ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

মত-মতান্তর

বাবার জন্য সন্তানের শোকগাথা

মাহবুবা জেবিন

(১ বছর আগে) ৬ আগস্ট ২০২৩, রবিবার, ৩:১৯ অপরাহ্ন

mzamin

১৯৮৪ সালে ৬ই আগস্ট সকাল বেলাটা ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে একেবারে আলাদা। প্রকৃতি আগেই জেনেছিল একজন মহান ক্ষণজন্মা পুরুষ বিদায় নিবেন এ পৃথিবী থেকে। তাইতো আকাশ অন্ধকার হয়েছিল বিষণœ মন খারাপ করা কালো মেঘে। মাঝে মাঝেই পাখিরা করুণ গলায় ডাকাডাকি করতে করতে উড়ে যাচ্ছিলো এদিক-সেদিক। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনা তদন্তে তেজগাঁও বিমানবন্দরে এলেন রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান। কর্তব্যরত অবস্থায় হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করলেন। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সিএমএইচে। আর ফেরা হলো না, সেখানেই চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান এই ক্ষণজন্মা পুরুষ।       
বাবা, ভরা বর্ষায় বৃষ্টিভেজা দিনে জন্মেছিলাম আমি। সেদিন ছোট্ট আমাকে কোলে নিয়ে আনন্দ অশ্রুতে ভিজেছিল তোমার দু’চোখ। বৃষ্টি এবং কন্যা সন্তান আল্লাহর দুই নেয়ামত যেন একসাথে এসেছিলো তোমার পৃথিবীতে। আমরা দুই বোন ছিলাম তোমার দুই নয়নের মনি। কিছুতেই দু’চোখের আড়াল করতে না আমাদের। স্নেহ মায়া মমতা আর ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছিলে আমাদের। তবে, বাবা কেন চলে গেলে এতো আগে?   

বাবা তুমি আছো আমার দৃষ্টির সম্মুখে। সর্বদা স্নেহের চাদরে আচ্ছাদিত করছো আমায়। তোমার শেখানো নিয়মানুবর্তিতা আর বিনয় আজও আমার চলার পথের পাথেয়। শুধু বলা হলো না তোমাকে হারানোর কষ্ট, আমার দুঃখ, আমার আনন্দ, আমার হাসি কোনকিছুই। হৃদয়ের গভীর থেকে আরও একবার বাবা বলে ডাকতে বড় ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে তোমার কাছে বসে বেণী দুলিয়ে রাজ্যের গল্প করি। কিংবা তোমার হাত ধরে সাঁতার কাটতে যাই। ইচ্ছে করে তোমার বুকে মাথা রেখে আরো একবার কিশোরী বেলায় ফিরে যাই। স্মৃতির পট হয়ে বাবা, তুমি কেন চলে গেলে এতো আগে?       
বাবা, আমাদের পৃথিবী আবর্তিত হতো তোমাকে কেন্দ্র করে। তুমিই ছিলে আমাদের সূর্য। তুমি হাসলে, এক অনাবিল আনন্দে উদ্ভাসিত হতো আমাদের পৃথিবী। শান্তির ফাল্গুধারা বয়ে যেত চারিপাশে। স্বপ্নের প্রজাপতিরা ডানা মেলতো নীলাকাশে। কিন্তু হায়! এক টুকরো কালো মেঘ আমাদের জীবনে নিয়ে এলো ঘোর অমানিশা। এক উন্মত্ত টর্নেডোর আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল আমাদের স্বর্গরাজ্য। ডানা ভাঙা পাখির মতো আমাদের স্বপ্নগুলি লুটিয়ে পড়লো অমোঘ বাস্তবতায়। স্বপ্নগুলি ডানা মেলার এত আগে, চলে গেলে তুমি আমাদের সকলকে রেখে।    
কথা কম কাজ বেশি এই ছিলো তোমার নীতি। বাবা, আরো অনেক কথা শোনার ছিলো। অনেক কথা বলার ছিলো। ছিলো বাকি অনেক স্বপ্ন দেখা। কাজই ছিলো তোমার জীবন, তোমার সাধনা। কিন্তু বাবা, অসমাপ্ত  কাজ রেখে এতো আগে কেন চলে গেলে তুমি।  

সমুদ্রের মতো বিশাল ছিল তোমার হৃদয়। বাবা, তোমার শ্রেষ্ঠত্তের গল্প আজ সবার মুখে মুখে। মা অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন তোমার অসমাপ্ত কাজ আর স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রুপদান করতে। তোমার শেখানো মানব কল্যাণের পথেই হেঁটে চলেছি আমরা আজও।    
দেশপ্রেম, অসীম সাহসিকতা আর মানবিকতার এক অসাধারণ সম্মিলনে নিজেকে উদ্ভাসিত করেছিলেন রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খান। সাহসিকতা, নির্ভীক দেশপ্রেম আর জনকল্যাণমূলক কাজের জন্যই বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় আজো স্থান করে আছেন প্রয়াত রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খান।  
বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, দেশপ্রেম, বীরত্ব, সাহসিকতা, জনকল্যাণমূলক কাজ ও মহানুভবতার জন্য বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন বাংলাদেশের গর্ব রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান।
(ডা. জুবাইদা রহমানের ‘বাবা কেন চলে গেল এতো আগে’ কবিতার অবলম্বনে।) 
লেখক: লন্ডন প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক।

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status