শেষের পাতা
এডভোকেট রিগ্যান কি পরীক্ষার হলে বসতে পারবেন?
রাশিম মোল্লা
২১ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার
সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট সালাউদ্দিন রিগ্যান। জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলএম প্রোগ্রামের ব্যাংকিং ল’ অ্যান্ড কর্পোরেট পলিসি প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী। আগামী ২৪শে মার্চ তার দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে সংঘটিত ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে আইনজীবী সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসানের দায়ের করা মামলায় তাকে আসামি করা হয়। মামলায় সমিতির নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছিনতাই, হট্টগোলের অভিযোগ করা হয়। ওইদিন রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর দোয়েল চত্বর থেকে ডিবি পুলিশ রিগ্যানকে আটক করে। গত রোববার ওই মামলায় আদালত প্রথমে তার ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলেও পরে আদেশ রিকল করে রিমান্ড বাতিল করে আদেশ দেন। একইসঙ্গে রিগ্যানকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।
এ ব্যাপরে এডভোকেট সালাউদ্দিন রিগ্যানের স্ত্রী এডভোকেট তাহেরা খাতুন মানবজমিনকে বলেন, গত ১৫ই মার্চ সুপ্রিম কোর্টে ভাঙচুরের ঘটনায় রিগ্যানের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট বারের পক্ষ থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান একটি মামলা দায়ের করেন। ওইদিন রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর দোয়েল চত্বর থেকে ডিবি পুলিশ তাকে আটক করে। পরদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ রিগ্যানকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রিগ্যানের স্ত্রী বলেন, ভঙচুরের ঘটনায় রিগ্যান কোনোভাবেই জড়িত নন। কোনো ওপর মহলের নির্দেশে তাকে এই মামলার আসামি করা হয়েছে। কোনো অপরাধ না করেও রিগ্যান ৬ দিন ধরে কারাগারে। তবে গত রোববার সুপ্রিম কোর্ট বারের পক্ষে দায়ের করা মামলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট আদালতে জামিন শুনানি হয়। আদালতে তার পক্ষে ফারজানা ইয়াসমিনসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আদালত শুনানি শেষে রিগ্যানের জামিন মঞ্জুর করেন। দ্রুত জিআরও শাখায় বেলবন্ড দাখিল করি। হঠাৎ করে ডেসপাস থেকে জানানো হয় তার নামে আরও একটি মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আবেদন রয়েছে। আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। এ খবর শুনে দ্রুত আবার জিআরও শাখায় যোগাযোগ করি। তখন তারাও জানান, তার নামে থাকা অন্য মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আবেদন করা হয়েছে। ২১শে মার্চ ওই মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রিগ্যান জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলএম প্রোগ্রামের ব্যাংকিং ল অ্যান্ড করপোরেট পলিসি পোগ্রামের শিক্ষার্থী। আগামী ২৪শে মার্চ দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হবে। সুপ্রিম কোর্টে ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে রিগ্যান কোনোভাবেই জড়িত নন। আশা করি আদালত তাকে জামিন দিয়ে পরীক্ষার হলে বসার সুযোগ করে দেবেন।
জামিন আবেদনে বলা হয়, আসামি রিগ্যান সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং পরিস্থিতির শিকার। অত্র মামলার ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। আসামিকে ইচ্ছাকৃতভাবে হয়রানি করার জন্য অত্র মামলায় জড়িয়েছেন। আসামি ঢাকা আইজীবী সমিতি ও সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির একজন নিয়মিত সদস্য। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে লক্ষীপুর-২ আসনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে এমপি পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। আগামী ২৪শে মার্চ তার জাতীয় কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহে ব্যাকিং ল অ্যান্ড কর্পোরেট পলিসির মাস্টার্স পরীক্ষা। আসামি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাইরে অন্য কারও আদর্শে বিশ্বাসী নন।
নথি থেকে জানা যায়, গত ১৬ই মার্চ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশ বাদী হয়ে এডভোকেট সালাহ উদ্দিন রিগ্যানসহ বিএনপি-জামায়াতপন্থি ৩৫০ আইনজীবীর বিরুদ্ধে শাহবাগ থানা পুলিশ মামলা করে। এতে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলায় বলা হয়, মামলায় পুলিশের ওপর হামলা ও ভোটকেন্দ্রে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিরা এলোপাতাড়ি মারধর করে পুলিশের ব্যবহৃত সরকারি ৩টি হেলমেট ও ২টি ঢাল ভেঙে অনুমানিক ৩০ হাজার টাকার ক্ষতিসাধন করে। ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে বিভিন্ন সাইজের ৮টি বাঁশের লাঠি, বিভিন্ন সাইজের ৩টি কাঠের লাঠি, ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের ১০টি ইটের টুকরো, ৩টি ভাঙা হেলমেট ও ২টি ভাঙা প্লাস্টিকের ঢাল জব্দ করা হয়।