শেষের পাতা
স্বামীর নির্যাতনে বিচারপতির ভাতিজির মৃত্যু
স্টাফ রিপোর্টার
১৯ মার্চ ২০২৩, রবিবার
ফাতেমা নাসরিন। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত ৮ই মার্চ যৌতুকের টাকার দাবিতে স্বামী সাখাওয়াত ফাতেমাকে চাপ দেন। এতে প্রতিবাদ করলে সাখাওয়াত ধারালো বটি ও মশলা বাঁটার কাঠের বাটলা দিয়ে ফাতেমার মাথা থেতলিয়ে দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ফাতেমাকে উদ্ধার করে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ই মার্চ রাতে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। ফাতেমা নাসরিন (৪৫) সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের ভাতিজি ও চিকিৎসক নুরুল আলমের মেয়ে। জানা গেছে, ফাতেমা নাসরিন ২০০৪ সালে সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর থেকেই নানা কারণে স্বামীর শারীরিক নির্যাচন সহ্য করতে হয়।
হাসপাতালে ফাতেমার মৃতদেহ দেখতে যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী এডভোকেট শাহনাজ বাবলী। পরে শাহনাজ বাবলী বলেন, ফাতেমা ভাতিজি হলেও আমরা তাকে মেয়ে হিসেবে জানতাম। মেয়েটা অনেক গুণবতী ছিল। ১৯ বছরের সংসারে মায়ার কারণে শত অত্যাচার সহ্য করেও নীরব ছিল। আমাদের কাছে কখনও স্বামীর অত্যাচারের কথা মুখ ফুটে বলতো না। নির্মম অত্যাচারে আমার মেয়েটা শেষ পর্যন্ত চলেই গেল। এখন তো ফিরে পাবো না। তিনি বলেন, আমরা আমাদের মেয়ে হত্যার ন্যায় বিচার চাই। এটাই আমাদের চাওয়া। আর কিছু চাওয়া নেই আমাদের। ফাতেমা হত্যার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে আমরা লড়ে যাবো।
হাসপাতালে বিচারপতি নজরুল ইসলামের সঙ্গে যান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। তিনি মানবজমিনকে বলেন, বেশকয়েক বছর ধরেই যৌতুকের দাবিতে মেয়েটিকে নির্যাতন করে আসছিলেন। পারিবারিকভাবে সমঝোতার চেষ্টা করেও কাজ হয়নি। স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের দু’টি মামলা রয়েছে। নির্যাতনের পরে একটি মামলায় গত ৩ দিন আগে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন।
হত্যা ঘটনায় ভিকটিমের বড় বোন আরজিনা বেগম (৫২) বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় মূল অভিযুক্ত করা হয় ভিকটিমের স্বামী মির্জা সাখাওয়াত হোসেনকে (৪৯)।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ১৭ তারিখ রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফাতেমা মারা গেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে স্বামীর নির্যাতনে ফাতেমার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে। ফাতেমার স্বামীকে আমরা ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছি। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিয়ের পর থেকে সাখাওয়াত বিভিন্ন সময় ফাতেমার কাছে যৌতুক দাবি করে আসছিল। সন্তান ও সংসারের কথা চিন্তা করে এসব অত্যাচার মুখবন্ধ করে সহ্য করে আসছিলেন ফাতেমা। কিন্তু দিন দিন সাখাওয়াতের নির্যাতন বেড়ে যাওয়া ফাতেমা আর সহ্য না করতে পেরে জানুয়ারি মাসে পঞ্চগড় সদর থানায় নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় সাখাওয়াত গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। পরে তিনি জামিনে বের হয়ে আবারও যৌতুকের টাকার জন্য ফাতেমাকে চাপ দিতে থাকেন। সর্বশেষ গত ৮ই মার্চ যৌতুকের টাকার দাবিতে সাখাওয়াত তার মোহাম্মদপুরের বাসায় ফাতেমাকে চাপ দিতে থাকে। এতে প্রতিবাদ করলে সাখাওয়াত ধারালো বটি ও মশলা বাঁটার কাঠের বাটলা দিয়ে ফাতেমার মাথা থেতলিয়ে দেয়। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে। সর্বশেষ যখন সাখাওয়াত তার স্ত্রীকে দা দিয়ে জবাই করতে উদ্যত হয় তখন তাদের সন্তান এসে বাধা দেয়। পরে ফাতেমাকে দ্রুত উদ্ধার করে আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মন্তব্য করুন
শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]