ঢাকা, ৩ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

আলোচনায় মেয়র হাউজ

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৩০ মে ২০২৩, মঙ্গলবারmzamin

 এক সময় ‘মেয়র হাউজ’ বলতে সিলেট নগরের মানুষ বুঝতেন ছড়ার পাড়ের সেই বাসা। যেখানে বাস করতেন সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।  ‘মেয়র সাব’ উপাধি ছিল তার। ১০ বছর আগে কামরানকে হারিয়ে অন্য গল্প রচনা করেন সিলেটের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এখন নগরের কুমারপাড়ার হাউজটি ‘মেয়র হাউজ’ বলে পরিচিত। ‘মেয়র সাব’ উপাধি দশ বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন আরিফুল হক চৌধুরী। আছে খ্যাতি ও জনপ্রিয়তাও। দলের কারণে এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নেই আরিফুল হক চৌধুরী। কিন্তু এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাকে নিয়ে এখনো সব জল্পনা। আলোচনায় নগরের কুমারপাড়া।

বিজ্ঞাপন
মেয়র আরিফের দিকে নজর এখন সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থীদের। তার দোয়া ও সহযোগিতা চান তারা। এ কারণে একদিনেই বাসায় গিয়ে মেয়র আরিফের দোয়া নিয়ে এসেছেন ভোটের মাঠে আলোচনায় থাকা দু’প্রার্থী আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। গত রোববার সকালে যান আনোয়ারুজ্জামান। আর রাতে যান নজরুল ইসলাম বাবুল। দু’জনই নির্বাচনে তার সহযোগিতা চেয়েছেন। ২০শে মে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন থেকে ঘোষণা দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে তার এই সরে যাওয়া। তবে- নির্বাচনের পরিবেশ, ইভিএম বিড়ম্বনা, নেতাকর্মীদের ধরপাকড়সহ নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি। এরপর ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

 তার এই সিদ্ধান্তে খুশি বিএনপি। নগরের মানুষও দ্বিমত করেননি। অনেকেই মর্মাহত হয়েছেন। কিন্তু আরিফের যুক্তির পাল্টা যুক্তি খুঁজে পাননি কেউ। ফলে তার সিদ্ধান্তকে সবাই মেনে নেন। আরিফ মাঠে নেই। নির্বাচন নিয়ে তিনি নীরব। মাঠ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণার পর কিছুটা সক্রিয় ছিলেন। বিএনপি’র কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট থেকে সরাতে কাজ করেন। এতে অন্তত ১৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যান। সিলেটের ভোটের মাঠে আরিফ’র ভোট ব্যাংকও নীরব। ভোটে যাবে কিনা- এ বিষয়টিও রহস্যঘেরা। সিগন্যাল পেলে যাবেন ভোটাররা। নতুবা ঘরে থাকবেন। নগর ভবন ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মেয়র আরিফ। সবকিছু গোছগাছ করছেন। কিছু উন্নয়ন কাজ চলমান আছে সেগুলো দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই অবস্থায় বলতে গেলে কিছুটা অবসর সময় কাটাচ্ছেন তিনি। ২০ শে মে পর্যন্ত আরিফুল হক চৌধুরীর কাজের নানা সমালোচনা করে যান আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণার পর আনোয়ার আর ‘অ্যাটাক’ করছেন না আরিফকে। বরং সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। নির্বাচিত হলে আরিফকে পাশে চান আনোয়ার। সেটি তিনি নানা অনুষ্ঠানেও বলছেন। গত রোববার সকালে হঠাৎ করেই মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বাসায় ছুটে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। মেয়রের বাসায় ঘণ্টাখানেক বসে আলোচনা করেন। সিলেট সিটির উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা আলোচনা হয়। প্রসঙ্গ ওঠে পারিবারিক। 

আলোচনার ফাঁকে মেয়র আরিফের কাছে দোয়া চান আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। পাশে থাকার আহ্বান জানান। সহযোগিতা কামনা করেন। মেয়র আরিফও দল এবং তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। এবং নির্বাচিত হলে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। মেয়র আরিফের কুমারপাড়ার বাসায় নৌকার প্রার্থীর উপস্থিতি এবং বৈঠকের খবর নগরের মানুষ ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। এবং এতে দু’জনই প্রশংসিত হন। কিন্তু নগরের চলছে ভোটের হাওয়া। ২রা জুন আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী বাবুলকে এখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। সেটি ইতিমধ্যে ভোটাররা ভাবনায়ও নিয়েছেন। বাবুলও দিনে দিনে উজ্জীবিত হচ্ছেন। আনোয়ারকে উদ্দেশ্য করে নানা কথা বলতে শুরু করেন। প্রতিপক্ষ হিসেবে আনোয়ারের চালের পাল্টা চালও দিচ্ছেন বাবুল। আরিফের সঙ্গে আনোয়ারের সাক্ষাতের দিন রাতেই তিনি ছুটে যান কুমারপাড়ার বাসায়। আনোয়ারের মতো তিনি একইভাবে মেয়র আরিফের সহযোগিতা কামনা করেন। আরিফের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন- রাতে জাতীয় পার্টির দু’জন নেতাকে নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল কুমারপাড়ায় যান। সেটিও আচমকা যাওয়া। এ সময় মেয়র আরিফ জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সঙ্গে একান্তে বসে আলোচনা করেন। নির্বাচিত হলে নগরের মানুষের স্বার্থে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে জানিয়েও দেন; ‘তার দল নির্বাচনে নেই। বিএনপি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন বর্জন করেছে। এবং দলের এই অবস্থানে তিনি অটল রয়েছেন।’ এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মিডিয়া শাখা থেকে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- নজরুল ইসলাম বাবুল ও আরিফুল হক চৌধুরী একে অপরের সঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশন, সিলেট নগর, সাম্প্রতিক রাজনীতি, আসন্ন নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা বলেন। বাবুল আসন্ন সিটি নির্বাচনে তার লাঙ্গল মার্কার পক্ষে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সার্বিক সহায়তা ও পরামর্শ প্রত্যাশা করেন। তারা বেশকিছু সময় একান্তে আলোচনা করেন।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status