মত-মতান্তর
রম্য
প্রবাদ-প্রবচনে বিড়াল
গাজী মিজানুর রহমান
(৪ মাস আগে) ৩ জুন ২০২৩, শনিবার, ৭:০৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৯ পূর্বাহ্ন

সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। তাই বলে কি মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্ব দেখাতে গিয়ে সবসময় প্রাণিকুলের গুষ্ঠি উদ্ধার করে কটুকাটব্য করবে? কুকুর, শুকর, সাপ, ইঁদুর, ছুচো- এদের কথা নাহয় বাদ দিলাম, ঘরের মধ্যে সারাক্ষণ ঘুরঘুর করে যে বিড়াল, তাকে জড়িয়ে মানুষের প্রবাদ-প্রবচন যেভাবে পাখা মেলে, তা দেখে অবাক হতে হয়।
বিড়াল অনেকের বিছানায় শুয়ে মালিকের বা মালকিনের সাথে সহনিদ্রা-সুখে নিমগ্ন হয়। তার গলায় ঘন্টা বাঁধা ইঁদুরের পক্ষে কঠিন হলেও মানুষের জন্য খুব-একটা কঠিন কিছু নয়। তবু মানুষ একটা কথা আবিষ্কার করেছে- বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? আবার আপনি-আমি কারো বাসায় বেড়াতে গেলাম, দেখলাম, পোষা বিড়ালটা বসে বসে ঝিমুচ্ছে- চোখ দুটি বন্ধ, মুখাবয়বে রাজ্যের প্রশান্তি নিয়ে যেন সে তপস্বা করছে। মনে হয়, গৃহকর্তা-কর্ত্রীর মঙ্গল কামনা করছে। তবু ভণ্ড তাপসের অভিনিবেশকে বলা হবে ‘ বিড়াল তপস্বা ‘। এটা কোন বিচার?
ভিজে গেলে সব পাখি বা প্রাণি নাস্তানাবুদ হয়ে যায়। তখন তাদের দেহের কেতাদুরস্ত ভাব চলে যায়। তখন ওরা নিজের অসহায় অবস্থা বুঝে বিনয়ী ভাব দেখাতে বাধ্য হয়। কিন্তু বিড়াল খুব-একটা বাইরে যায় না যে ভিজে যাবে।
বিড়াল তার ঘরকে ভালোবাসে। বস্তায় ভরে দূরে ফেলে আসলে, সে পথ চিনে চিনে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ির মানুষকে মাছগোশ খেতে দেখলে বিড়াল এসে 'মিও মিও' করে ভাগ চাইতে থাকে। লাঠি দেখিয়ে তাড়া দিলেও কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে আসে। মানুষের মধ্যে অনেকের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না, এমন অবাস্তব ব্যাপার ঘটলেও বিড়াল ওই অতি ভদ্র মানসিকতার ধার ধারে না। তার আচরণের মধ্যে ভালোবাসার দাবির জোরালো বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কিন্তু মানুষ তাকে ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে- বিড়ালের মনের কথা বোঝে না। তারা ভাবে , এটা বেহায়াপনা। তাই তারা বেহায়াপনার সমার্থক প্রবাদ-প্রবচন বানিয়েছে, বিড়ালের আড়াই পা। বেহায়া বিড়াল যেন আড়াই পা গিয়ে ফিরে আসে। আবার খাবারের ভাগ চায়।
থলের বিড়াল বেরিয়ে গেছে। অর্থ হচ্ছে, গোপন কথা ফাঁস হয়ে গেছে। এই প্রবচনটি ইংরেজি প্রবাদ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। সুদূর অতীতকালে বৃটিশ সমাজে বস্তায় ভরে রাখা বিড়ালকে শুকরছানা বলে চালিয়ে দেয়া হতো । না দেখে বস্তা গুণে মাল কিনে বাড়িতে আনার পর দেখা যেত, শুকরছানা নয়, বস্তার মধ্যে বিড়াল। তাই 'থলে থেকে বিড়াল বেরিয়ে এলো' , এ কথার অর্থ হলো – রহস্য ভেদ হয়ে গেল। বিড়ালকে এখানে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে মূল্যহীন প্রাণি বলা হচ্ছে। এটা মেনে নেয়া বিড়ালপ্রিয় মানুষদের জন্য কঠিন। পশুপাখির দোকান থেকে অনেক দাম দিয়ে কিনে আনা বিড়ালের প্রতি এমন অসম্মান বরদাশত করা কঠিন।
কথায় আছে, বিড়াল সাদা হোক আর কালো হোক, তাতে কিছুই যায়-আসে না। সে ইঁদুর ধরে কিনা, এটাই বড় কথা । আজকাল আর ইঁদুর ধরার জন্য বিড়াল পোষা হয় না । বিড়াল একটা ঘরের সৌন্দর্য। এক-দুই জন মানুষের সংসারে সে একটা তৃতীয় প্রাণির উপস্থিতি – ঘরখানাকে সে প্রাণময় করে রাখে । ঘরের চেয়ে পর ভালো পরের চেয়ে বন । এমন যখন অবস্থা, তখন বিড়াল এক বিরাট আশীর্বাদ। আধুনিক ব্যস্ত জীবনে মানুষকে ডাকলেই কাছে পাওয়া যাবে , এমন নিশ্চয়তা নেই । যার যার ব্যস্ত কর্মক্ষেত্র – যার যার ব্যস্ত সাইবার জগত রয়েছে । সেখানে বিড়ালের মত ব্যক্তিত্বহীন সামাজিক প্রাণির অনেক প্রয়োজন । তাকে ডাকলেই কাছে আসবে , সঙ্গ দেবে । এ ছাড়া বানর ও বিড়ালের গল্পের মত বানরের কথায় বিড়াল নিজের হাত পুড়িয়ে আগুনের ভেতর থেকে বাদাম এনে দেবে । এমন বোকার নাম তাই দেয়া হয়েছে ‘ ক্যাটস প’ । শিয়ালের মত চতুর প্রাণিকে মানুষ ভালোবাসে না , কিন্তু সাদাসিধে স্বভাবের বিড়াল সবারই পছন্দ তালিকায় আছে । কাজেই অন্যের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে জীবনের প্রথম দিকে হোক , আর শেষের দিকে হোক , নিরীহ বিড়াল মেরে পাপ কুড়োনোর কোনো দরকার নেই ।
( সাবেক সিভিল সার্ভেন্ট , লেখক ও প্রবন্ধকার )
পাঠকের মতামত
জ্ঞানমূলক নিবন্ধ।
অসাধারণ লিখেছেন।
ফিলিস্তিনের কান্না......
খুব ভালো লাগলো।
very very nice.
মন্তব্য করুন
মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন
মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]