মত-মতান্তর
দেরি হওয়ার আগে বুঝুন ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিন
ব্যারিস্টার নাজির আহমদ
(১ বছর আগে) ২১ জুলাই ২০২৩, শুক্রবার, ৬:০৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৯:৩১ পূর্বাহ্ন

গোঁয়ার্তুমি ও একগুঁয়েমি ছাড়ুন, আলোচনায় বসুন। ১/১১ -এর পর জেলখানায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একসঙ্গে বসে আড্ডা দিতে পারলে ও একে অন্যের খাবার খেতে পারলে জেলখানার বাহিরে বসে আলোচনা করতে সমস্যা কি? কৃত্রিম সমস্যার সৃষ্টি করবেন না, করলে আপনারাই হবেন ভিকটিম। ইতিহাস তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
সমস্যা সমাধানে সংবিধান মোটেই কোনো বাধা নয়। সংবিধানে ছিল না বা সংবিধানের বাহিরেও অতীতে সমস্যার সমাধান হয়েছে এমন নজির একাধিক আছে বাংলাদেশে। সংবিধান কোরআন বা বাইবেল নয় যে তা পরিবর্তন বা সংশোধন করা যায় না বা যাবে না। খোদ ব্যক্তির জন্য একাধিকবার সংবিধান সংশোধন হয়েছে এই বাংলাদেশে! সংবিধানে ছিল না এমন অবস্থায় ১৯৯১ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে বড় দু’দল মিলে (যেহেতু কোনো দলেরই দুই-তৃতীয়াংশ ছিল না সংবিধান সংশোধনের জন্য) ১৯৯১ সালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনের নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। একইভাবে দু’বছরের সেনা সমর্থিত ১/১১ সরকার ও তাদের কার্যাবলী পরবর্তীতে বৈধতা দেয়া হয়েছে। সুতরাং সংবিধানের দোহাই দিবেন না।
নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল বা দলগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করবে ক্ষমতায় থাকার জন্য এবং বিরোধী দল বা দলগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। গণতন্ত্রে এটাই স্বাভাবিক এবং এতে দোষের কিছুই নেই। তবে সেই আপ্রাণ চেষ্টা হতে হবে আইনের গণ্ডির ভেতরে। কিন্তু গুরুতর দোষের বিষয় হলো- সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না করা বা না হতে দেয়া। সংবিধান মতে দেশের মালিক বা সকল ক্ষমতার উৎস হলো জনগণ। সুতরাং দেশের মালিকদের তাদের মূল্যবান রায়টা অবাধে সুযোগ করে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিন, যেমনটি অন্তত: করেছিল পাকিস্তান ১৯৭০ সালে কঠিন শোষণের পরও এবং হাল আমলে করেছে তুরস্ক টান টান উত্তেজনা ও প্রতিযোগিতার মধ্যেও।
জনগণ যদি চায় এবং তাদের ম্যান্ডেট নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি তো বটেই এমনকি দিলীপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দলও যদি ক্ষমতায় যায় কারও কিছু বলার নাই। এটাই হলো প্রকৃত গণতন্ত্র। কিসের বড়াই করেন সংশ্লিষ্টরা? ক্ষমতাসীনরা এই সুযোগটা কি করে দিতে পারেন না? স্বাধীন বাংলাদেশে দেশের মালিকদের এটা চাওয়া কি খুব বেশি কিছু চাওয়া?
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। সিমটমগুলো ভালো মনে হচ্ছে না। আস্তে আস্তে পেইন শুরু হলেই না ডেলিভারি পেইন শুরু হয়। ১/১১ এর আগে এমন অনেক ছোটখাটো ঘটনা ও ২৮শে অক্টোবর রাস্তায় মানুষ পিটিয়ে মেরে নৃত্য করার ঘটনা ছিল ১/১১ এর উপলক্ষ বা প্রেক্ষাপট। হাল আমলের ঘটনাগুলো বিশেষ করে হিরো আলমের ওপর হামলা এবং পরবর্তীতে জাতিসংঘ, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং ১৪টি দেশের যৌথ বিবৃতি নতুন কিছুর ঈঙ্গিত বহন করছে।
অনেক খেলারাম খেলে যাচ্ছে। দেরি হওয়ার আগে বুঝুন ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিন। নতুবা দারুণভাবে পস্তাতে হবে এবং আফসোস করতে হবে, যেমনভাবে পস্তাতে হয়েছে ও আফসোস করতে হয়েছে রাজনীতিবিদদের একাধিকবার বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে। রাজনৈতিক ভুল অনেক সময় শোধরানো যায় না।
নাজির আহমদ: বিশিষ্ট আইনজীবী, লেখক, বিশ্লেষক এবং ইংল্যান্ডের প্র্যাকটিসিং ব্যারিস্টার।