অনলাইন
ট্রাম্পের অভিযোগ প্রমাণ করতে 'প্রসিকিউটরিয়াল বিচক্ষণতা' প্রয়োজন
মানবজমিন ডিজিটাল
(২ মাস আগে) ২২ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ৩:৪৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৯ পূর্বাহ্ন

একজন পর্ন অভিনেত্রীকে লুকিয়ে অর্থ প্রদানের জন্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড জে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন ম্যানহাটনের জেলা অ্যাটর্নি। অভিযোগগুলি যথাযথ হলে প্রসিকিউটররা কীভাবে মামলাটি এগিয়ে নিয়ে যাবেন তা নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা চলছে। ইস্যুটির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ‘প্রসিকিউটরদের বিচক্ষণতা’ অর্থাৎ কীভাবে তারা ন্যায়বিচারের দিকে এগোবেন । ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি, অ্যালভিন এল. ব্র্যাগ-এর দ্বারা আনা মামলার বিষয়ে জনসাধারণের উপলব্ধি এবং বিশেষ করে তিনি কোন অন্তর্নিহিত অপরাধের দিকে ইঙ্গিত করেছেন যাতে নিউ ইয়র্কের একটি আইনকে সেই অপরাধের আওতায় আনা যায় সেটি গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই মামলাটি এগিয়ে নিয়ে যেতে আইনজীবীরা কিছু সমস্যার মুখে পড়তে পারেন। সেই পটভূমিতে ট্রাম্প এবং তার সহযোগীরা ডেমোক্র্যাট ব্র্যাগকে পাল্টা অভিযুক্ত করেছেন। তাদের দাবি রাজনৈতিক অনুপ্রেরণা দ্বারা চালিত হচ্ছেন ব্র্যাগ এবং আইনকে অন্যায়ভাবে প্রয়োগ করছেন। এমনকি কিছু আইনি বিশেষজ্ঞ যারা ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন তারা সতর্ক করে বলেছেন, মামলার সত্যতা এবং ব্র্যাগ যে অভিযোগ এনেছেন সে সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেছে।
প্রসিকিউটরিয়াল বিচক্ষণতা কী?
আমেরিকান বিচার ব্যবস্থায় প্রসিকিউটরদের এই ক্ষমতা দেয়া আছে। এমনকি অপরাধ সংঘটিত হলেও এর মাধ্যমে রাষ্ট্র এবং ফেডারেল উভয় স্তরেই একটি মামলা না আনার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেয়া আছে প্রসিকিউটরদের হাতে । ফৌজদারি মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন অভিযোগ আনা হবে এবং কোনটি বরখাস্ত করা হবে তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা দেয়া আছে প্রসিকিউটরদের হাতে।
এর উদ্দেশ্য কী?
প্রসিকিউটরদের এত বিস্তৃত ক্ষমতা দেওয়ার পিছনে একটি কারণ হলো ফৌজদারি আইনগুলি বিস্তৃতভাবে লিখিত হয় এবং সর্বদা প্রতিটি পরিস্থিতির জন্য হিসাব করে তৈরি করা হয় না। তাই কখনও কখনও অভিযোগ না এনে ন্যায়বিচারের স্বার্থর ওপর জোর দেয়া হয়। আরেকটি বিষয় হলো , প্রসিকিউটর এবং আদালতের কোনো মামলা আনার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব থাকলে প্রসিকিউটরদের বিচক্ষণতার প্রয়োজন হয়।
সিলেক্টিভ বা নির্বাচনী প্রসিকিউশন কী?
এটি প্রসিকিউটরিয়াল বিচক্ষণতার অপর একটি দিক। যদি প্রসিকিউটররা একই ধরনের অপরাধ করে এমন এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করলেও অন্য আসামিকে মুক্তি দেয় তখন তাকে নির্বাচনী প্রসিকিউশন বলে। আইনের শাসনের অধীনে একজন সাধারণ মানুষের সাথে যে আচরণ করা উচিত একজন আমলার সাথেও একই আচরণ করা প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নির্বাচনী প্রসিকিউশন সমান সুরক্ষা ধারা লঙ্ঘন করে যদি একজন আসামিকে অন্য সম্ভাব্য ব্যক্তিদের থেকে আলাদা করা হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে জাতি, ধর্ম বা অন্যান্য অযৌক্তিক মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ।
ট্রাম্প মামলার ক্ষেত্রে এরকম কোনো সম্ভাবনা আছে কি?
