শেষের পাতা
মানবজমিনকে আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী
সিলেটের নির্বাচনে থাকতে চাপ আছে
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৭ মে ২০২৩, শনিবারসিলেটে মাঠ প্রস্তুত থাকার পরও দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে সিটি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মেয়র ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। পরিবার থেকে মা কিংবা স্ত্রী কাউকেই প্রার্থী দেননি। ফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পথ প্রায় পরিষ্কার। শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই। তবু আওয়ামী লীগকে ভাবাচ্ছে জাতীয় পার্টি। এবারের সিটি নির্বাচনে সিলেটে প্রার্থী দিয়েছে দলটি। প্রায় এক বছর আগে দলে যোগ দেয়া শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুলকে এবার সিলেট সিটিতে প্রার্থী দিয়েছে। এ নিয়ে খোদ দলের ভেতরেও কাদা ছুঁড়াছুঁড়ি চললেও এখন বাবুলই রয়েছেন আলোচনায়। মুখে না বললেও তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে অস্বস্তি বাড়ছে।
সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাদের স্মরণে আছে ৯১’র উপজেলা নির্বাচন। ওই নির্বাচনে শক্তিশালী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন শামীম পরাজিত হয়েছিলেন ছক্কা ছয়ফুরের কাছে।
ইতিমধ্যে দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের’ অভিযোগ তুলেছিলেন আরেক প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় সদস্য মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। অভিযোগ তোলায় জাতীয় পার্টি থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সিলেটে বিদ্যমান রয়েছে রওশন এরশাদ গ্রুপের জাতীয় পার্টির নেতারা। ওই অংশের অবস্থানও শক্তিশালী। তবে রওশনপন্থি নেতারা এবার সিলেট সিটিতে লাঙ্গলের প্রতিপক্ষ না; বরং লাঙ্গলের পক্ষেই তারা কৌশলে কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
গতকাল জাতীয় নির্বাচনের জন্য গঠিত দলের সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভা হয়েছে। এই সভায় নেতারা লাঙ্গলের পক্ষে-বিপক্ষে কোনো কথা বলেননি। তবে রওশনপন্থি নেতারা শেষমূহূর্তে লাঙ্গলের প্রচারণায় নামতে পারেন বলে জানা গেছে। সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া নৌকার প্রার্থীর মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে প্রকাশ্যে ভোট প্রার্থনা করেছেন। এ কারণে এহিয়াকে কেন্দ্র থেকে শোকজ করা হয়েছে। এবার সিটি নির্বাচনে বাবুল প্রার্থী হলেও নেপথ্যে রয়েছেন সিলেট জাতীয় পার্টির অন্যতম শীর্ষ নেতা আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী। তিনি দলের পরিচিত মুখ। দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এখন তিনি দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা। প্রবীণ রাজনীতিবিদ। মূলত বাবুলের চেয়ে আব্দুল্লাহ সিদ্দিকীর ওপর ফোকাস বেশি।
গতকাল নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে মানবজমিনের সঙ্গে কথা বলেন আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী। খোলামেলা অনেক কথাই বললেন। গাজীপুরের সিটি নির্বাচনের ফলাফলের পর সরকারবিরোধী ভোটের ওপর আস্থা বেড়েছে তার। আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী জানিয়েছেন- ‘নির্বাচন থেকে না সরে যাওয়ার চাপ আছে। সেটি প্রশাসনিক কোনো চাপ না। ভোটের মাঠে থাকা ভোটারের চাপ। সবাই বলছেন; নির্বাচনে থাকতে। এ কারণে আমাদেরও মনোবল শক্ত হচ্ছে। শুরুতে প্রশাসনিক কিছু চাপ ছিল। এখন নেই। আমাদের অনুষ্ঠানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে।’ সিলেটে জাতীয় পার্টির ভোটব্যাংকের অবস্থান ব্যাখ্যা করে আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী জানান- ‘২০০৩ সাল থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হচ্ছে। আমরা বিগত ৪ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেইনি। ফলে সিলেটে আমাদের ভোটব্যাংক কেমন আছে সেটি জানি না। এটি জানতেই আমরা এবার নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছি। এ ছাড়া ২০০১ সাল থেকে সিলেট-১ আসনে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রার্থী নেই। ২০১৮ সালে নামমাত্র একজন ছিলেন। তিনি আলোচনায় ছিলেন না। ফলে নির্বাচনে দলের ভোটব্যাংক কেমন সেটি জানা জরুরি এ কারণে এবার প্রার্থী দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে এখন যেহেতু সিলেটের নির্বাচনে নৌকার প্রধান প্রতিপক্ষ লাঙ্গল সে কারণে আমরা মাঠের চাপ অনুভব করছি।’
তিনি জানান- ‘সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এই সরকারের ওপর চরম অসন্তুষ্ট। আর অসন্তুষ্টির প্রমাণ মানুষ ভোটের মাধ্যমে দিতে চায়। এ কারণে সিলেট সিটিতে এবার জাতীয় পার্টির অবস্থান ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি।’ সিলেট সিটিতে লাঙ্গলের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল একজন শিল্পপতি দাবি করে তিনি বলেন- ‘তার টাকা আছে। দলের নেতাকর্মীরাও সঙ্গে আছে। সময়ই বলে দেবে ভবিষ্যতে কী হয়। আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি এবং নির্বাচনের দিন যত এগুবে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারাও এসে মাঠে সক্রিয় হবেন। ইতিমধ্যে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিককে প্রধান করে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সিলেটে এসে নির্বাচনের সার্বিক বিষয় তদারকি করবেন।’