ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

উত্তপ্ত পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ সভাপতিসহ গ্রেফতার ১০

ফেনী প্রতিনিধি

(১ বছর আগে) ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:২২ পূর্বাহ্ন

mzamin

ফেনীর পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকের বিরোধ প্রকাশে রূপ নিয়েছে। বিগত সাত দিনে একে অপরকে হত্যার হুমকি, পাল্টাপাল্টি জিডি, মামলা, হামলা, গ্রেফতার, জামিনে মুক্তির পর ফুল দিয়ে বরণ কি হয়নি এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ কে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে জেলা আওয়ামী লীগ ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এ কে শহীদ খন্দকার।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রায় এক বছর ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেলের বিরোধ চলে আসছে। এর আগে দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠক ও কর্মকাণ্ডে সেটি প্রকাশ পেলেও গত ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার একটি জানাজায় অংশ নিতে গিয়ে দুজনের বাকবিতণ্ডায় সেটি প্রকাশ্যে আসে। ওই দিন একে অপরের বিরুদ্ধে গালিগালাজ ও হত্যার হুমকির অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে ২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার পৃথকভাবে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দুজন। দলের সিনিয়র দুই নেতার এমন কাণ্ডে সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিরোধ। দুজনের বিরোধে এখন দলের নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দলীয় কর্মসূচি বদলে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মাঠে সক্রিয় তাঁরা। অভ্যন্তরীণ বিরোধ এরই মধ্যে গড়িয়েছে সংঘাতেও।

অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে গত ২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অনাদি রঞ্জন সাহা (৬৫) কে।

বিজ্ঞাপন
যিনি উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতির ঘনিষ্ঠজন। হামলার ঘটনায় ওই রাতেই ১৭ জনের নামোল্লেখ করে পরশুরাম মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন আহত অনাদি রঞ্জন সাহা।  পুলিশ ওই মামলায় ৮ জনকে গ্রেফতার করে ৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার আদালতে প্রেরণ করেন।
হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আটজনের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ দলের নেতা-কর্মী। যাঁদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক একরামুল হক চৌধুরী ও পৌরসভার একটি ওয়ার্ড শাখার সভাপতি মো. ইব্রাহিম রয়েছেন। মামলার বেশিরভাগ আসামী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সমর্থিত।
পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আহত অনাদি রঞ্জন সাহা ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বলেন, মুঠোফোনে মেয়র দলীয় কার্যালয়ে আমাকে ডেকেছেন। কার্যালয়ের সামনে যেতেই আনোয়ার নামের একজনের নেতৃত্বে আমার ওপর হামলা করা হয়। হামলাকারীরা সবাই মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এদিকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাতে নিজের উপর হামলা হয়েছে মর্মে পাল্টা মামলা দায়ের করেছেস উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল। মামলায় উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ইয়াছিন শরীফ মজুমদারকে (উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার এর জামাতা) প্রধান আসামি করে ১৩ জনের নাম এবং আরও ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।  

ওই মামলায় ৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকালে আদালতে জামিন আবেদন করেন মামলার প্রধান আসামিসহ ১২ জন। শুনানি শেষে আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুজ্জামান ১১ জনের জামিন মঞ্জুর করলেও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইয়াছিন শরীফ মজুমদারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন আসামির আইনজীবী জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম শাহজাহান সাজু। 

জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, 'সভাপতি কামাল উদ্দিন মজুমদার সরকারি জায়গা দখল করে দোকান ও গুদাম নির্মাণ করেছেন। পৌরসভার ড্রেন করার সময় তাঁর দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হবে জেনে তিনি ক্ষিপ্ত হয়েছেন।'

তিনি আরো বলেন, আমার দলের কোনো নেতা কর্মী অনাদি রঞ্জন সাহার উপর হামলার জড়িত নই। বরং উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমার নেতাকর্মীদের উপর মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। পরে পুলিশ দিয়ে তাদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।'

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার বলেন, 'তাকে নানাভাবে বিভিন্ন সময় হেনস্তার চেষ্টা করেছেন নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তাঁর ওপর হামলা হলে, তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে এর জন্য নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী দায়ী থাকবেন।'

সরকারি জায়গায় স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নেওয়া কিছু জমি ও পৈতৃক জমিতে স্থাপনা করেছি। নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী একনিষ্ঠ নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে হাইব্রিডদের প্রাধান্য দেন, নেতা-কর্মীদের গায়ে হাত তোলেন- এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করায় তিনি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।’

এদিকে  অনাদি রঞ্জন সাহার দায়ের করা মামলার আসামি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সাজেল চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচর একরামুল হক চৌধুরী পিয়াস সোমবার সকালে আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। এ সময় তাকে ফুলের মালা পরিয়ে জেল গেইটে বরণ করে নেন পৌর মেয়রের অনুসারীরা।

অপরদিকে পৌর মেয়রের দায়ের করা মামলায় ১১ আসামি সোমবার সকালে আদালত থেকে জামিন পেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার তাদের ফুলের মালা পরিয়ে দিয়ে বরণ করে নেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এ কে শহীদুল্লাহ খোন্দকার বলেন, 'উপজেলা শাখার এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত দলের জেলা শাখার নেতারা। ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।তদন্তের পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে পরশুরাম মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, পুলিশ দুটি মামলার তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status