ঢাকা, ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

পোশাক-রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেয়ার দরকার নেই -সিপিডি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৬ জুন ২০২২, সোমবার

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করে, দেশের রপ্তানি আয়ের সর্ববৃহৎ খাত তৈরি পোশাকশিল্প ও রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে আর প্রণোদনা দেয়ার দরকার নেই। প্রণোদনা কোনো স্থায়ী কাঠামো নয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে এটি দেয়া উচিত। এ ছাড়া পোশাক শিল্পের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে। এ জন্য পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল বাংলাদেশের অর্থনীতি-২০২১-২২: তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এ কথা বলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও ঊর্ধ্বতন গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ায় প্রবাসীরা তো একটু বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। কাজেই রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা না দেয়ার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে।’ শুধু বিনিয়োগ কর্মসংস্থান এবং উৎপাদনশীল খাতে প্রণোদনা রাখা যেতে পারে। কিন্তু আমরা মনে করি, এই মুহূর্তে রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বর্তমানে পোশাকশিল্পে ১৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তার মানে, এ শিল্পের অবস্থা মোটামুটি ভালো। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি পোশাক শিল্পে আর প্রণোদনার দরকার নেই।

বিজ্ঞাপন
তিনি মনে করেন, যেকোনো প্রণোদনা কাঠামো চিরস্থায়ী নয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে এটি নির্ধারণ করা উচিত।

এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এখন সময় এসেছে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো। কারণ এই শিল্পের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করার প্রয়োজন নেই। আমাদের এখন গ্যাস সরবরাহের দিকে সরকারকে বেশি নজর দিতে হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে পণ্যমূল্য স্থির রাখা যাবে। বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা আছে। এজন্য বাজার তদারকিতে বেশি নজর দিতে হবে। একইসঙ্গে সাধারণ জনগণের ক্রয়-ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এতে করে তাদের ওপর চাপ কিছুটা প্রশমিত হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকৃত মূল্যস্ফীতির হার কত তা বলা কঠিন। এটা বের করতে হলে জরিপ করতে হবে। চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭.২ শতাংশ হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে যে দাবি করা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সংস্থাটি বলেছে, প্রবৃদ্ধির এই তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। জিডিপির হিসাবে গলদ আছে বলে মনে করে সিপিডি। কার্যকর নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে নতুন করে জিডিপির হিসাব নিরূপণের প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। বর্তমানে যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে সেটি আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি বলে মনে করে সিপিডি।

সিপিডি বলেছে, মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ জনগণের ক্রয়-ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে তারা কষ্টে আছে। এজন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং মজুতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে সিপিডি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সংকট কাটাতে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ায় স্বাভাবিকভাবে পণ্য আমদানিতে খরচ বাড়বে। পণ্য আমদানির খরচের চাপ বাড়লেও এই সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে। একটা পর্যায়ে এসে ডলারের বিনিময় মূল্য স্থিতিশীল হবে। এর আগে ২০১২ সালেও বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ায় ডলারের বিনিময় মূল্য ৭৬ টাকা থেকে বেড়ে ৮৪ টাকায় উন্নীত হয়েছিল। পরে আবার ৮১ টাকায় নেমে স্থিতিশীল হয়েছে। এবারের সংকটের কথা মাথায় রেখে আগামী বাজেটে মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এখন খাদ্যপণ্যের সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়াতে নজর দিতে হবে। 

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারও বেড়ে যাচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে চরমভাবে চাপে পড়েছে বাংলাদেশ। রাজস্ব আদায়ও কম হচ্ছে। তাই বাস্তবভিত্তিক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি দরকার। যে খাতে ভর্তুকি দরকার অবশ্যই দিতে হবে। সরকারি ব্যয়ও (এডিপি বাস্তবায়ন) বাড়াতে হবে। চলমান সংকট মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় অবশ্যই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। একই সময় সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় কৃষি ভরসা জায়গা করে নিলেও জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে অবদান কমে যাচ্ছে। তবে শিল্পখাতের মধ্যে বড় শিল্প কারখানার অবদান বাড়ছে।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status