শেষের পাতা
কে দিলো এত মামলা?
গ্রামছাড়া বৃদ্ধ বাবা-মা বিদেশে শিমুল
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
২০ মার্চ ২০২৩, সোমবারবউ নিয়ে সংসারে অশান্তি। এর জেরে ৭ মামলার আসামি আরিফুল ইসলাম শিমুল (৩০)। কোথাকার কোন ঘটনায় মামলার আসামি করে দেয়া হয়েছে তাকে তা তিনি নিজেও জানেন না। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সোহাতা গ্রামের এই যুবক মামলা থেকে বাঁচতে শেষ পর্যন্ত পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। তার বৃদ্ধ মা-বাবাও এক বছর ধরে গ্রামছাড়া। গত বছরের ২২শে ফেব্রুয়ারি আরিফুল ইসলাম শিমুল পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে একটি অভিযোগ দেন। যাতে শিমুল জানান, ২০০৫ সালে সৌদি যান। সেখান থেকে দেশে ফিরে ২০১৪ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন জেলা শহরের ভাদুঘর মাজার গেট এলাকার রুকু মিয়ার মেয়ে আইরিন আক্তারকে। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। এই অবস্থায় ২০১৯ সালের ১০ই আগস্ট সৌদি থেকে দেশে চলে আসেন। ওই বছরের ১২ই সেপ্টেম্বর কাউকে কিছু না জানিয়ে ৪ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ২ লাখ টাকা নিয়ে ঘর ছেড়ে যান স্ত্রী আইরিন। এক মাস পর ১৩ই অক্টোবর স্ত্রীকে তালাক দেন তিনি। এরপরই মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয় আইরিনের ভাই পুলিশের সোর্স আলমগীর ও চাচা দুলাল মেম্বার। ২০২১ সালের ১৪ই জুন সিয়াম নামে আইরিনের এক ভাগ্নে পুলিশে ধরিয়ে দেয় তাকে। জেলে যাওয়ার পর শুনতে পারেন তার বিরুদ্ধে আরও ৫টি মামলা হয়েছে।
শিমুল জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং যৌতুক আইনে মামলা করা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মোট ৭টি মামলা দেয়া হয়। এসব মামলায় সাড়ে ৭ মাস জেল খাটেন। ২০২১ সালের ২৮শে মার্চ হেফাজতের ডাকা হরতাল চলাকালে জেলা সদরে পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় আসামি করা হয় তাকে। এ ছাড়া সরাইলের একটি ডাকাতির মামলাতেও আসামি করা হয়। একের পর এক মামলায় জেরবার হতে শুরু করে তার ও পরিবারের জীবন। এ থেকে বাঁচতে গত ১লা নভেম্বর আবারো বিদেশ পাড়ি দেন শিমুল। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় শিমুল ছাড়াও তার বাবা আবুল হাসেম (৬০), মা হুসনেহার (৫৫), বোন শিউলী বেগম (৪০) ও তানিয়া বেগম (২২) এবং চাচা কালন মিয়াকে (৪৫) আসামি করা হয়। এরমধ্যে শিমুলের বাবা আবুল হাশেম ও চাচা কালন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায় পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে যৌতুক আইনেও মামলা দেয়া হয়। দু’টি মামলাতেই পরিবারের সদস্যরা জামিনে রয়েছে বলে জানান হুসনেহার বেগম। তারপরও বাড়িতে থাকার সাহস পান না।
প্রতিনিয়ত মদ, ফেন্সিডিল দিয়ে মামলা দেয়ার হুমকি দিচ্ছে মেয়ের ভাই আলমগীর। সে কারণে গত মে মাস থেকে গ্রাম ছেড়ে মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। শিমুল ও তার পরিবারকে এভাবে হেনস্থা করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ সোহাতা গ্রামের মানুষ। গ্রামের ১৬১ জন বাসিন্দা পুলিশ সুপারের কাছে একটি আবেদনও দিয়েছেন। যাতে এই পরিবারটিকে ষড়যন্ত্রমূলক একের পর এক মামলা দেয়া থেকে নিষ্কৃতির দাবি জানানো হয়। ২০১৯ সালে বিদেশ থেকে ফিরে স্থানীয় বাজারে ছোট্ট একটি স্যানিটারি দোকান খুলেন শিমুল। কিন্তু মামলা আর পুলিশের তাড়ায় সে দোকানে বসা হয়নি তার। ভেস্তে যায় দেশে থেকে কাজকর্ম করার ইচ্ছে। সোহাতা বাজারের ব্যবসায়ী মাসুম রেজা বলেন, সে বিয়ে করেছে ভাদুঘরে। বউকে ডিভোর্স দেয়ার পর থেকে একের পর এক উদ্ভট মামলা হতে থাকে তার বিরুদ্ধে। হেফাজতের মামলা, ডাকাতির মামলা। একের পর এক মামলা থেকে বাঁচতে পরিবার নিয়ে ঢাকা চলে যেতে হয় তাকে। এরপর বিদেশে। আরেকজন ব্যবসায়ী রতন জানান, শিমুল অনেক ভালো। তার চলাফেরাও অনেক ভালো। পারিবারিক সমস্যার কারণেই তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। জাহাঙ্গীর নামে এক গ্রামবাসী বলেন, মনে করেন শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে ঝামেলা। কিন্তু এ নিয়ে তার সঙ্গে অতিরিক্ত করা হয়েছে। রামরাইল ইউপি’র ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কাজী মিজানুর রহমান জানান, শিমুল নিরপরাধ। যেসব অভিযোগে মামলা হয়েছে এর কোনো কিছুই সে জানে না। সদর থানার ওসি এমরানুল ইসলাম জানান, ঘটনার বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন। এ বিষয়ে তার বিস্তারিত জানা নেই।