প্রথম পাতা
বাড্ডায় বিএনপি নেতা খুন
গোয়েন্দাজালে আসামিরা
শুভ্র দেব
৩১ মে ২০২৫, শনিবার
ঢাকার বাড্ডা এলাকায় বিএনপি নেতা কামরুল আহসান সাধন হত্যার ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ঘাতকদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া কী কারণে এই নেতাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তার কারণও সঠিকভাবে বলতে পারছে না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে বেশ কিছু ক্লু নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কাজ করছে। তবে থানা পুলিশ ও র্যাবের তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। শুধুমাত্র ডিবি এই হত্যাকাণ্ডের ঘাতকদের শনাক্ত করে তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়েছে।
গুলশান থানা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক সাধনকে কেন হত্যা করা হয়েছে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু কারণ শনাক্ত করেছেন। আসামি গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করা হবে। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ মনে করছেন, সাধন হত্যার পেছনে বড় কারণ হতে পারে টেলি সুমন হত্যা। কারণ গত ২১শে মার্চ গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনের সড়কে সুমন মিয়া ওরফে টেলি সুমন (৩৩) নামের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। সুমন মিয়া ছিলেন বাড্ডা এলাকার সন্ত্রাসী মেহেদী গ্রুপের অনুসারী। তাকে গুলি করে হত্যা করেছিল রবিন, ডালিম ও মাহবুব গ্রুপের লোকেরা। মাহবুবের মামা ছিলেন সাধন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র ও স্থানীয় নেতারা মনে করছেন, বহু দিন ধরে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় ইন্টারনেট ব্যবসা, ডিশ সংযোগ, মাদক ব্যবসা, আবাসন ব্যবসা, দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের বৈধ অবৈধ ব্যবসা নিয়ে অন্তত তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। আধিপত্য বিস্তার ও ব্যবসা বাণিজ্যর দখল নিতে তিনটি গ্রুপই মরিয়া। দেশি-বিদেশি অস্ত্রের মহড়া, প্রতিপক্ষকে হুমকি, মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা হরহামেশা হচ্ছে। আর এসব ব্যবসা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারে অন্তত তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপই কাজ করে। এরমধ্যে রবিন-ডালিম-মাহবুব গ্রুপ, মেহেদী গ্রুপ ও জিসান গ্রুপ রয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে অস্ত্রধারী অর্ধশতাধিক করে সদস্য রয়েছে। পুলিশের খাতায় তারা সবাই অপরাধী। গ্রুপের সদস্যরা মানুষ খুন থেকে শুরু করে সব ধরনের অপকর্ম করে। জিসান গ্রুপ পরিচালনা করে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান। দুবাই বসে তিনি তার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। আর মেহেদী গ্রুপের মহেদী যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করেন। আর রবিন-ডালিম-মাহবুব গ্রুপের রবিন, ডালিম ও মাহবুব থাকেন মালয়েশিয়ায়। তিনটি গ্রুপই রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে উঠেছে। যখন যারা ক্ষমতায় আসে তাদের সঙ্গে সখ্যতা রেখে তারা অপকর্ম করে।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে বাড্ডার ডিশ, ইন্টারনেট, চাঁদাবাজি, আধিপত্য, বিস্তারসহ আরও কিছু কারণে তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। সবাই নিজেদের পেশি শক্তির প্রদর্শন করে নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে। কিন্তু কোনো গ্রুপই ছাড় দিতে রাজি নয়। আধিপত্য বিস্তারের জেরে তারা খুনখারাবি করতেও পিছপা হচ্ছে না। টেলি সুমন হত্যার পর থেকে বাড্ডায় অস্থিরতা চলছে। বিএনপি নেতা সাধন অন্তত ২০ বছর ধরে বাড্ডা এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা করেন। পাশাপাশি তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। সমপ্রতি কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি আবাসন নির্মাণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেন। কয়েক মাস আগে গুলশানে ডিএনসিসি মার্কেটে একটি দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন। ঘটনার দিন তিনি সারাদিন গুলশানেই ছিলেন। বাসায় ভাত খেতে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি সময় করতে পারেননি। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসায় আসার পর তার মোবাইলে একটি কল আসলে বেরিয়ে যান। তার কিছুক্ষণ পরেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। স্থানীয়রা জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাধন গুদারাঘাট এলাকার একটি চায়ের দোকানে বসে তিন বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তখন গুলশান লেকপাড় থেকে হেঁটে আসা দুই যুবক কোমর থেকে পিস্তল বের করে পেছন থেকে সাধনকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ওই দুই যুবকের সঙ্গে আরও দুই যুবকও সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়েছে।
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, তদন্তে এখন পর্যন্ত তেমন অগ্রগতি নাই। আমাদের টিম কাজ করে যাচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দুই আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তাদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, আমাদের গোয়েন্দা টিমসহ ব্যাটালিয়ন এটা নিয়ে কাজ করছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ কামরুল হাসান মানবজমিনকে বলেন, আসামিরা আমাদের নজরদারিতেই আছে। কাজ চলছে। আশা করছি দ্রুত গ্রেপ্তার করা যাবে।