ব্র্যাগ -এর আনা এই মামলা নিয়ে আদালতে লড়াই করা সহজ বিষয় নয়। ২০১১ সালে ওবামার শাসনকালে বিচার বিভাগ প্রাক্তন সিনেটর এবং ডেমোক্র্যাটিক ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জন এডওয়ার্ডসকে ২০০৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রচারণার অর্থ সংক্রান্ত অপরাধ এবং একজন সমর্থকের অর্থ প্রদানের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিল। মামলার সাথে এক নারী সম্পৃক্ত ছিলেন । জুরি বোর্ড তাকে একটি অভিযোগ থেকে খালাস করে, তবে বাকি অভিযোগের জন্য পুনর্বিচার করা হয়নি। ২০১৮ সালে ট্রাম্প-যুগে বিচার বিভাগ ট্রাম্পের প্রাক্তন আইনজীবী এবং ফিক্সার মাইকেল ডি. কোহেনকে অভিযুক্ত করেছিল। তিনি ২০১৬ সালের অক্টোবরে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার প্রদান করেছিলেন এবং তারপরে ট্রাম্প সংস্থার দ্বারা সেই অর্থ পরিশোধ করা হয়েছিল। কোহেন ফেডারেল ক্যাম্পেইন ফাইন্যান্স আইন লঙ্ঘন সহ বেশ কয়েকটি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন এবং কারাগারে যান। সেই মামলায় আদালতে ফাইল করা হয়েছে, কোহেন ট্রাম্পের সাথে সমন্বয় করে এবং তার নির্দেশনায় কাজ করেছিলেন। সেই সময়ে ট্রাম্প, একজন রাষ্ট্রপতি হিসাবে, বিচার বিভাগের নীতির অধীনে সাময়িকভাবে মুক্ত ছিলেন। বাইডেন যুগের বিচার বিভাগ ট্রাম্পের অফিস ছেড়ে যাওয়ার পরে তার বিরুদ্ধে অনুরূপ ফেডারেল প্রচারণার অর্থের অভিযোগ আনার কথা বিবেচনা করেছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্প কীভাবে নির্বাচনী বিচার দাবি করতে পারেন?
যদি ট্রাম্প অভিযুক্ত হন, তবে তার আইনজীবীরা এই ধরনের মামলার বিরল নজিরের কথা উল্লেখ করে নির্বাচনী প্রসিকিউশনের ভিত্তিতে অভিযোগ খারিজ করার জন্য একটি প্রস্তাব দায়ের করতে পারেন। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্বাধীন কাউন্সেল তদন্তের একজন প্রাক্তন প্রসিকিউটর পল রোজেনজওয়েগ বলেছেন যে তিনি যখন শুনেছিলেন ট্রাম্পের কারাগারে যাওয়া উচিত, তখন তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন এই ভেবে যে হয়তো কোনো ভুল মামলা দায়ের করা হয়েছে । কারণ এর আগে কর ফাঁকি, হত্যার অভিযোগ সহ বেশ কিছু মামলায় ট্রাম্পকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল।
ট্রাম্পের দাবি কি আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে?
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভবত না। এটি পরিষ্কার নয় যে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময়ে নিউ ইয়র্কবাসীরা একটি পর্ন স্টারকে চুপচাপ অর্থ প্রদানকে কী চোখে দেখবেন। অ্যাঞ্জেলা জে. ডেভিস, একজন আমেরিকান ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক এবং প্রাক্তন পাবলিক ডিফেন্ডার যিনি প্রসিকিউটরিয়াল বিচক্ষণতার বিষয়ে লিখেছেন, তিনি সম্মত হয়েছেন যে মামলাটি খারিজ করার জন্য যেকোন আদালতে ট্রাম্পের আবেদন জানানো কঠিন হবে। কারণ তাঁর মতে সিলেক্টিভ প্রসিকিউশন প্রমাণ করা সত্যিই কঠিন একটা বিষয়।
সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস