মত-মতান্তর
সোনা জিলাপি এবং ইফতার নিয়ে হাসি-তামাশা
যুক্তরাজ্য থেকে ডাঃ আলী জাহান
(৫ মাস আগে) ১১ এপ্রিল ২০২৩, মঙ্গলবার, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৩১ পূর্বাহ্ন

১. গতকাল ছিল ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব (এমবিই) সমাজ সচেতন এবং বন্ধু বৎসল ফয়েজ উদ্দিন সাহেবের বাসায় ইফতারের দাওয়াত। অধিকাংশই স্থানীয় হলেও আমাকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার ড্রাইভ করে তাঁর এই ইফতার মাহফিলে শরিক হতে হলো। উপস্থিত ১২ জন ডাক্তারই নিজ নিজ অবস্থানে উজ্জ্বল। অনুষ্ঠানে ডাক্তার ছাড়াও অন্য পেশার প্রতিষ্ঠিত লোকজন উপস্থিত ছিলেন। শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকেই উপস্থিত ছিলাম আমরা তিনজন।
২. যারা ওখানে উপস্থিত ছিলেন তাদের মাসিক বা বার্ষিক আয় কত? বার্ষিক আয় গড়ে (প্রাইভেট প্র্যাকটিস ছাড়া) প্রায় দু’ কোটি টাকা হয় এমন লোকজনের সংখ্যাই ছিল বেশি। আর ফয়েজ ভাইয়ের যে বাসা তার মূল্য তো বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাত কোটি টাকা হবে।
৩. আতিথেয়তা ছিল দেখার মত। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ যেসব আইটেম দিয়ে ইফতার করে ঠিক সে আইটেমগুলোই ছিল। ইফতার সামগ্রীর মধ্যে জিলাপিও ছিল। তবে সে জিলাপি সোনায় মোড়ানো ছিল না। ইচ্ছে করলেও ফয়েজ ভাইয়ের পক্ষে সোনার জিলাপি দেওয়া সম্ভব ছিল না।
৪. তবে সোনায় মোড়ানো জিলাপি বাংলাদেশে তৈরি হয়। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল বিশ হাজার টাকা কেজি দরে এই বিশেষ জিলাপি বিক্রি শুরু করলে ক্রেতাদের তীব্র চাহিদার কারণে তরল সোনা না থাকায় এ বিশেষ জিলাপি বিক্রি সোমবার বন্ধ করতে হোটেল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়।

৫. আচ্ছা তরল সোনা খেলে কী হয়? পরিপাকতন্ত্রে কি বিশেষ কোন অনুভুতি আসে?যারা এই বিশেষ সোনা জিলাপি ভক্ষণ করেছেন তারা কী আমাদের একটু বলবেন? যদি বলেন তাহলে সামনের বার ফয়েজ উদ্দিন এমবিই’র বাসায় ইফতারের দাওয়াত নেওয়ার আগে সোনা জিলাপি রাখার আবদার জানাবো। সমাজের এতো ধনী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের ইজ্জতের দিকে খেয়াল রেখে উনার উচিৎ হবে প্লেটে সোনা জিলাপি রাখা। আর উনি যদি বলেন যে, সোনা জিলাপি কেনার সামর্থ্য নেই তাহলে বুঝতে হবে বাংলাদেশে শুধু রাজধানীতেই বার্ষিক ২ কোটি টাকা আয়ের লোক সংখ্যা হাজার হাজার। আসলে ইংল্যান্ডের লোকজনই মিসকিন।সব রাজা বাদশাহরা থাকেন বাংলাদেশে।
৬. বাংলাদেশের মানুষের রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। নিরেট একটি ইসলামী ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে (ইফতার মাহফিল) হাসি-তামাশার বস্তু বানানোর জন্য একদল লোক উঠে পড়ে লেগেছে। আল্লাহ খোদায় বিশ্বাস নেই, প্রকাশ্য নাস্তিক এমন লোকজনও দেখছি ইফতার বানাচ্ছে, ফেসবুকে লাইভ দিচ্ছে, সংবাদ মাধ্যমে ছবি এবং খবর পাঠাচ্ছেন। ব্যক্তিগত জীবনে ইসলাম চর্চার উদাহরণ নেই, কিন্তু ইফতার নিয়ে উৎসাহের শেষ নেই। কেন? বাংলাদেশের ধর্ম প্রিয় মানুষকে একটু শান্তভাবে রমজানটা পার করতে দিলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে? ইসলামের মৌলিক বিধান নিয়ে হাসি তামাশা করা বন্ধ করুন।
৭. ভালো কথা, বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোন দেশে সোনা জিলাপি তৈরি এবং বিক্রি হলে আপনারা আমাকে দয়া করে জানাবেন। পরবর্তী ইফতার মাহফিলের জন্য সোনা জিলাপির কথা ফয়েজ ভাইকে অগ্রিম বলে রাখতে হবে।
ডাঃ আলী জাহান
কনসালটেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট, যুক্তরাজ্য
পাঠকের মতামত
ইউক্রেনে অঘোষিত সফরে গিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। কিয়েভ সফরে গিয়ে তিনি কাখোভকা বাঁধ গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে দেশটির সমালোচনা করেছেন। ওই বাঁধ গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর খেরসন অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
বাংলাদেশে আমি কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম। এখনো অনেক ভালো, দয়ালু আর পরপোকারী লোক আছেন । তবে প্রচুর expensive restaurant আছে এবং সেগুলোতে সবসময় লোক থাকে। কিছু লোকের হাতে অনেক টাকা আছে আবার কিছু লোকের হাতে কিছুই নাই । তা হলেও বাংলাদেশ আমাদের দেশ। কিছু লোকের কারণে তো দেশ বা দেশের মানুষকে অবমুল্যায়ন করা যায় না । আর আপনি বলছেন লন্ডনের ডাক্তারদের ইনকাম এবং বাড়ীর মুল্যের কথা। এটা যদি না বলে লেখাটা লিখতেন তাহলে ভালো হোত। আল্লাহ খুশী হতেন। ইফতারের মত এত সুন্দর পবিত্র একটা বিষয় নিয়ে লিখতে গিয়ে আপনি টাকাপয়সার কথা টেনে এনে অহংকার প্রকাশ করেছেন যা আল্লাহর খুবই অপছন্দ । প্রায় বিশ বছর কানাডাতে থাকি ,UBC হসপিটালের কনসালটেন্ট। ছয় সাত এমনকি দশ কোটি টাকার বাড়ীর কথা যে বলেছেন সেটা কিন্তু ডলারে 800,000 to a bit more a million CAD. এটা কিন্তু কোন বড় কিছু নয় ।
সোনা জিলাপি নিয়ে এত লিখালিখি'র কি আছে যার পয়সা আছে সে খাবে, আর যার নাই সে খাবেনা। এরকম অনেক কিছুই তো হর হামেশা চলছে! এই করপোরেট যুগে এটা কোন সংবাদও না বড় কোন বিষয়ও না। কথায় বলে শখের তোলা আশি আনা।
ভাই আমাকে একটু রুপোর ঝিলাাপি খাওয়াতে পারলে ভালো হতো।
২০ হাজার টাকা দিয়ে ১ কেজি জিলাপি অবৈধ উপার্জন ছারা কেউ কিনবেনা
গরিব, মেহনতি, শ্রমিক, মজদুর লোকদের ঘামের টাকা কলমের খোঁচা মেরে, ডাকাতি করে, চুরি করে, যারা বড়লোকি দেখায় তাদের চেয়ে ছোট লোক আর কেউ আছে বলে আমার মনে হয় না। বাংলাদেশে কত ফ্যামিলি আছে থাকার জায়গা নেই, ফুটপাতে থাকে। কত সন্তান চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে। কত বাবা তার সন্তানদের ভালো জামা কাপড় দিতে পারছে না। কত বাবা মা তাদের সন্তানদের আবদার পুরা করতে পারছে না। কত বাবা মা তাদের সন্তানদের প্লেটে খাওয়া দিতে পারছে না। কেন পারছে না। একটু চিন্তা করুন। তাদের প্লেটের খাবারটা ওই শিক্ষিত নামের ডাকাতরা, বড় লোক নামের চোরগুলো, ডাকাতি আর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। কোন একটা ছেলে, টোকাই যদি পেটের দায়ে ১০ টাকা চুরি করে তাকে ধরে বেঁধে মারা হয়, পিটানো হয়, ঘৃণা করা হয়। এলিট শ্রেণীর কিছু লোক অন্যায়ভাবে, দুর্নীতি করে, চুরি করে এসব গরিব দুঃখী মানুষের অর্থ সম্পদ লুট করে নিয়ে বড়লোকি দেখাচ্ছে, তাদেরকে কি বলা যায়? এটা মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। করুনা হয় তাদের প্রতি। দুনিয়াতে তারা পার পেয়ে যাবে, যাচ্ছে, তাতেই কি শেষ? না এতে শেষ না। সেজন্যই তো পরকাল। সেখানে পাই পাই করে হিসাব দিতে হবে। আজকে যাদেরকে ছোটলোক, গরিব, অশিক্ষিত মনে করা হচ্ছে, কালকে তারাই হবে বড় লোক, শিক্ষিত, এলিট। তখন নিজেদের গোশত চিবিয়ে খেলে ও কাজ হবে না। তবে না, দুনিয়াতে ও তারা যে খুব একটা সুখী তা কিন্তু না। কারণ অন্যকে কষ্ট দিয়ে, অন্যের অধিকার নষ্ট করে কেউ শান্তি, সুখ পেতে পারে না।
বাংলাদেশের অনেক মানুষ এখনো শুধু গমভাজা দিয়েই ইফতার করেন। তাঁদের কাছে ' সোনার জিলাপি ' উপহাস ছাড়া আর কিছুই নয়।
মন্তব্য করুন
মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন
মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]