ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মত-মতান্তর

আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে

কাজী আশরাফুল আজিম

(১ বছর আগে) ১০ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার, ২:১১ অপরাহ্ন

mzamin

‘উচ্ছ্বাসে ভাসি স্মৃতির ভেলায়’ বাণীকে সামনে রেখে ১১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য আমাদের প্রাণের আঙ্গিনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সরকার ও রাজনীতি’ বিভাগের তৃতীয় পুনর্মিলনীর মহানন্দ ক্ষণ গণনায় মনের আকাশে কেবলই স্মৃতির রঙধনু মেঘ ভাসে, পরিযায়ী পাখিদের মতোন উড়ে বেড়ায়, হারানো সুর বাজে মনের মোহন মন্দিরে। ‘কে যেন আমারে বারেবারে চায়’ বলেই বুঝি ‘নীল আকাশের অসীম ছেয়ে’ ছড়িয়ে গিয়ে জড়িয়ে থাকি স্মৃতিমুখর বিন্দু  থেকে বৃত্ত ছাড়িয়ে। ৪৫ বছর আগে ১৯৭৮ সালের ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করা বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিমুখর এই অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে থাকছে নানাবিধ আয়োজন। দেশবরেণ্য শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনসহ শিক্ষকবৃন্দ-গুণীজনদের সম্মাননা প্রদান, বিভাগটির শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের গানের অনন্য আয়োজনের সাথে থাকছে মনকে প্রাণিত করার সতীর্থদের একান্ত আড্ডার ‘উদাসী হাওয়ার’ অলস সময়ও। মহামিলনমেলা উপলক্ষে বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মোহন রচিত মনকাড়া স্লোগানটি ছাড়াও প্রবলভাবে আবেগ জাগানিয়া থিম সং ‘স্মৃতি-মুখরতা’ বাজবে ক্ষণে ক্ষণে শব্দযন্ত্রে ও গোপনে সবার মনে,স্মৃতিচিত্র নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে তারই সম্পাদনায় স্মরণিকা ‘স্মৃতিমুখ’। উল্লেখ্য,‘ছড়িয়ে গিয়ে জড়িয়ে থাকি, প্রীতিতে স্মৃতি অটুট রাখি’ এ শ্লোগানে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় পুনর্মিলনী। তারই ধারাবাহিকতায় এগিয়ে চলছে সমুখপানে আনন্দ আয়োজনের পাশাপাশি দায়িত্ব পালনের একান্ত আন্তরিকতা।


পুনর্মিলনীর আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে আলোকিত হয় মন ঘর,জেগে উঠে হারানো ভাবসম্পদগুলো, জানান দেয় ‘অ্যালামনাই’ শব্দঘরকে নবজাগরণ ঢেউয়ে ভাসতে। অ্যালামনাইয়ের বাংলা প্রতিশব্দ হলো প্রাক্তন। প্রাচীন রোমান আইনে প্রথম খ্রীস্টপূর্ব ৩২০০ অব্দে ‘ধষঁসহঁং’ শব্দটি প্রাতিষ্ঠানিক শব্দ হিসেবে অর্ন্তভুক্তহয়।

বিজ্ঞাপন
তখন গুরুগৃহে অবস্থান করে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ‘অ্যালামনাই’ বলা হতো। সেকালে শব্দটি কেবল এই অর্থ প্রকাশে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে ‘ধষঁসহর(অ্যালামনাই)’ শব্দটি ‘প্রাক্তনশিক্ষার্থী’ অর্থ প্রকাশে ব্যবহৃতহয়। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি, যারা কোন স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে বের হয়েছেন তাদেরকে অ্যালামনাই বলা হয়। আজ যে প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছি সেখানে বিগত বছরগুলোতে যারা লেখাপড়া করেছে অর্থাৎ প্রাক্তনদেরই অ্যালামনাই বলা হয়। বর্তমানের শিক্ষার্থী কয়েক বছর পরে সেই প্রতিষ্ঠানের অ্যালামনাই বা প্রাক্তনী হয়ে যাবেন। কালস্রোতে স্বাভাবিকভাবেই এই অ্যালামনাইদের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে যায় এক সময়। দেশ-বিদেশের সর্বত্রই তারা ছড়িয়ে পড়েন। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে যে যার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যান এবং নিজের অর্জিত জ্ঞান সমাজ বিনির্মাণে ও দেশের উন্নতি সাধনে ব্যবহার করেন। শুধু দেশে নয় আšর্জাতিকক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন। প্রত্যেকে তাদের অর্জিত জ্ঞান সমাজের কল্যাণে ব্যয় করেন এবং ব্যক্তিগত সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে নিজনিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুখ্যাতিও বাড়িয়ে তোলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে ওঠার শিক্ষা চেতনার মূলে রয়েছে মুক্ত ও মানবিক চিন্তাচর্চা এবং নিবিড় গবেষণা। ‘সরকার ও রাজনীতি’ বিষয়টি পাঠ কালে আমরা জেনেছি ‘রাজনীতি’ হলো সর্বোত্তম মানবকল্যাণ নিশ্চিতের শিল্পকলা। রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের উন্নয়ন প্রয়াসে মুক্তচিন্তার সমাজ গড়তে সমাজ গবেষণার কোন বিকল্প নাই বলেই গঠনমূলক যৌক্তিক সমালোচনাও জরুরি। সুদক্ষভাবে সরকার পরিচালনায় রাজনীতির অগ্রণী পদক্ষেপের ক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদানে, যুক্তিবাদী কল্যাণকর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উপস্থাপনে সবচেয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে ‘সরকার ও রাজনীতি’র মতো বিষয়ে গভীর গবেষণা-পাঠাভ্যাসের গুরুত্ব অপরিসীম। এভাবেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে উঠবে প্রকৃত ও মৌলিক গবেষণার প্রকৃত অধিক্ষেত্র। পরিবার, সমাজ, সরকার সর্বোপরি রাষ্ট্রকে দেখাবে প্রয়োজনীয় পথরেখা। কেবলমাত্র নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতাতেই সীমাবদ্ধ না থেকে বৃহত্তর কল্যাণবোধের গবেষণার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, বিভাগগুলো হয়ে উঠুক ভরকেন্দ্র। বিভাগের বিন্দুকে কেন্দ্র করে মানবিক ও শান্তিকামী বিশ্বের বৃত্ত সুখানুসন্ধানে সচল থাকবে।


