ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

চীনের তুলনায় মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রে খরচ ১০ গুণ বেশি

মানবজমিন ডেস্ক
২ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার

জাপানের অর্থায়নে বাংলাদেশে কয়লাচালিত মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের খরচ চীনের তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গুণ। এমনকি এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই প্রকল্প। ইন্সটিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল এনালিস্টস (আইইইএফএ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি অর্থনীতি, জনসম্পর্ক সহ বিভিন্ন পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করে। এতে ‘আইইইএফএ: জাপান-ফান্ডেড মাতারবাড়ি কয়েল প্ল্যান্ট ইন বাংলাদেশ কস্টস ৮ টু ১০ টাইমস মোর দ্যান কমপ্যার‌্যাবল প্ল্যান্টস ইন চায়না’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ধারাবাহিকভাবে মূল্যবৃদ্ধি এবং প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করার কারণে এশিয়ায় কয়লাচালিত সবচেয়ে বেশি খরচের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে মাতারবাড়ি। এতে বলা হয় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে উপকূলীয় শহর কক্সবাজারে মাতারবাড়ি এবং মহেশখালি দুটি মিউনিসিপ্যালিটি বিদ্যুৎবিষয়ক একটি অবকাঠামো প্রকল্প সৃষ্টি করছে। এতে খরচ পড়বে ১.৫ ট্রিলিয়ন টাকা বা ১৮০০ কোটি ডলার। এটি হতে যাচ্ছে দেশে সবচেয়ে বড় পরিকল্পিত প্রকল্প। মাতারবাড়ি বন্দরে বাংলাদেশ প্রতিদিন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এক লাখ ১২ হাজার টন কয়লা এবং এলএনজি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতিদিন ১০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি লোড-আনলোড করার অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে আছে মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়েল-ফায়ারড পাওয়ার প্রজেক্ট।

বিজ্ঞাপন
সেখানে চারটি পর্যন্ত ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট আছে। এতে বড় পরিমাণে অর্থায়ন করছে জাপানি প্রতিষ্ঠান জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। তারা বলেছে, ২০২১ সালের নভেম্বর নাগাদ প্রকল্পের ফেজ-১ এর কাজের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২৪ সালে অপারেশনে যাওয়ার শিডিউল ছিল। কিন্তু তা ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিলম্বিত করা হয়। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে হলে বছরে আমদানি করতে হবে ৩৭ লাখ ৩০ হাজার টন কয়লা। এ থেকে যে বিদ্যুৎ তৈরি হবে তাতে বাংলাদেশের মোট বিদ্যুতের শতকরা ১০ ভাগ উৎপাদন হবে বলে বলা হচ্ছে। জাইকা তার বিবৃতিতে বলেছে, তাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে দ্রুত বিদ্যুতের চাহিদা যোগান দিয়ে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা। বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কয়েল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ সহ ডেভেলপারদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়ন সহযোগিতা হিসেবে এরই মধ্যে তারা সরবরাহ করেছে ১৪৮ কোটি ডলার। 
বিশ্বজুড়ে আস্তে আস্তে কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনা হচ্ছে। সারাবিশ্বে কয়লাচালিত একই রকম প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত করা হচ্ছে। চীনের রাষ্ট্র মালিকানাধীন কয়লা উৎপাদনকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান শেনহুয়া এনার্জি থেকে প্রাপ্ত তথ্য মাতারবাড়ি কয়লা উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের উচ্চ মূল্য সম্পর্কে বুঝতে সহায়তা করে। 
২০২০ এবং ২০২১ সালে শেনহুয়া এনার্জির দেয়া রিপোর্টে একই রকম চারটি প্রকল্প যার সক্ষমতা ১৩২০ মোগাওয়াট থেকে ২০০০ মেগাওয়াট- তার বিষয়ে তথ্য দেয়া হয়েছে। তুলনামূলকভাবে মাতারবাড়িতে দুটি ইউনিটের বিপরীতে ৩৬০০০ কোটি টাকা বা ৪২০ কোটি ডলার খরচ ছিল। এই হিসাব বাংলাদেশ সরকারের ২০১৪ ও ২০১৫ অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী। এই খরচ ২০২১ সালের নভেম্বরে রিভাইস করে বাড়ানো হয়েছে। বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫১০৭০ কোটি টাকা বা ৬০০ কোটি ডলার। 
প্রতি মেগাওয়াট সক্ষমতার ভিত্তিতে এই খরচ ৫০ লাখ ডলার। অন্যদিকে চীনে একই আকারের চারটি প্ল্যান্টে এই খরচ ৪৮৮-৬৫৭,০০০ ডলার। অথবা বলা যায়, চীনের চেয়ে আট থেকে দশগুণ বেশি খরচ হচ্ছে বাংলাদেশে। 
এই খরচ বৃদ্ধির জন্য নানারকম কারণ দেখানো হয়। তার মধ্যে রয়েছে সুযোগ-সুবিধা, কন্ট্রাক্টিং খরচ, সরঞ্জামের দাম। 
মাতারবাড়ি প্রকল্পের জন্য জাপান ও কোরিয়ান সরঞ্জামের তুলনায় চীনে তৈরি সরঞ্জাম ব্যবহার করছে চায়না শেনহুয়া। যদিও এক্ষেত্রে দামে প্রিমিয়াম থাকা উচিত, তবু প্রতি মেগাওয়াট সক্ষমতায় পার্থক্য দাঁড়াচ্ছে আট থেকে দশগুণ বেশি। উপরন্তু চীনের ৫টি সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীর অন্যতম চায়না গুডিয়ান করপোরেশনের অংশ হিসেবে চায়না শেনহুয়া এনার্জির আছে নিজস্ব কন্ট্রাক্টিং ডিভিশন, যা অর্থ সেভ করতে পারে। 
চীনের চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে তিনটিই দেশের ভেতরে এবং তা কোনো বন্দরের সুবিধা পায় না। সেখানে হয়তো এ জন্য নির্মাণ খরচ কম পড়েছে। পক্ষান্তরে মাতারবাড়ি ফেজ-১ এর ক্ষেত্রে একটি যুক্তি দেখানো হচ্ছিল সেখানে বন্দর এবং কয়লা হ্যান্ডেলিং সুবিধা পাওয়া যাবে। একই সুবিধা ব্যবহার করা হবে মাতারবাড়ি ফেজ-২ তে। যেহেতু জাপানের কোম্পানি সুমিতোমো করপোরেশন মাতারবাড়ি ফেজ-২ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে ক্রমশ সংশয় ঘনীভূত হচ্ছে যে, আদৌও কি এই অবকাঠামোর এই ফেজের নির্মাণকাজ শেষ হবে কিনা। 
নতুন করে অনিশ্চয়তা শুধুই এক্ষেত্রে খরচ বাড়িয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে জাইকা রিপোর্ট করেছে যে, বাংলাদেশ তাদেরকে বাজেট বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে এবং দেশে যে ৩৩টি প্রকল্পে তারা অর্থায়ন করছে তা শেষ করতে বলছে। এর মধ্যে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্যতম। ওদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে কয়লা এবং এলএনজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অপারেটিং খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিত্যক্ত সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। এসব হিসাবে মাতারবাড়ি প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি পাবে অনেক। 
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status