প্রথম পাতা
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে আজ
স্টাফ রিপোর্টার
১ জুন ২০২৫, রবিবার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হবে আজ। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের এই প্রক্রিয়া ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। হাসিনার পাশাপাশি অন্য অভিযুক্তরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গুম প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ উপলক্ষে ‘গুমের সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে বিচার কর’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় শেখ হাসিনাকে ‘গুম ও আয়না ঘরের নিউক্লিয়াস’ বলে উল্লেখ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দাখিল করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, বিচারের কাজ পুরোদমে এগোচ্ছে। তবে, তদন্ত শেষ করতে যুক্তিসঙ্গত সময় লাগবে। এ সময় ১০ থেকে ১৫টি উল্লেখযোগ্য গুমের ঘটনার তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। জুন মাসের মধ্যে প্রতিবেদনগুলো পাওয়া যাবে। বিচারের ক্ষেত্রে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাবে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনাকে ‘গুম ও আয়না ঘরের নিউক্লিয়াস’ বলে উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা অনেকটা দূর হয়েছে। অপরাধের কাঠামো এবং অপরাধী সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মোটাদাগে তথ্য চিহ্নিত করতে পেরেছে। তবে, গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে কিছুটা বাধা থেকে গেছে। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার নিশ্চিতের বিষয়ে আমরা কাজ করছি।
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, আজকের যে প্রেক্ষাপট, যদি ৫ই আগস্ট না হতো তাহলে ব্যারিস্টার আরমান কিংবা মাইকেল চাকমাকে আমরা দেখতে পেতাম না। গুমের সংস্কৃতি বন্ধ হয়েছে ৫ই আগস্টের কারণে। বিগত সরকারের আমলে ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে ১৬ মাস লেগেছিল। যদিও হাসিনার অপরাধের তুলনায় সেই অপরাধ সামান্য ছিল। এই ছয় মাসে বিচার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে আমরা নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের মধ্যে থেকে অনেকে পবিত্র হজ পালন করতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে আমরা হজে যাওয়া পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছি। আগে বিচারটা হোক।
তাজুল ইসলাম জানান, বিচারের ক্ষেত্রে তারা খুবই সাবধানতা অবলম্বন করছেন। তিনি বলেন, বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রক্ষা করা, মানবাধিকার রক্ষা করা, বিচারের নামে অবিচার যাতে না হয়, যেগুলো অতীতে হয়েছে সেগুলো যেন না হয়, সে বিষয়ে তারা সতর্ক থেকে বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ই মে শেখ হাসিনার মামলার তদন্ত শেষ হয়। ওইদিন প্রসিকিউশন অফিসে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ১৫০০ মানুষকে হত্যা, মরণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে ২৫,০০০ মানুষকে আহত, নারী ও শিশুদের টার্গেট করে আক্রমণ করাসহ নানা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। হেলিকপ্টার-মারণাস্ত্র দিয়ে গুলি করে আন্দোলনকারীদের নিশ্চিহ্ন করার নির্দেশসহ পাঁচটি অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। এসব অপরাধ সংগঠনে শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশ ও বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়ার প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। একইসঙ্গে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধেও মিলেছে একই অপরাধের প্রমাণ।
পাঠকের মতামত
এই বিচার দেখার জন্য পুরো জাতি অপেক্ষায় আছে।