বাংলারজমিন
আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত তৃণমূল বিএনপি
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি
২৫ মে ২০২৩, বৃহস্পতিবার
বিএনপি ক্ষমতার বাইরে প্রায় দেড়যুগ। বর্তমান সরকারের তিন টার্ম এবং এর আগে দুই বছরের সেনাশাসন- সব মিলেই প্রায় দেড়যুগ। লম্বা এই সময়ের মধ্যে একাধিকবার সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল দলটি। কিন্তু কোনো বারই সফলতার মুখ দেখেনি। দলটির তৃণমূলের কর্মীরা বরাবরের মতো এখনো প্রস্তুত চূড়ান্ত আন্দোলনের। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের জমায়েত তৃণমূলের শক্ত অবস্থানকে তুলে ধরেছে। কিন্তু আন্দোলনের ডাক দিয়ে কেন্দ্র বিএনপি’র পিছু হটা তৃণমূলে কিছুটা বৈরী প্রভাব ফেলে। চাঙ্গা কর্মীরা হতাশায় পড়ে যায়। তৃণমূল বিএনপি কর্মীদের মধ্যে এখন কিছুটা আশঙ্কা- আন্দোলনের ডাক দিয়ে নেতারা আবার উধাও হয়ে যাবে না তো? দেশের উত্তর জনপদের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন হতাশার কথা শোনা গেছে। বিশেষ করে ২০১৩ সালে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি শেষে ২৪শে ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া ২৯শে ডিসেম্বর ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
ওই কর্মসূচিতে সারা দেশের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বাধা উপেক্ষা করে ঢাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন।
কথা হয় উত্তরের জেলা নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ফজলে হুদা বাবুলের সঙ্গে। তিনি মানবজমিনকে জানান, বিএনপি’র সাংগঠনিক ভিত্তি আছে কিন্তু আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত কোথাও তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরি করতে পারেনি। আমরা তৃণমূলে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সাংগঠনিকভাবে মজবুত আছি। তারেক রহমান যেকোনো সময় ডাক দিলে ৫-১০ হাজার কর্মী আধা ঘণ্টার মধ্যে বেরিয়ে আসবে। তিনি মনে করেন, এই সরকারের বিএনপি’র আন্দোলনের মধ্যদিয়েই পতন হবে। তৃণমূল বিএনপি আগামীর আন্দোলনের জন্য কতোটা প্রস্তুত? জানতে চাইলে উত্তরের আরেক জেলা গাইবান্ধা-৫ আসনের সম্ভাব্যপ্রার্থী এবং জেলা বিএনপি’র সদস্য কামরুজ্জামান সোহাগ মানবজমিনকে বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, আগামীর আন্দোলন হবে আমাদের বাঁচা-মরার লড়াই।
আমি ব্যক্তিগতভাবে ১৭টি ইউনিয়নের ১৪৩টি ওয়ার্ডের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সবাই ওয়াদা দিয়েছে দল আন্দোলনের ডাক দিলে তারা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়বে। সুতারং সাঘাটা-ফুলছড়ির জনগণ সরকার পতনের ১ দফা আন্দোলনের জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে। কথা হয় জয়পুরহাট জেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আন্দোলন সফল করার জন্য আমাদের যদি রাজশাহী যেতে হয় তাও যাবো, আবার ঢাকা যাওয়া লাগলে আমরা সেখানেও যাবো। আমরা জিয়া পরিবারের একনিষ্ঠ খাদেম। সরকার যতই নতুন নতুন কৌশলে দমন নিপীড়ন করুক না কেন আমরা অবিচল আছি শেষপর্যন্ত থাকবো। এদিকে বরাবরের মতো সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে গিয়ে এখনো পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে অনেক জেলা-উপজেলায়। নিজেদের দলীয় কার্যালয়েও বসতে দেয়া হচ্ছে না। এমন অভিযোগ করে সিরাগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ভিপি আয়নুল হক।
তিনি বলেন, সরকার পুলিশ দিয়ে এখনো আমাদের হয়রানি করছে। দলীয় কার্যক্রম চালাতে গিয়ে এখনো পুলিশের বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। তারপর সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক আসামাত্রই আমাদের নেতাকর্মীরা একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়বে। সাংগঠনিক মজবুতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। এদিকে বিএনপি’র আতুরঘর খ্যাত বগুড়ার তৃণমূল কর্মীরাও সজাগ হয়ে আছেন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নানা কর্মসূচিতে বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মী উপস্থিত হচ্ছেন। জেলা বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক এবং বগুড়া সদর আসনের সদ্য পদত্যাগ করা সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ পুরো জেলার আনাচে-কানাচে ঘুরে বেরিয়েছেন। সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। মামলা হামলার শিকার নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন। পরে নতুন জেলা কমিটি ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সাংগঠনিক ভীতকে আরও মজবুত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এই জেলার নেতাকর্মীরা চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। এ বিষয়ে বগুড়া জেলা বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক এবং সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। আন্দোলন ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ নেই। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের বলেছেন, দেশে আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে। এই সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে। মিথ্যাচারের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। পশ্চিমা বিশ্ব এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোও এই সরকারের ওপর কোনো বিশ্বাস নেই। এই মিথ্যুক সরকারের পতন ঘটানোর জন্য তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রস্তুত আছে।
পাঠকের মতামত
রাস্তার আন্দোলনে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে। বিএনপি-জামায়াত সেই ইতিহাসের নেতৃত্ব দিবে। ইনশাআল্লাহ
আহা, রাস্তার আন্দোলনে আউয়া পার্টি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মার খাবে কেন? 'রাজপথের লড়াকু সৈনিক'রা সব মারের ঠ্যালায় রাস্তায় শুয়ে পড়বে, আর নেতারা তো সব আগেই রাস্তা ধরে দৌড়ে পালাবে - কেউ এয়ারপোর্টের দিকে, কেউ বর্ডারের দিকে। বড় চমৎকার 'রাস্তার আন্দোলন' দেখতে পাবে লোকে।
সরকার পতন নিয়ে কি মূল্যায়ন আহা। এদের হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে বিএনপি যা খুশী করবে আর আওয়ামী লীগ দাড়িয়ে দাড়িয়ে মার খাবে। রাস্তার আন্দোলন সম্পর্কে সম্ভবতঃ এদের ধারণা নেই।
মন্তব্য করুন
বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন
বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]