‘বিশ্বময়ীর বিশ্ব মায়ের আঁচল পাতা’ ভূবনে অ্যালামনাইদের সক্রিয়তা, সেতুবন্ধনী উদ্যোগ সর্বত্রই বহুল আলোচিত। যেহেতু অ্যালামনাইদের দেশে ও বিদেশে অবাধবিচরণ সেহেতু বর্তমানরা তাদের দ্বারা বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতা লাভ করতে পারে এবং ‘দেবো আর নেবো /মিলাবো-মিলিবে’ প্রীতিচক্রে বিশ্ববিদ্যালয়ও উন্নতি সাধন করতে পারে। কারণ দল-মত-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে স্বদেশ প্রেমে জাগ্রত হয়ে যেকোন সুনাগরিক আপন দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়েই অধিকার প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি করে। সেই মানবিক চেতনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও কল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়ে থাকে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তঃসংযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক, সহমর্মিতা ও সহযোগিতার মনোভাব সৃষ্টিকরে। যেকোন প্রয়োজনে কিংবা উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে সবার আগে এগিয়ে আসে প্রাক্তনীরাই। কেবলমাত্র নিজেদের স্বার্থগত বিষয়েই সীমাবদ্ধ না থেকে যেকোন জাতীয় দুর্যোগ এবংদেশ ও সমাজের প্রয়োজনে কাজ করার জন্য জনকল্যাণমূলক কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করা সংগঠনের নাম অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন যারা আরো বহুমাত্রিক কার্যক্রম বা¯বায়নের লক্ষ্যে অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে।


বাংলার চিরায়ত বাউল সাধনা দর্শন ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ অন্তরে ধারণ করা বাঙালির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সোনার বাংলা’ গড়তে ‘সোনার মানুষ’ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন, আর তাঁরই সুযোগ্য সন্তান, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী হয়ে উঠেছেন প্রবলভাবে মানবিক রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দক্ষতায় জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের শক্তিশালী ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করে। সকলকে সাথে নিয়ে উন্নয়নের সাফল্য সৃষ্টির অনন্য উদাহরণ তাঁর কাছ থেকে প্রতিনিয়ত প্রাণিত হই, শক্তি খুঁজে পাই সম্মিলিত প্রয়াসে আত্মনিবেদনের। এই সামষ্টিক চেতনার মানবকল্যাণের যে বীজ রোপিত হয় আমাদের ধমণীতে, তারই সম্প্রসারণে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনগুলো হয়ে ওঠে একটি উল্লেখযোগ্য সংগঠন। আর তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে আলাপচারিতায় যথার্থই বলেছেন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে নিজস্ব তহবিল সংগ্রহ করতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন,পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিটি শিক্ষার্থীকে দেশের উন্নয়নে সময়ের উপযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আরও দায়িত্বশীল ও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সোনার ছেলে-মেয়ে হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করতে হবে যাতে তারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে দূরে থাকে।


প্রিয় সরকার ও রাজনীতি বিভাগের তৃতীয় পুনর্মিলনীর মিলনমেলার আনন্দবেলায় স্মৃতির উচ্ছ্বাসে ভেসে রবিঠাকুরের চরণ স্মরণ করে বলতে চাই,‘ওগো চঞ্চল’ ‘কুসুমে কুসুমে চরণ চিহ্ন দিয়ে যাও’। আর তাই যেন ‘তব চরণ রেখা’ ধরে ‘নিজেকে জানার’ আত্মানুসন্ধানে খুঁজে ফিরি অন্তরালের আমার আমিকে। ‘হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে’র ভাব-অনুভবে দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যাপীঠের সবুজ ক্যাম্পাস ‘পিছু ফিরে ডাকে, ভোরের আলো পাতার ফাঁকে ফাঁকে’। আসুন অধিকার প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বশীল আচরণের সৃষ্টিশীল সংগঠন হিসেবে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনগুলোর ভূমিকাকে আরো সক্রিয় করে দেশপ্রেমের প্রমাণ দেই, আরেকটু বেশি সযতনে সাজাই জননী-জন্মভূমিকে।

লেখক: আহ্বায়ক, তৃতীয় পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটি-২০২৩, সরকার ও রাজনীতি বিভিাগ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং পুলিশ সুপার, নরসিংদী।

 

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

   

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবদলই সরকার সমর্থিত / ভোটের মাঠে নেই সরকারি দলের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো বিরোধীদল

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status