে। শেখ বংশ ছিল গোপালগঞ্জ জেলার সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত। বঙ্গবন্ধু স্কুল জীবনে একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং ইংরেজি ভাষায় তাঁর আয়ত্ত প্রশংসনীয়। বঙ্গবন্ধু স্কুলজীবনে খুব ভালো ফুটবল খেলতেন এবং তিনি তাঁর স্কুল দলের দলনায়ক বা ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি বইটিতে তাঁর স্কুল জীবন নিয়েও অনেক তথ্য দিয়েছেন।
বইটিতে অনেক রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লিখিত হয়েছে। যেমন: ১৯৪৩ সালের দূর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশ ভাগ (ভারত ও পাকিস্তান), মুসলিম লীগের রাজনীতি, পূর্ববঙ্গের বা পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতি, দেশ ভাগের পর ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত মুসলিম লীগের সরকারের অত্যাচার, ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে জয়, আদমজি দাঙ্গা ও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক জীবনের শুরুর দিকে হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখে খুবই বিচলিত হতেন। ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ এবং ছাত্র রাজনীতিতে বাল্যকাল থেকেই তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। বইটিতে ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবটি বঙ্গবন্ধু দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে, যেটি পাকিস্তান গঠনের সনদ এবং এই লাহোর প্রস্তাবে হুসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শের-এ-বাংলার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। অনুমেয় যে, লাহোর প্রস্তাব তাঁদের ছাড়া অসম্ভব ছিল। এই লাহোর প্রস্তাবই মুসলিমদের জন্য একটি স্থায়ী জায়গা অর্থাৎ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সনদ। বইটিতে শুধু পাকিস্তান নয় ব্রিটিশদের সাথে আমাদের বাঙালিদের সংগ্রামেরও একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ পাওয়া যাবে। বইটিতে বঙ্গবন্ধু, হুসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শের-এ-বাংলা, আব্দুল হামিদ খান ভাষানী ও আরও কয়েকজন রাজনীতিবিদদের দেশভাগ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর তাদের ভূমিকা তুলে ধরেছেন।

বঙ্গবন্ধুর কিছু উদ্ধৃতি
“নেতারা যদি নেতৃত্ব নিয়ে ভুল করে, জনগণকে তার খেসারত দিতে হয়। যে কলকাতা পূর্ববাংলার টাকায় গড়ে উঠেছিল, সেই কলকাতা আমরা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিলাম।” ৭৯ পৃ: 
“সকল বাঙালির মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাই ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না। এই জন্যই বাঙালি জাতির সব গুণ থাকা সত্তেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। সুজলা-সুফলা বাংলাদেশ সম্পদে ভর্তি। এমন উর্বর জমি দুনিয়ায় খুব অল্প দেশেই আছে। তবুও এরা গরিব। কারণ যুগ যুগ ধরে এরা শোষিত হয়েছে নিজের দোষে। নিজেকে এরা চেনেনা আর যতদিন চিনবে না, বুঝবে না ততদিন এদের মুক্তি আসবে না।” ৪৮ পৃ:
“মানুষকে ভালোবাসলে মানুষও ভালোবাসে। যদি সামান্য ত্যাগ স্বীকার করেন, তবে জনসাধারণ আপনার জন্য জীবন দিতেও পারে।" ২৫৭ পৃ:
“অযোগ্য নেতৃত্ব, নীতিহীন নেতা ও কাপুরুষ রাজনীতিবিদদের সাথে কোনো কাজে নামতে নেই। তাতে দেশসেবার চেয়ে দেশ ও জনগণের সর্বনাশই বেশি হয়।” ২৭৩ পৃ:
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির সময়কালকে তিনভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রথম খন্ড (১৯২০-১৯৪২), বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে শুরু করে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেয়া পর্যন্ত। দ্বিতীয় খন্ড (১৯৪২-১৯৪৭), কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি থেকে বেকার হোষ্টেলে আবাসন কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় ফিরে আসা পর্যন্ত (১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময়)। তৃতীয় খন্ড (১৯৪৭-১৯৫৪) ভারতবর্ষ ভাগ থেকে শুরু করে পাকিস্তানের সৃষ্টি পর্যন্ত ১৯৪৭ সাল, ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা থেকে ১৯৫৪ সালের শেষ পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধুর প্রতি পাকিস্তান সরকারের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের জন্য তিনি তাঁর পরিবার থেকে এতটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন যে তার নিজের সন্তানরাও তাঁকে ভুলে গিয়েছিল। তাঁর মতে একজন বাবার জন্য এর চেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে! একজন পিতাকে তার সন্তান অনেক দিন না দেখলে, সেই সন্তান পিতাকেও ভুলে যায়! কে জানে কত হীন কাজ হবে একজন মানুষকে কারাগারে রাখা কোনো আদালতের ট্রায়াল ছাড়া এবং তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনকে দূরে রাখা শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণের জন্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন এই দেশের স্বাধীনতার জন্য। তিনি তাঁর পরিবার, আত্মীয় স্বজনদের কথা চিন্তা করেননি। তিনি চিন্তা করেছেন দেশের কথা, দেশের মাটি ও মানুষের কথা। 

লেখক: দশম শ্রেণি (ইংলিশ ভার্সন), ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ
 

পাঠকের মতামত

Best done.

আজিনুর
১৫ আগস্ট ২০২৩, মঙ্গলবার, ৯:১৫ অপরাহ্ন

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

   

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status